E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ছোট হয়ে যাচ্ছে বুধ, গিলে খেয়ে ফেলতে পারে সূর্য!

২০১৬ নভেম্বর ২২ ১৬:০০:৪৯
ছোট হয়ে যাচ্ছে বুধ, গিলে খেয়ে ফেলতে পারে সূর্য!

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ডেস্ক :‘রক্তের জোর’ কমে যাচ্ছে আমাদের সৌরমণ্ডলে সূর্যের সবচেয়ে কাছে থাকা গ্রহ- বুধের!বুধের শরীরের ‘রক্ত’ খুব দ্রুত ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। ফলে, চামড়া কুঁচকে যাচ্ছে বুধের! তার চেহারাটা হয়ে যাচ্ছে আরও ছোটখাট। গায়ে-গতরের দিক থেকে এই সৌরমণ্ডলের সবচেয়ে ‘হীনবল’ গ্রহ বুধ যত দিন যাচ্ছে, ততই হয়ে যাচ্ছে আরও বেশি ‘পুঁচকে’!

ঠিক যেমন, আমাদে্র বয়স যত বাড়ে, ততই ‘রক্তের জোর’ কমে যায়।একটা শিশুর শরীরে রক্ত যতটা গরম থাকে, কোনও বৃদ্ধের শরীরে তা ততটা থাকে না। আর রক্ত অতটা গরম থাকে বলেই শিশুদের শরীর অতটা তরতরিয়ে বাড়ে। শিশুদের গায়ে-গতরের বাড়-বৃদ্ধির হার জোয়ানের চেয়ে তুলনায় বেশি।

বুধেরও ‘রক্তের জোর’ তেমনই কমে যাচ্ছে, খুব দ্রুত। মানে, তার অন্তরের, অন্দরের (কোর) যে গনগনে আগুনের আঁচ (তাপমাত্রা), তা খুব তরতরিয়ে কমে যাচ্ছে। বুধের ‘ভেতরটা’ উত্তরোত্তর ঠান্ডা মেরে যাচ্ছে। গবেষণাপত্রটি ছাপা হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান-জার্নাল ‘জিওফিজিক্যাল রিসার্চ লেটার্স’-এ।আর তার ফলে কী হচ্ছে?

জোয়ান বয়সে আমাদের টানটান চামড়া যেমন প্রৌঢ়ত্বে পৌঁছলে একটু একটু করে ঝুলে পড়ে, ঠিক তেমনই বুধের গা-ও (বুধের পিঠ) কুঁচকে ছোট হয়ে যাচ্ছে।পূর্ব, পশ্চিম, উত্তর, দক্ষিণ, সব দিকেই।বয়স হলে আমাদের চামড়া যেমন ঝুলে পড়ে, তেমনই বুধের পিঠটাও ভাঁজ খেয়ে তৈরি করেছে বিরাট একটি উপত্যকার। যাকে বলা হচ্ছে, ‘গ্রেট ভ্যালি’। যা আমাদের এই বাসযোগ্য গ্রহে, আমেরিকার আরিজোনায় ‘গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন’-এর চেয়েও বড়। আর গভীরতায় বুধের সেই সদ্য হদিশ মেলা উপত্যকাটি পূর্ব আফ্রিকার ‘গ্রেট রিফ্‌ট ভ্যালি’র চেয়েও বেশি।

বুধের ‘চামড়া’ কতটা ভাঁজ খেয়েছে জানেন?

হালের গবেষণা জানাচ্ছে, ভাঁজ খেয়ে বুধে যে উপত্যকাটি তৈরি হয়েছে, তা লম্বায় ৬২০ মাইল (১০০০ কিলোমিটার), চওড়ায় ২৫০ মাইল (৪০০ কিলোমিটার) আর গভীরতায় দুই মাইল (৩.২ কিলোমিটার)।

মূল গবেষক ওয়াশিংটনের স্মিথসোনিয়ান ন্যাশনাল এয়ার অ্যান্ড স্পেস মিউজিয়ামের জ্যোতির্বিজ্ঞানী টম ওয়াটার্স গবেষণাপত্রে লিখেছেন, ‘‘আমাদের ‘গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন’ বা ‘গ্রেট রিফ্‌ট ভ্যালি’ তৈরি হয়েছিল যে ভাবে্, সে ভাবে কিন্তু বুধের ‘গ্রেট ভ্যালি’ তৈরি হয়নি।পৃথিবীতে সাতটি টেকটোনিক প্লেট রয়েছে। তাদের সরণ ও সংঘর্ষের জন্যই ওই উপত্যকাগুলির জন্ম হয়েছে। কিন্তু বুধে রয়েছে একটিই প্লেট। সেই প্লেটটাই ভাঁজ খাওয়ার ফলে ওই ‘গ্রেট ভ্যালি’র জন্ম হয়েছে।’’

মুম্বইয়ের ‘টাটা ইনস্টিটিউট ফর ফান্ডামেন্টাল রিসার্চ’ (টিআইএফআর)-এর জ্যোতির্বিজ্ঞানের বিশিষ্ট অধ্যাপক দেবেন্দ্র ওঝা বলছেন, ‘‘বুধ গ্রহটি যে চেহারায় উত্তরোত্তর ছোট হয়ে যাচ্ছে, তা গত শতাব্দীর সত্তরের দশকেই টের পাওয়া গিয়েছিল। সেই সময়েই নাসার ‘মেরিনার-১০’ মহাকাশযান বুধের পাশ দিয়ে ছুটতে ছুটতে জানিয়েছিল, চেহারায় বুধ খাটো হয়ে যাচ্ছে। কতটা? ৪৬০ কোটি বছর আগে বুধের জন্মের পর গ্রহটি চেহারায় খাটো হয়েছে ১.২ থেকে ২.৫ মাইল বা দুই থেকে চার কিলোমিটার। কিন্তু তাতে বিজ্ঞানীরা খুশি হচ্ছিলেন না। কারণ, তাঁদের গাণিতিক মডেল বলছে, বুধের আরও বেশি করে চেহারায় খাটো হয়ে যাওয়ার কথা এত দিনে। একেবারেই হালে (২০১১ থেকে ২০১৫-র এপ্রিল পর্যন্ত) বুধের পাশ দিয়ে ঘুরে এসেছে আরেকটি মহাকাশযান ‘মেসেঞ্জার’। তার দেওয়া তথ্য জানাচ্ছে, বুধ চেহারায় খাটো হয়ে গিয়েছে প্রায় ৮.৭ মাইল বা ১৪ কিলোমিটার। এই হারটা বিজ্ঞানীদের গাণিতিক মডেলের সঙ্গে অনেক বেশি খাপ খাচ্ছে। এর ফলে, এক দিন হতেই পারে, তা এত ছোট হয়ে যাবে চেহারায় যে, সূর্যটাই তাকে গিলে খেয়ে নেবে!’’আনন্দবাজার










(ওএস/এস/নভেম্বর ২২, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

২২ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test