E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

মন্ত্রীর একগুয়েমিতেই বৈদেশিক শ্রমবাজারে বাংলাদেশের সলিল সমাধি

২০১৪ জুন ১৬ ১৬:৩৫:৪৫
মন্ত্রীর একগুয়েমিতেই বৈদেশিক শ্রমবাজারে বাংলাদেশের সলিল সমাধি

মাঈনুল ইসলাম নাসিম : গভর্নমেন্ট টু গভর্নমেন্ট (জি-টু-জি) ফর্মূলা অবশেষে ‘আত্মঘাতী’ হয়েছে বাংলাদেশ সরকারের বৈদেশিক কর্মসংস্থান পলিসিতে। ধ্বংসাত্মক এই নীতিমালার বলি হয়ে সৌদিতে আমাদের শ্রমবাজারের ‘সলিল সমাধি’ ঘটেছে আরব সাগরে। মাহাথির মোহাম্মদের আধুনিক মালয়েশিয়ার পথে সাগরের উত্তাল জলরাশি আজ রক্তে রঞ্জিত হবার জন্যও সর্বাগ্রে দায়ী ‘জি-টু-জি’ পলিসি।

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় কর্তৃক বিদেশে কর্মের নতুন নতুন বাজার সৃষ্টিতে বাস্তবসম্মত ও যৌক্তিক সব সময়পোযোগি পদক্ষেপ নেয়াই ছিল যেখানে মূখ্য কাজ, কিন্তু তা না করে প্রভাবশালী সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীর চরম একগুয়েমি ও মন্ত্রণালয় কর্তৃক বাস্তবতা বিবর্জিত নীতিমালার খেসারতে ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাংলাদেশ। ‘জি-টু-জি’ পলিসিতে আজ সৌদি আরব ও মালয়েশিয়ায় ধ্বংস হয়ে গেছে বাংলাদেশের বিশাল শ্রমবাজার, বন্ধ হয়েছে সব দুয়ার।

অভিবাসন ব্যয় কমানোর নামে রিক্রুটিং এজেন্সির রুটি-রুজি বন্ধ করতে গিয়ে সরকার কর্তৃক চাপিয়ে দেয়া ‘জি-টু-জি’ ফর্মূলা যে শতভাগ ভুল ছিল, তা দেশে-বিদেশে আজ দিনের আলোর মতোই পরিষ্কার হয়ে গেছে। এই নীতিমালা প্রবর্তনের আগে রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে যখন উভয় দেশে বাংলাদেশি কর্মীদের যাবার সুযোগ ছিলো, তখন বাংলাদেশি এজেন্সিগুলোর পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর নিয়োগদাতা কোম্পানিগুলোও অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হতে পারতো। সব কিছুই চলে আসছিলো একটি সহনীয় সিস্টেমের মধ্য দিয়ে।

অসাধু দালাল-সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে সরকার চরমভাবে ব্যর্থ হলেও সফলতা দেখায় বাস্তবতাবর্জিত অযৌক্তিক গভর্নমেন্ট টু গভর্নমেন্ট (জি-টু-জি) পলিসি চাপিয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে। রিক্রুটিং এজেন্সি গোল্লায় যাবে, সরকারের সাথে সরকারের চুক্তি হবে কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে, মূলতঃ এরই নাম ‘জি-টু-জি’। মজার ব্যাপার হচ্ছে, খুব দ্রুতই হিতে বিপরীত হয় সরকারের অতি মহতী (!) এই নীতিমালা। জি-টু-জি পলিসির কারণে বাড়তি লাভবান হওয়ার সুযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় উক্ত দেশগুলোর নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো চরমভাবে নাখোশ হয় বাংলাদেশ সরকারের ওপর, যা দিনকে দিন কমেনি বরং বেড়েছে।

বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থবিরোধী ‘জি-টু-জি’ ফর্মূলা বাতিল যদিও আজ অতীব অত্যাবশ্যক, কিন্তু দায়িত্বরত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন এ ব্যাপারে মিনিমাম ছাড় দিতে রাজি নন, কারো মতামত-পরামর্শের তোয়াক্কাও তিনি করেন না, এমনটি শোনা যায় সব মহল থেকেই। সরকারের বৈদেশিক কর্মসংস্থান নীতিমালার কলংক এই ‘জি-টু-জি’র বাধ্যবাধকতা রহিত করে সৌদি আরব ও মালয়েশিয়াতে শ্রমবাজারের তালাবদ্ধ দুয়ার খোলার পথ প্রশস্ত করতে সরকারের একাধিক মন্ত্রী উদ্যোগী বিগত দিনে সাহস করেই শরণাপন্ন হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছেও। কিন্তু কিছুতেই কিছু হয়নি, বরফ গলেনি আজ অবধি। নির্ভরযোগ্য সূত্র নিশ্চিত করেছে, সব কিছুর নেপথ্যে কাজ করছে ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেনের চরম একগুয়েমি।

বিদেশে বাংলাদেশের শ্রমবাজার সম্প্রসারণের কথা সরকারের তরফ থেকে মুখে বলা হলেও আজ একমাত্র প্রধানমন্ত্রীই পারেন দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে সময়পোযোগি পদক্ষেপ নিতে, যেটা তিনি মাঝেমেধ্যে নিয়েও থাকেন। বৈদেশিক কর্মসংস্থান বিষয়ক মন্ত্রীকে প্রয়োজনে আরো গুরুত্বপূর্ণ কোন মন্ত্রণালয়ের গুরুদায়িত্ব দেয়া হলে সুনিশ্চিতভাবেই পুনরায় খুলে যাবে মালয়েশিয়া সহ মধ্যপ্রাচ্যে শ্রমবাজারের তালাবদ্ধ দুয়ার।

এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সৌদি আরব সফর করবেন এমন সংবাদ ক’দিন আগে পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হলেও সৌদি আরবস্থ উচ্চ পর্যায়ের একাধিক সূত্র এই প্রতিবেদককে নিশ্চিত করেছে, ‘জি-টু-জি’ বাতিল বা ‘জি-টু-জি’র পাশাপাশি রিক্রুটিং এজেন্সির আগেকার সিস্টেম পুনরায় চালু করা না হলে প্রধানমন্ত্রীর সৌদি সফর ফলপ্রসু হবার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। কঠিন এই সত্যের মুখোমুখি আজ আমরা সবাই।
(এএস/জুন ১৬, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

২৪ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test