E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

প্যারিসের বাংলা মেলায় তুলকালাম

চক্রান্তকারীদের সাথে স্বাধীনতা বিরোধীদের যোগসাজশ !

২০১৪ জুন ২৫ ০৮:৪৪:৪৭
চক্রান্তকারীদের সাথে স্বাধীনতা বিরোধীদের যোগসাজশ !

মাঈনুল ইসলাম নাসিম : ফ্রান্সের রাজধানীতে ঐতিহ্যবাহী বাংলার মেলায় ঘটে যাওয়া অঘটন যতটা না অপ্রীতিকর, তার চাইতেও বেশি পূর্বপরিকল্পিত ও উদ্দেশ্যমূলক। অত্যন্ত নেক্কারজনকভাবে বাংলাদেশের ইমেজ ধ্বংসে আংশিক সফলও হয়েছে এ যাত্রায় চক্রান্তকারীরা। আদ্যোপান্ত অনুসন্ধানে কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেরিয়ে এসেছে অবশেষে। সবকিছুর নেপথ্যে কাজ করেছে বাংলাদেশের স্বার্থ বিরোধী একটি আন্তর্জাতিক চক্র, যারা নিরীহ বাংলাদেশিদের আবেগকে কাজে লাগিয়েছে সুকৌশলে সুনিপুনভাবে।

রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি পরবর্তি বিশ্ববাজারে ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারে বাংলাদেশকে যখন আজ অনেক কাঠখড় পোড়াতে হচ্ছে, একইসাথে যখন বিশ্ব টেক্সটাইল মার্কেটের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ ইভেন্ট প্যারিসে আসন্ন ‘টেক্সওয়ার্ল্ড’ ইন্টারন্যাশনাল ফেয়ারে বাংলাদেশি বিপুল সংখ্যক প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণের ব্যাপক তোড়জোড় চলছে, ঠিক তখনই ফ্রান্সের মাটিতে বাংলাদেশের ইমেজ ধ্বংসে উঠে পড়ে লেগেছে ঐ আন্তর্জাতিক চক্র।

ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নে আন্তর্জাতিক চক্র ফ্রান্সের মাটিতে কাজে লাগিয়েছে লন্ডন-প্যারিস ভিত্তিক বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিরোধী একটি গোষ্ঠীকে। উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিভিন্ন স্পর্শকাতর ইস্যুকে সামনে নিয়ে এসে চক্রান্তকারীরা দেশের ঐতিহ্যবাহী একটি জেলার কতিপয় লোকদের উস্কে দিয়ে জুতো-সেন্ডেল-বোতল ঢিলের মহোৎসব চালিয়েছে। বাংলার মেলায় অপ্রীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী ঐ গোষ্ঠী সক্ষম হয়েছে ‘এক ঢিলে দুই পাখি’ মারতে।

আন্তর্জাতিক চক্রান্তকারীদের ক্রিড়ানক হিসেবে কাজ করার পাশাপাশি স্বাধীনতা বিরোধী গোষ্ঠী আজ অলি আউলিয়ার পূন্যভূমি সিলেট অঞ্চলের প্রবাসীদেরও ইমেজ সংকটে ফেলে দিয়েছে প্যারিসের মাটিতে। হযরত শাহজালাল (রঃ) ও হযরত শাহ পরান (রঃ)-এর স্মৃতি বিজড়িত যে জেলার সুযোগ্য সন্তানরা কয়েক যুগ আগে গোড়াপত্তন করেছিলেন ইউরোপের আজকের বাংলাদেশ কমিউনিটির, সমগ্র বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রযাত্রার পেছনে যে জেলার সরাসরি সম্পৃক্ততা ঐতিহাসিকভাবে স্বীকৃত, ষড়যন্তকারীদের পাতা ফাঁদে পা দেবার পরিণতিতে ঠিক সেই সিলেটের চলমান উজ্জল ভাবমূর্তিকে কেন আজ প্রবাসে জলাঞ্জলি দিতে হবে ?

এটিএন চেয়ারম্যান বা ‘এক্স-ওয়াই-জেড’ যে কারো কাছ থেকেই বাংলাদেশের যে কোন অঞ্চলের লোকজন বিন্দুমাত্র আঘাতপ্রাপ্ত হবেন তা যেমন আমাদের কারোরই কাম্য নয়, পাশাপাশি এটাও বলার অপেক্ষা রাখে না, আদালতে প্রমাণিত হবার আগেই উদ্দেশ্যমূলক অভিযোগের ভিত্তিতে ‘এক্স-ওয়াই-জেড’ যে কাউকেই দোষি সাব্যস্ত করাও সমান শোভনীয় নয়। স্যোশাল মিডিয়াতে অতি উৎসাহী কেউ কেউ এমনও লিখেছেন, নিহত সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রূনী হত্যার বিচার নাকি শুরু হয়েছে প্যারিসে।

দেশবিরোধী চক্রান্তকারীদের ঢেলে দেওয়া আগুণে হাওয়া দিয়েছেন প্যারিসের সাংবাদিক নামধারী কতিপয় ব্যক্তিবিশেষ, যারা বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা ও নিউজ পোর্টালগুলোতে ‘বাংলার মেলা’র আয়োজকদের বিরুদ্ধে আদম ব্যবসার প্রমানবিহীন মিথ্যা অভিযোগ প্রচার করতেও কুন্ঠিত হয়নি।

উল্লেখ করা যেতে পারে, ফ্রান্সের ঐতিহ্যবাহী এই বাংলার মেলার মূল উদ্যোক্তা ও পৃষ্টপোষক কাজী এনায়েত উল্লাহ, যিনি একাধারে ফ্রান্স-বাংলাদেশ চেম্বার অব ইকোনমির প্রেসিডেন্ট এবং ইউরোপের ৩০ টি দেশের বাংলাদেশিদের সম্মিলিত সংগঠন অল ইউরোপিয়ান বাংলাদেশ এসোসিয়েশন (আয়েবা)’র সেক্রেটারি জেনারেল।

ফ্রান্স সরকার কর্তৃক স্বীকৃত ‘সুপার টেক্স পেমেন্ট’ করার কৃতিত্বের অধিকারী এই সফল ‘বিজনেস ম্যাগনেট’ প্যারিসে বসবাস করছেন ৩৬ বছর ধরে। ফ্রান্সের সীমানা পেরিয়ে ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে রয়েছে তাঁর রিয়েল এস্টেট, এয়ারলাইন্স ও রেস্টুরেন্ট ব্যবসা। শুধু বাংলার মেলা নয়, ফ্রান্সের বাংলাদেশ কমিউনিটির যে কোন আর্থ-সামাজিক কর্মকান্ডে অর্থনৈতিকভাবে বরাবরই প্রধান পৃষ্ঠপোষকের ভূমিকা পালন করেছেন তিনি বছরের পর বছর।

ব্যবসায়িক সাফল্যের পথ চলায় প্যারিসের কাজী এনায়েত উল্লাহর জীবদ্দশায় কখনো আদম ব্যবসার প্রয়োজন হয়নি এবং হবেও না, তা ফ্রান্সের সাধারণ জনগণ খুব কাছ থেকে যেমন ভালো করেই জানেন, সম্যক অবগত আছেন একাধারে বাংলাদেশ সরকার তথা প্রশাসনের সর্বোচ্চ স্তরের কর্তাব্যক্তিরাও। কাজী এনায়েতের প্রতি স্বাধীনতা বিরোধী চক্রের সাম্প্রতিককালের বিশেষ ক্ষোভ দানা বেঁধেছে ফ্রান্সে নির্মিতব্য বঙ্গবন্ধু ভাস্কর্য ও স্কয়ার নিয়ে।

সুদীর্ঘ ৩ যুগের প্রবাস জীবনে কখনো বাংলাদেশ ভিত্তিক রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পৃক্ত না থাকলেও জাতির জনকের প্রতি ব্যক্তিগত ভালোবাসা ও শ্রদ্ধাবোধের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়ে বিগত বেশ কয়েক বছর ফরাসী প্রশাসনের সাখে জোর লবিং চালিয়ে যাবার প্রেক্ষিতে এবং মূলতঃ তাঁর ব্যক্তিগত ও ঐকান্তিক প্রচেষ্টাতেই ‘পারে লূ মুনিয়াল’ পৌর প্রশাসন সম্মত হয় বঙ্গবন্ধুর নামে স্কয়ার ও ভাস্কর্য নির্মানে। সম্প্রতি ফরাসী কর্তৃপক্ষ কাজী এনায়েতের মাধ্যমেই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর জন্য আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণপত্র ঢাকায় প্রেরণ করে।

অরাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হয়ে তাঁর এই ‘অ্যাচিভমেন্ট’ সহ্য করতে পারেনি দূর প্রবাসে গাত্রদাহে জ্বলে ওঠা স্বাধীনতা বিরোধী গোষ্ঠী। রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি ইস্যুতে আন্তর্জাতিক চক্রান্তকারীরা আগে থেকেই যেখানে প্রস্তুত ছিলো প্যারিসের মাটিতে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বিনষ্ট করতে, তাদের সাথে সময় সুযোগ তখা স্থান কাল পাত্র মিলে যায় ফ্রান্সে বঙ্গবন্ধু ভাস্কর্য বিরোধী অপশক্তির। দুর্ভাগ্যজনকভাবে যা হবার তাই হলো, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক যোগসাজশে আইফেল টাওয়ারের দেশে খাটো হলো লাল-সবুজ পতাকা।

প্যারিসে রবিবারের ঢিল ছোড়াছুড়িতে বেশ ক’জন পাকিস্তানী নাগরিককেও সক্রিয় দেখেছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। আয়োজকদের তরফ থেকে চ্যালেঞ্জ করায় কেটে পড়েন তারা। ফ্রান্সের বাংলাদেশ কমিউনিটিতে চক্রান্তকারী স্বার্থান্বেষী মহল তথা দুষ্কৃতিকারী স্বাধীনতা বিরোধী গোষ্ঠীর ষড়যন্ত্রের ‘বলি’ হয়ে প্রবাসে বিনষ্ট হবে ঐতিহ্যবাহী সিলেট অঞ্চলের বিশাল জনগোষ্ঠীর দীর্ঘদিনের উজ্জ্বল ভাবমূর্তি, তা কোনভাবেই কাম্য নয় দেশপ্রেমিক জনতার।

(অ/জুন ১৫, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

২৫ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test