E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

১৬টা গ্রহ ছিল সৌরমণ্ডলে! তারা সব গেলটা কোথায়?

২০১৬ মার্চ ১৩ ১৫:৫৮:৩০
১৬টা গ্রহ ছিল সৌরমণ্ডলে! তারা সব গেলটা কোথায়?

নিউজ ডেস্ক :ছোট শহরে সাধারণ কেরানি পরিবারে জন্মানোর সুবাদে বড় হয়ে ইঞ্জিনিয়ার বা ডাক্তার হতে হবে, আত্মীয় স্বজনের সেই প্রত্যাশার তাগিদেই বোধহয় ভাল করে কথা বলতে শেখার আগেই জেনে গিয়েছিলাম ‘একে চন্দ্র, দুইয়ে পক্ষ, তিনে নেত্র’। এও শিখেছিলাম ‘ন’য়ে নবগ্রহ’। পরে স্কুলে গিয়ে জানলাম, সেই ‘নবগ্রহে’র চারটি ‘গ্রহ’ আদতে গ্রহই নয়। একটি হল নক্ষত্র। সূর্য। একটি উপগ্রহ -চন্দ্র আর বাকি দু’টি ‘গ্রহ’- ‘রাহু’ ও ‘কেতু’ একেবারেই কাল্পনিক।

আসলে দার্শনিক অ্যারিস্টটলের মতবাদের মতো হিন্দু শাস্ত্রেরও ধারণা ছিল, এই ব্রহ্মাণ্ডে পৃথিবীই সব। তাই পৃথিবীকে কোনও ‘গ্রহ’ হিসেবে ধরাও হত না। তবে অ্যারিস্টটলের ব্রহ্মাণ্ড-তত্ত্বে ‘রাহু’ ও ‘কেতু’র মতো কোনও কাল্পনিক ‘গ্রহ’ ছিল না। তাই তাঁর হিসেবে গ্রহের সংখ্যা ছিল ৭। প্রায় দু’হাজার বছর ধরে এই ধারণা চালু ছিল। কিন্তু কোপারনিকাসের সূর্যকেন্দ্রিক জগৎ যখন অ্যারিস্টটলের ধারণাকে ভুল প্রমাণ করল, তখন সৌরজগতে গ্রহের সংখ্যা কমে গিয়ে দাঁড়াল ৬। বুধ, শুক্র, পৃথিবী, মঙ্গল, বৃহস্পতি এবং শনি। এই ছয় সংখ্যাটি কিন্তু বেশি দিন থাকল না। কয়েক দশক পরেই গ্যালিলিও গ্যালিলেই তাঁর বানানো টেলিস্কোপ দিয়ে বৃহস্পতির চার পাশে ঘুরে চলা চার-চারটি ‘চাঁদ’ আবিষ্কার করে ফেললেন। সেই সময়কার জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা ওই চারটি চাঁদকেও ‘গ্রহ’ই ভেবেছিলেন।

আরও পড়ুন- বৃহস্পতি, শনির ‘দাদাগিরি’ই বাঁচিয়ে চলেছে পৃথিবীকে

ধাক্কা খেলেন আইনস্টাইন, বিচ্ছেদের পরেও প্রেমে মজে থাকে কণারা!

কিন্তু তাতে ঝামেলা বাড়ল। প্রশ্ন উঠল, যদি বৃহস্পতির চার পাশের চাঁদগুলি ‘গ্রহ’ হয়, তা হলে পৃথিবীর চার পাশে যে চাঁদটি ঘুরছে, তা কেন গ্রহ হবে না? হক কথা! তাই পৃথিবীর চাঁদটাও ‘গ্রহ’ হয়ে গেল। এই ভাবে ১৬১০ সাল নাগাদ সৌরজগতে গ্রহের সংখ্যা গিয়ে দাঁড়াল ১১। সূর্য থেকে তাদের দূরত্ব অনুযায়ী এই ১১টি গ্রহ হল- বুধ, শুক্র, পৃথিবী, পৃথিবীর চাঁদ, মঙ্গল, বৃহস্পতি, বৃহস্পতির চারটি চাঁদ এবং শনি।

আমাদের সৌরমণ্ডলের গ্রহ আর ‘না-গ্রহ’রা।

কিন্তু কী মুশকিল! মাত্র ৫০ বছরের মধ্যেই, ১৬৫৫ সালে হায়গেন্স সাহেব শনির চার পাশে একটি চাঁদ আবিষ্কার করে বসলেন। তার নাম দেওয়া হল ‘টাইটান’। চার বছর পর হায়গেন্স সাহেবই শনির চারটি বলয় আবিষ্কার করে ফেলেন। বিশ্বের অন্য জ্যোতির্বিজ্ঞানীরাও চুপচাপ বসে ছিলেন না। মাত্র ২০ বছর পরেই ফ্রান্সের জ্যোতির্বিজ্ঞানী ক্যাসিনি শনির আরও ৪ টি চাঁদ আবিষ্কার করে ফেললেন। ফলে, ১৭০০ শতাব্দীর শেষে ‘গ্রহে’র সংখ্যা বেড়ে হল- ১৬।

১০০ বছরের মধ্যে ‘গ্রহে’র সংখ্যা ৬ থেকে হল ১৬! কিন্তু হায়গেন্স বুঝতে পেরেছিলেন, পৃথিবী, বৃহস্পতি বা শনির চার পাশে ঘুরে চলা চাঁদগুলি মোটেই বাকি ৬টি বড় গ্রহের মতো নয়। তাই তিনি ওই দশটি চাঁদকে ‘উপগ্রহ’ হিসেবে চিহ্নিত করলেন। ব্যস, এক লাফে ১৬ থেকে নেমে গ্রহের সংখ্যা আবার ৬ হয়ে গেল। প্রায় ১০০ বছর পরে, উইলিয়াম হার্শেল ইউরেনাস আবিষ্কার করার সঙ্গে-সঙ্গেই গ্রহের সংখ্যা গিয়ে দাঁড়াল ৭। কোপারনিকাসের আগে দীর্ঘ দু’হাজার বছর ধরে যে সংখ্যাটি ছিল, সেখানেই ফিরল জ্যোতির্বিজ্ঞান। তত দিনে অষ্টাদশ শতাব্দী শেষ হয়েছে। কিন্তু তার মধ্যেই কয়েকটি অসাধারণ ঘটনা ঘটে গিয়েছে। হ্যালির ধূমকেতু যে সময় আসার কথা ছিল, সেই সময় না এসে দেরিতে এসে পৌঁছালো। ইউরেনাসও কেপলারের দেওয়া তত্ত্ব ঠিকঠাক মেনে চলছিল না। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা অনুমান করলেন, ইউরেনাস পেরিয়ে এমন কিছু একটা আছে, যার মাধ্যাকর্ষণই ওই সব বিপত্তি ঘটাচ্ছে!

দেখুন- কী ভাবে কাজ করে সৌরমণ্ডল, তার ভিডিও।



স্বাভাবিক ভাবে, সকলেই আরও একটি বড়সড় গ্রহের কথা ভাবছিলেন। খোঁজাখুঁজি শুরু হয়ে গেল। ১৮০১ সালে মঙ্গল আর বৃহস্পতির মধ্যে আবিষ্কৃত হল- সেরেস। ঠিক পরের বছর সেরেসের কাছাকাছি হদিশ মিলল ‘পাল্লাসে’র। আর ‘পাল্লাসে’র আবিষ্কারের দু’বছর পরেই সন্ধান মিলল ‘জুনো’র। ফলে, চার বছরেই আবার গ্রহের সংখ্যা বেড়ে হল- ১০। তা দিনকয়েক পর আরও বেড়ে হল- ১১। কারণ, ঠিক দু’বছর পরেই ‘সেরেস’, ‘পাল্লাস’ আর ‘জুনো’র কাছাকাছি খুঁজে পাওয়া গেল আরও একটি ছোট ‘গ্রহ’- ‘ভেস্টা’। তাই আবার ‘গ্রহে’র সংখ্যা বেড়ে হল- ১১। ঠিক যেমনটি ছিল ১৬১০ থেকে ১৬৫৫ সাল পর্যন্ত।


এই সৌরমণ্ডলের গ্রহ ও তাদের উপগ্রহ বা চাঁদেরা।

দীর্ঘ অর্ধ শতাব্দীর খোঁজাখুঁজির পর ১৮৪৬ সালে আবিষ্কৃত হল- ‘নেপচুন’।

তা হলে কি ‘গ্রহে’র সংখ্যা বেড়ে হল ১২? নেপচুন আবিষ্কারের পর এই নিয়ে শুরু হয়ে গেল জোর বিতর্ক। এরই মধ্যে সেরেসের আরেক ‘ভাই’- ‘আস্ত্রাকা’কে খুঁজে পাওয়া গেল। আর তাই নেপচুনকে নিয়ে ‘গ্রহে’র মোট সংখ্যা বেড়ে হল- ১৩। কিন্তু সেরেস আর তার ‘ভাই’রা ইউরেনাস ও নেপচুনের চেয়ে আকারে খুবই ছোট হওয়ায়, ১৮৪৭ সালে তাদের আর ‘গ্রহ’ না বলে, ‘গ্রহাণু’ (Asteroid) হিসেবে চিহ্নিত করা হল। তার ফলে ১৮৪৭ সাল থেকে গ্রহের সংখ্যা আবার কমে হল- ৮।

শেষমেশ ১৯৩০ সালে, নেপচুন আবিষ্কারের প্রায় এক শতাব্দী পরে সন্ধান মিলল সৌরজগতের আপাতত সবচেয়ে দূরের গ্রহ প্লুটোর। সেই থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত আমরা ‘ন’য়ে নবগ্রহ’ হয়েই ছিলাম। কিন্তু আবার শোরগোল ফেলে দিলেন জ্যোতির্বিজ্ঞানী মাইক ব্রাউন। প্লুটোর ‘গ্রহ-মর্যাদা’য় আঘাত দিয়ে। হই হই পড়ে গেল বিশ্বজুড়ে। সেই কাহিনী খুব মজার। সেই রসালো গল্পটা বলব পরের দফায়।

(ওএস/এস/মার্চ১৩,২০১৬)

পাঠকের মতামত:

১৯ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test