E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

আপনি জানেন আপনার মস্তিস্ক গণিতে কি দারুণ দক্ষ ?

২০১৪ মে ০৮ ১৭:৩২:২৪
আপনি জানেন আপনার মস্তিস্ক গণিতে কি দারুণ দক্ষ ?

নিউজ ডেস্ক : রাস্তা পার হবার জন্য দাঁড়িয়েছেন। মাত্র ৫০ মিটার দূর থেকে একটি ট্রাক ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার বেগে ধেয়ে আসছে। রাস্তার প্রস্থ ৫ মিটার, ঘণ্টায় ২৫ কিলোমিটার বেগে একটা দৌড় দিলেই নিরাপদে রাস্তাটা পার হওয়া যাবে। যে কথা সেই কাজ। এক দৌড়ে রাস্তা পার হয়ে গেলেন।

যদিও আপনি কখনোই এভাবে হিসেব করে রাস্তা পার হননি অথবা গণিতে আপনার বিরাট ভয়। হয়তো অঙ্কের নাম শুনলেই আপনার লোম শিউরে উঠে কিন্তু তারপরও আপনার মস্তিস্ককে গণিতে দক্ষ বলতে হবে।

বিশ্বাস হচ্ছেনা? সবচেয়ে বড় প্রমান আপনি এখনো বেঁচে আছেন। শুধু যোগ বিয়োগই না, আপনার মস্তিস্ক দৈনন্দিন কাজে বীজগণিত, জ্যামিতি, ক্যালকুলাস, প্রোবাবলিটির মত জটিল সব গানিতিক সমস্যার সমাধান করে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। এমনকি আপনি যখন ঘুমাচ্ছেন তখনও আপনার মস্তিস্ক হিসেব কষে যাচ্ছে আপনার স্মৃতি সংরক্ষণ, বিশ্লেষণ ও পূণর্বিন্যাসের কাজে। এভাবেই আপনার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আপনার বেঁচে থাকা এবং উৎকর্ষতার কাজে অবিরাম হিসেব কষে যাচ্ছে আপনার মস্তিস্ক।

নিশ্চয়ই ভাবছেন আপনার মস্তিস্ক এত হিসেব করে যাচ্ছে অথচ আপনি কিছুই জানেন না! হ্যাঁ, হয়তো আপনি অনেক কিছুই জানেন না। মানুষের মস্তিস্কে দুইটি কার্যকরী অংশ থাকে। একটি চেতন অংশ অপরটি অবচেতন অংশ। চেতন অংশ মানুষের ইচ্ছামত চলে কিন্তু অবচেতন অংশ মানুষের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। এটি মানুষের সকল অনৈচ্ছিক পেশীর নিয়ন্ত্রণ, রক্ষণাবেক্ষণ এবং বিকাশের কাজ করে। তাছাড়া প্রতিকূল পরিবেশ ও পরিস্থিতিতে শরীরকে খাপ খাওয়ানো এবং পরিস্থিতি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত গ্রহনের কাজও করে থাকে। আর চেতন অংশ মানুষের ইচ্ছা অনুযায়ী সব কাজ যেমন তথ্য আহরণ, বিশ্লেষন এবং প্রোয়োজন অনুযায়ী তা কাজে লাগানো ইত্যাদি করে থাকে।

প্রশ্ন এসে যায় যে এখানে গনিত এল কোথা থেকে, তাইনা? লক্ষ্য করুন, মানুষের সকল শারীর বৃত্তীয় কাজই বৈদ্যুতিক সংকেতের মাধ্যমে হয়ে থাকে। মানবদেহের তথ্য সংগ্রহকারি ইন্দ্রিয়গুলো প্রত্যেকটি আসলে একেকটি সেন্সর (সংবেদক)। যেমন চোখ একটি লাইট সেন্সর(আলোক সংবেদক) , কান শব্দ সংবেদক, নাক এবং জিহ্বা রাসায়নিক উপাদান সংবেদক এবং ত্বক তাপ ও চাপ সংবেদক। এসব সেন্সর বা সংবেদক দ্বারা সংগ্রহীত তথ্য স্নায়ুতন্ত্রের মাধ্যমে বিভিন্ন মাত্রার বৈদ্যুতিক সংকেতরুপে মস্তিস্কে পৌঁছায়। মানুষের সারা শরীরে ছড়িয়ে থাকা কেবলরূপী স্নায়ুকোষগুলো ইলেকট্রন পরিবাহী হওয়ায় বিদ্যুৎ গতিতে যেকোনো অনুসরণ মস্তিস্কে পৌঁছে যায়। স্নায়ুতন্ত্রের মাধ্যমে প্রাপ্ত সংকেতগুলো মস্তিস্ক দ্রুত বিশ্লেষণ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়। আর গণিতে ব্যবহার হয় এই বিশ্লেষনের পর্যায়। ঠিক যেভাবে কম্পিউটারের প্রসেসর সিগনাল প্রসেসিংএর মাধ্যমে হিসেব করে। মানব মস্তিস্ক আর কম্পিউটারের মধ্যে পার্থক্য হল মস্তিস্ক নিজের প্রয়োজনে হিসেব করে আর কম্পিউটার করে ব্যবহারকারীর প্রয়োজনে।

গবেষণায় দেখা গেছে বেঁচে থাকার প্রয়োজনে ও বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে মানুষের মস্তিস্ক গড়ে প্রতিদিন ৮০ হাজারেরও বেশি চিন্তা করে। আর প্রতিটি চিন্তার পেছনে লুকিয়ে আছে অজস্র হিসেব। হিসেবের পর হিসেব।

আপনি হয়ত অবাক হচ্ছেন আপনার মস্তিস্ক প্রতি মুহুর্তে এত অঙ্ক কষে যাচ্ছে তাহলে আপনি কেনো বুঝতে পারছেন না কিংবা মস্তিস্কই তো বিরাট গনিতজ্ঞ, তাহলে আপনার আর গণিত শেখার দরকার কি ? উত্তরটা হল, আপনার মস্তিস্কের গাণিতিক প্রক্রিয়া মস্তিস্কের অবচেতন অংশে ঘটে যেভাবে একজন কম্পিউটার ব্যবহারকারী জানেনও না যে তাকে একটি ভিডিও ক্লিপ দেখাতে গিয়ে তার কম্পিটারটি কতগুলো হিসেব কষছে।

বাস্তবে আমাদের হিসেব করতে হয় বিভিন্ন ঘটনার কারণ উদঘাটন, বিশ্লেষণ, ফলাফল ব্যাখ্যা ও পরস্পরের মধ্য সেসব তথ্য বিনিময় করার জন্য। তাই হিসেব প্রক্রিয়া সহজে এবং ধাপেধাপে অপেক্ষাকৃত কঠিন হিসেব করতে আমরা সাংকেতিক চিহ্ন ব্যাবহার করি। তাছাড়া গনিত প্রকৃতি নির্ভর মানে প্রাকৃতিক যুক্তির পরম সাংখ্যিক (Absolute Numeric) মান নির্ভর এক বিদ্যা অর্থাৎ মানুষের সর্বাপেক্ষা নির্ভুল পর্যবেক্ষণ ওপর ভিত্তিকরে গড়ে ওঠা জ্ঞান। অপরদিকে মস্তিস্কের গনিত হল বংশানুক্রমে এবং পরিবেশ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বেঁচে থাকা ও বংশবিস্তারের উদ্দেশ্যে অবচেতন অংশে গড়ে ওঠা জ্ঞান।

(ওএস/এটি/মে ০৮, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

১৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test