E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ডুবে যাওয়া জলযান শনাক্তের যন্ত্র আবিষ্কার করল ফারুক

২০১৪ অক্টোবর ২১ ১৮:৫৫:০২
ডুবে যাওয়া জলযান শনাক্তের যন্ত্র আবিষ্কার করল ফারুক

নিউজ ডেস্ক : চলতি বছরের আগস্টে পদ্মা নদীতে পিনাক-৬ লঞ্চটি ডুবে যাওয়ার পর তা আর শনাক্ত করা যায়নি। তিন শ’ যাত্রী নিয়ে ডুবে যাওয়া লঞ্চটির যাত্রীদের ৪৬টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়। কিন্তু বাকি অন্তত এক শ’ যাত্রীর ভগ্যে কী ঘটেছে- তা হয়ত অজানাই থেকে যাবে।

লঞ্চ শনাক্তকরণে ব্যর্থতার এই ঘটনা আহত করে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সটিউটের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোহাম্মদ ফারুক বিন হোসেনকে। তিনি তখনই সিদ্ধান্ত নেন নদী বা সমুদ্রে ডুবে যাওয়া লঞ্চ বা জাহাজ কিভাবে শনাক্ত করা যায়, তা নিয়ে গবেষণা করবেন। আর সেই ঘটনার মাত্র দেড় মাসেই তিনি সফল হয়েছেন। আবিষ্কার করেছেন নিমজ্জিত জলযান চিহ্নিত করা যন্ত্র বা প্রযুক্তি। প্রাথমিক পরীক্ষা সফল হয়েছে। এখন তিনি সরকারের অনুমতির অপেক্ষায় আছেন। অনুমতি পেলে বড় নদী বা সমুদ্রে এই যন্ত্র তিনি পরীক্ষা করে দেখতে চান।

যন্ত্রটির নাম দেয়া হয়েছে ‘লোকেশন ডিটেকটর’। উদ্ভাবক মোহাম্মদ ফারুক বিন হোসেন জানান, সহজলভ্য যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তি ব্যবহার করেই যন্ত্রটি তৈরি করা হয়েছে। এতে ব্যবহার করা হয়েছে মোবাইল ফোনের সিম, জিপিআরএস পদ্ধতি, ব্যাটারি এবং সোলার এনার্জি। তিনি জানান, যন্ত্রটির ভেতরে মোবাইল ফোনের সিম থাকবে এবং সেই সিমটি উদ্ধারকারী অথবা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের এক বা একাধিক সিমে যুক্ত থাকবে।

যন্ত্রটি লঞ্চ বা জাহাজের মাস্তুল বা উঁচু স্থানে বসান থাকবে। জলযান ডুবে গেলে সাথে সাথে যন্ত্রটির একটি অংশ ভেসে উঠবে। আর সেখান থেকে লঞ্চ ডুবে যাওয়ার বার্তা দেবে এসএমএস-এর মাধ্যমে। একই সাথে জলযানের সাথে থাকা মোবাইল ফোনের সিম অবস্থান জানাবে জিপিআরএস সিস্টেমে। সোলার সিস্টেম সংযুক্ত থাকায় যদি ব্যাটারি নষ্ট হয়ে যায় তাহলেও কোনো সমস্যা হবে না। এছাড়া যদি যন্ত্রটির ইলেকট্রনিক ডিভাইস কাজ নাও করে, তাতেও সমস্যা নেই। কারণ যন্ত্রের ভেসে থাকা অংশে আয়না বসানো আছে, যেখান থেকে দিনেরবেলায় আলো প্রতিফলিত হয়ে অবস্থান জানান দেবে। যন্ত্রটি জলযান ডুবে যাওয়ার পর অন্তত দুই সপ্তাহ কার্যকর থাকবে বলেও তিনি দাবি করেন।

ফারুক জানান, নদী ও সমুদ্রের পানি ঘোলা। তাই প্রচলিত আধুনিক পদ্ধতিতেও ডুবে যাওয়া জলযানের অবস্থান শনাক্ত করা যায় না। কিন্তু তার আবিষ্কৃত যন্ত্রে এই সমস্য নেই। তিনি বলেন, মালয়েশিয়ার বিমানে ব্ল্যাক বক্স ছিল, কিন্তু সমুদ্রে হারিয়ে যাওয়ায় তা আর শনাক্ত করা যায়নি। তার দাবি, তার যন্ত্র দিয়ে নদী বা গভীর সমুদ্র- যেখানেই হোক না কেন, কোনো জলযান বা অন্যকিছু ডুবে গেলে তার অবস্থান শনাক্ত করা সম্ভব। শর্ত শুধু তার যন্ত্র আগে থেকে স্থাপন করা থাকতে হবে।

তিনি জানান, এর মধ্যেই যন্ত্রটি গভীর পুকুর এবং ছোট নদীতে পরীক্ষা করে সফল হয়েছেন। এখন বড় নদী এবং সমুদ্রে পরীক্ষা করতে চান। আর এ জন্য সমুদ্র পরিবহন দফতরে আবেদনও করেছেন তিনি।

মোহাম্মদ ফারুক বিন হোসেনের এটিই প্রথম আবিষ্কার নয়। তিনি এর আগে মাত্র এক টাকায় ফরমালিন পরীক্ষা করার পদ্ধতি আবিষ্কার করেন, যা বাংলাদেশে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। এই পরীক্ষা পদ্ধতিতে সালফিউরিক অ্যাসিড বা মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর কোনো রাসায়নিক ব্যবহার করা হয় না। ফলে যে কেউ বাজার করতে গিয়ে মাছ, ফল বা সবজি কেনার আগে তা ফরমালিন মুক্ত কিনা- তা পরীক্ষা করে তবে কিনতে পারেন। সরকার ইতোমধ্যে এটিকে অনুমোদনও দিয়েছেন।

এর বাইরে কৃষি জমিতে সেচের প্রয়োজন আছে কিনা- তা পরীক্ষা করার যন্ত্রও আবিষ্কার করেন তিনি। তিনি বলেন, বাংলাদেশে কৃষি জমিতে জল সেচ দেয়া হয় অনুমানের উপর নির্ভর করে। মাত্র ১২০ টাকা দামের এই যন্ত্র দিয়ে নিরক্ষর কৃষকও জানতে পারেন জমিতে সেচের প্রয়োজন আছে না নেই।

(ওএস/এটিআর/অক্টোবর ২১, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

১৭ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test