E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

জাতিসংঘ মহাসচিব সঙ্গে বৈঠকে রাষ্ট্রপতি

সরকারের মেয়াদ শেষে পরবর্তী নির্বাচন নিয়ে সংলাপ হতে পারে

২০১৪ জুন ২১ ০৯:৪২:৩৭
সরকারের মেয়াদ শেষে পরবর্তী নির্বাচন নিয়ে সংলাপ হতে পারে

নিউইয়র্কথেকে, এনা : নিউইয়র্কে জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুনের সঙ্গে এক বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র সফররত বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ বলেছেন, বাংলাদেশে বর্তমানে কোনো রাজনৈতিক সঙ্কট নেই। তবে ভবিষ্যত রাজনীতির প্রয়োজনে সব দলের অংশগ্রহণে সংলাপের ব্যাপারে সরকারের কোনো কার্পণ্য নেই।

তবে সে সংলাপ অবশ্যই বর্তমান সরকারের মেয়াদ শেষে হতে হবে। আর মেয়াদ শেষ হলেই পরবর্তী নির্বাচনের প্রক্রিয়া নিয়ে যে কোন ব্যক্তি বা দলের সঙ্গে সংলাপ হতে পারে।

নিউইয়র্ক সময় গত ১৯ জুন দুপুরে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিসহ নানান বিষয়ে বান কি মুনের সঙ্গে রাষ্ট্রপতির আলোচনা হয়েছে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত ড. এ কে আব্দুল মোমেন।

বৈঠকে সংলাপের বিষয়ে জাতিসংঘ মহাসচিবের আগ্রহের ব্যাপারে বর্তমান সরকারের অবস্থান পরিষ্কার করে রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ বলেন, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা জোরদার করতে যে কোন বিষয়ের নিষ্পত্তির জন্য সংলাপের বিকল্প নেই। তবে কোনো রাজনৈতিক দল যদি নির্বাচন বর্জন করে তখন সংলাপ হয় না।

এদিকে জাতিসংঘ মহাসচিবের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের সেনা সদস্যদের অবদানের প্রশংসা করেন মহাসচিব বান কি মুন। তিনি বলেন, গোলযোগপূর্ণ অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ যে অবদান রেখে চলেছে, এজন্য আমরা বাংলাদেশের কাছে গভীরভাবে ঋণী।

তিনি শান্তিরক্ষা মিশনে ঊর্ধ্বতন পর্যায়ে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ বাড়ানোর অনুরোধ জানান। বৈঠকের আগে জাতিসংঘ সদর দপ্তর ঘুরে দেখেন রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ।

এদিকে বিকালে জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন পরিদর্শনে যান রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ। তিনি মিশনের বিভিন্ন স্মৃতিচিহ্ন অবলোকন করেন। পরে তিনি মিশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এসময় রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ বলেন, আপনারা প্রত্যেকে দেশের এক একজন রাষ্ট্রদূত। আপনাদের কথা, চালচলন, আচার-আচরণের মাধ্যমে আপনারা দেশকে এই বিদেশের মাটিতে উজ্জলভাবে তুলে ধরবেন। এখানে আপনারাই বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করছেন। দেশের উন্নয়নে অংশগ্রহন করে আপনারা অংশীদারিত্ব হবেন এটাই আমার একান্ত আহবান।

বৈঠকের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন স্থায়ী প্রতিনিধি ড.এ কে আব্দুল মোমেন। তিনি মিশনের বিভিন্ন কর্মকা- তুলে ধরে বলেন, বাংলাদেশ আজ জাতিসংঘের অনেকগুলো কমিটির নেতৃত্ব দিচ্ছে এবং সকল সদস্য দেশের সঙ্গে মধুর সম্পর্ক বজায় রেখে সক্রিয়ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, আজ আমরা জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনে প্রথমবারের মত একজন রাষ্ট্রপতিকে পেয়েছি। যা ইতিহাসের একটি অংশ হয়ে থাকবে।

সন্ধ্যায় রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ নিউইয়র্কের উডসাইডে প্রবাসী কিশোরগঞ্জবাসীদের এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেন। সংবর্ধনার জবাবে রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ গণসংসদীয় গণতন্ত্রে রাষ্ট্রপতি হিসাবে তার সীমাবদ্ধতার কথা তুলে ধরেন। পাশাপাশি তিনি বাংলাদেশের রাজনীতির চর্চা অনুসরণ না করে প্রবাসে সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতি বজায় রাখার জন্য প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রতি আহ্বান জানান।

অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি বলেন, আমি জীবন সায়াহ্নে এসে দাঁড়িয়েছি। আমার আর কোথাও যাওয়ার রাস্তা নেই। সব পথ-ঘাট বন্ধ গেছে। রাষ্ট্রপতি হওয়ায় এখানেই আমার শেষ। এখন শুধু একটাই রাস্তা আছে তা শুধু কবরে যাওয়ার। আমি রাষ্ট্রপতি হলেও কিশোরগঞ্জের মানুষ আমার কাছে অনেক কিছু আশা করে। কিন্তু সংসদীয় গণতন্ত্রে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা অনেক সীমিত। অনেক সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। এই সীমাবদ্ধতার ভেতরেও আমি কিশোরগঞ্জের উন্নয়নে আমার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

তিনি নিজ জেলা কিশোরগঞ্জের উন্নয়নের নানান চিত্র তুলে ধরে বলেন, আমি রাষ্ট্রপতি হওয়ায় দলমত নির্বিশেষে কিশোরগঞ্জের মানুষ খুব খুশী হয়েছে। তিনি বলেন, ডেপুটি স্পিকার হওয়ার আগে জেলার বাইরের মানুষ আমাকে চিনতো না। সংসদের অধিবেশন চালানোর মাধ্যমেই সারা বাংলাদেশের মানুষ আমাকে চিনেছে। শুধু চিনেছে তা নয়, তারা আমাকে স্বীকৃতিও দিয়েছে। কিশোরগঞ্জসহ সারা বাংলাদেশের মানুষ এটুকু বলে যে হামিদ সাহেব একজন ভাল মানুষ।

রাজনীতিতে সম্প্রীতি বজায় রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করে রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ বলেন, গত ৫৪ বছরের রাজনৈতিক জীবনে আমি কিশোরগঞ্জের অনেক আন্দোলন সংগ্রামে ভূমিকা রেখেছি। কিন্তু কোথাও সহিংস ও সন্ত্রাসের রাজনীতি ছিল না। একজন আরেকজন ভিন্ন রাজনীতি করলেও পারিবারিকভাবে সবার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তিনি সারা দেশের রাজনীতির চিত্র বিপরীত উল্লেখ করে বলেন, এখন একজন একদল করলে আরেক দলের লোকজন ছেলেমেয়ের বিয়ে-সাদীতেও যান না। অথচ কিশোরগঞ্জে আমি আওয়ামী লীগের রাজনীতি করলেও অন্য দলের লোকেরা ছেলেমেয়ের বিয়ে-সাদীর জন্য আমার সঙ্গে পরামর্শ করেছেন।

এখনো কিশোরগঞ্জে সেই সম্পর্ক বিরাজমান। প্রবাসে থেকে একে অন্যের প্রতি সৌহার্দ্য ও সম্প্রীত বজায় রাখার জন্য তিনি প্রবাসীদের প্রতি আহবান জানান। রাষ্ট্রপতি হিসাবে যেন সঠিক ও সুন্দরভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারেন এজন্য সকলের কাছে দোয়া চান তিনি।

অনুষ্ঠানে গণতন্ত্র এবং মানুষের কল্যাণে অবদানের জন্য রাষ্ট্রপতি হামিদকে সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতির সহধর্মিনী রাশেদা খানম বক্তব্য দেন। বিপুলসংখ্যক প্রবাসী কিশোরগঞ্জবাসী ছাড়াও বাংলাদেশি কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আলহাজ্ব ফজলুল হক এবং পরিচালনা করেন সাহীনুর করিম খান।

(এ/জেএ/জুন ২১, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test