E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

প্রাকৃতিকভাবেই প্লাস্টিক থেকে তৈরি হচ্ছে পাথর!

২০১৪ জুন ০৬ ১৫:০৮:১৮
প্রাকৃতিকভাবেই প্লাস্টিক থেকে তৈরি হচ্ছে পাথর!

নিউজ ডেস্ক : প্রকৃতির উপাদান পাথর নিয়ে আমাদের বেশিরভাগ সময়েই কোনো মাথাব্যাথা থাকে না। কিন্তু পাথর কীভাবে তৈরি হয় তা কি আমরা জানি? বিভিন্ন প্রাকৃতিক পদার্থ থেকে তৈরি হয় পাথর। কিন্তু সেই দিন বুঝি শেষ হতে চললো। কারণ এখন প্লাস্টিক থেকে তৈরি হচ্ছে পাথর!

বিভিন্ন প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ায়, চাপ, তাপ, আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত এসব কারণে বালি, মাটি, জীবাশ্ম ইত্যাদি থেকে তৈরি হয়ে থাকে পাথর। কিন্তু প্লাস্টিক থেকে কীভাবে এমন পাথর তৈরি হবে? তাও প্রাকৃতিকভাবে? দেখা যায় যে, অনেক সময়ে বিভিন্ন সমুদ্রতটে পড়ে থাকা গলা প্লাস্টিক বর্জ্য মিশে যায় পলি, লাভার অবশিষ্ট, বিভিন্ন জৈবিক বর্জ্য( যেমন শামুকের খোল) এগুলো মিশে তৈরি করে নতুন এক ধরণের পাথর।

“প্লাস্টিগ্লোমারেট” নামের এই নতুন ধরণের পাথর নিয়ে চিন্তিত গবেষকেরা। কিন্তু কেন? কারণ হলো, প্লাস্টিক জিনিসটা ক্ষয় হয় না সহজে। আর অন্যান্য সব উপাদানের সাথে মিশে থাকার কারণে এই পাথর এতোই অক্ষয়, যে অনন্তকাল ধরে পৃথিবীতে তা থেকে যাবার সম্ভাবনা প্রবল। এমনকি ভবিষ্যতে পৃথিবীতে মানুষের উপস্থিতি এবং কাজকর্মের নিশানা হয়ে থাকতে পারে এই পাথর।

প্লাস্টিক দূষণ এখন আর নতুন কিছু নয়। পৃথিবীর সব জলাশয়, নদী এবং সাগর দূষিত হচ্ছে মানুষের কারণে। ১৯৫০ সালের দিকে প্রথম আবিষ্কৃত হওয়া এই প্লাস্টিক এমন একটি বস্তু যা সহজে ক্ষয় হয় না এবং শত থেকে সহস্র বছর পর্যন্ত প্রকৃতিতে তার থেকে যাবার সম্ভাবনা থাকে। ক্যালিফোর্নিয়ার আলগালিটা মেরিন রিসার্চ ইন্সটিটিউটের গবেষণা থেকে জানা যায়, এর পাশাপাশি অন্যান্য প্রাকৃতিক উপাদানের সাথে মিশে এভাবে পাথর তৈরি করারও ক্ষমতা আছে প্লাস্টিকের। হাওয়াই এর সমুদ্রতটে প্লাস্টিক গলে তৈরি হওয়া কিছু পাথর খুঁজে পান তারা। এর সাথে মিশে ছিলো বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপাদা। একে কি নামে ডাকা যায় তা প্রথমে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিলো না। পরে এর নাম দেওয়া হয় প্লাস্টিগ্লোমারেট। এর আগেও হয়তো এই পদার্থটি খুঁজে পাওয়া গেছিলো কিন্তু কেউ এ ব্যাপারে জানান নি।

হাওয়াই এর কামিলো বীচে পাওয়া গেছে এই প্লাস্টিগ্লোমারেট। পৃথিবীর অন্যতম নোংরা সমুদ্রতটের মাঝে এটি অন্যতম। বিভিন্ন রকমের প্লাস্টিক বর্জ্য দিয়ে এটি ভর্তি। এখানে দুই ধরণের প্লাস্টিগ্লোমারেট পাওয়া গেছে, ইন সিটু এবং ক্লাস্টিক।

ইন সিটু ধরণের প্লাস্টিগ্লোমারেট বেশ দুর্লভ। যখন পাথরের ওপর প্লাস্টিক গলে যায় এবং পাথরের সাথে মিশে যায়, তখন এটি তৈরি হয়। এক্ষেত্রে পাথরের সাথে বেশ শক্তভাবে আটকে থাকে প্লাস্টিক। ক্লাস্টিক তুলনামুলকভাবে অতোটা শক্ত বাঁধুনির পাথর নয়। ক্লাস্টিক হলো ব্যাসাল্ট, প্রবাল, শামুক-ঝিনুক, কাঠের টুকরো এবং বালির মিশ্রণ যা গলে যাওয়া প্লাস্টিকের মাধ্যমে একসাথে আটকে থাকে। কিন্তু এর পরেও সাধারণ প্লাস্টিকের চাইতে অনেক বেশি ঘন এই ক্লাস্টিক।

কীভাবে প্লাস্টিক এভাবে গলে গিয়ে পাথর তৈরি করে?
প্রথমে ধারণা করা হয়েছিলো লাভার উত্তাপে এভাবে প্লাস্টিক গলে যায়। কিন্তু সম্প্রতি দেখা যায়, বহুদিন সেই এলাকায় অগ্ন্যুৎপাত হয়নি। এমনকি প্লাস্টিক উদ্ভাবনের পরে সেখানে কোনো রকমের লাভার উপস্থিতি ছিলো না। স্থানীয় মানুষের সাথে কথা বলার পরে এ সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায় যে, প্লাস্টিক নষ্ট করার জন্য মানুষের পোড়ানো প্লাস্টিকের থেকে এসবের উৎপত্তি। পৃথিবীর আরও অনেক স্থানেই এভাবে প্লাস্টিক পোড়ানো হয়। এ থেকে ধারণা করা যাচ্ছে প্লাস্টিগ্লোমারেটও আরও অনেক স্থানে পাওয়া যাবে। এমনকি মানুষ আর প্রচুর পরিমাণে প্লাস্টিক বর্জ্য যে কোনো জায়গায় উপস্থিত থাকলে সেখানেই প্লাস্টিগ্লোমারেট পাওয়া যেতে পারে।

(ওএস/এটিআর/জুন ০৬, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

০৩ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test