E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ঈদকে সামনে রেখে সক্রিয় অজ্ঞান পার্টি

২০১৪ জুলাই ১৪ ১১:২৭:৩১
ঈদকে সামনে রেখে সক্রিয় অজ্ঞান পার্টি

স্টাফ রিপোর্টার : রাজধানীর বাস ও লঞ্চ টার্মিনাল এবং রেল স্টেশনসহ অর্ধশত স্পটে অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা সক্রিয়। প্রতিদিনই অজ্ঞান পার্টির কবলে পড়ে হাসপাতালে যাচ্ছেন অনেক মানুষ। টাকা-পয়সা, মোবাইল ফোন, ব্যাগসহ অন্যান্য জিনিসপত্র খোয়াচ্ছেন পরিবহনের এসব যাত্রীরা। নিত্যনতুন কৌশলে কাঙ্খিত ব্যক্তিকে ঘায়েল করছে অজ্ঞান পার্টি। ঈদ বাজারকে কেন্দ্র করে বেড়েছে এ মৌসুমী অপরাধীদের তৎপরতা।

গোয়েন্দা তৎপরতায় ধরা পড়েছে, চিহ্নিত চক্রগুলোই রাজধানীর অজ্ঞান পার্টির নেটওয়ার্কের নিয়ন্ত্রক। এলাকাভিত্তিক এমন ২০টি গ্রুপে বিভক্ত অজ্ঞান পার্টি। গ্রুপের হোতাসহ কিছু সহযোগী গ্রেপ্তারের পর জেল হাজতে থাকলেও বাকিরা ঈদ মৌসুমে মাঠে নেমেছেন।

গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, গ্রেপ্তার এড়াতে এবং কাঙ্খিত ব্যক্তিকে সহজেই অচেতন করতে অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা এখন পরিবহনের রুট ভাগ করে একযোগে অপকর্ম করছে। সম্প্রতি অজ্ঞান পার্টির তৎপরতার নতুন গতিবিধি লক্ষ্য করে গ্রুপগুলোর নেতাদের গ্রেপ্তারে মাঠে নেমেছে ডিবি পুলিশ।

সূত্র জানায়, ঢাকায় সক্রিয় অজ্ঞান ও মলম পার্টির হোতাদের মধ্যে ২০জন উল্লেখযোগ্য। তারা হলেন- আহসান আলী, গিয়াস উদ্দিন হাওলাদার, আব্দুল সালাম, শেখ আবু জাফর, জাহাঙ্গীর হোসেন, শেখ শহিদুল ইসলাম ওরফে বাবু, বোরহান শেখ, রফিজ শিকদার, মিন্টু শিকদার, শফিকুল সমাদার, মিল্টন শিকদার, হুমায়ুন, শফিকুল ইসলাম, মানিক শেখ, আনোয়ার হোসেন, এরশাদ, সাইফুল ইসলাম, মাওলা, রিপন মৃধা ও ফজলুর রহমান। বিভিন্ন সময়ে এরা পুলিশ ও র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হলেও জামিনে ছাড়া পেয়ে আবার ফিরেছে পুরনো পেশায়।

গোয়েন্দা সূত্র জানায়, গত ৮ মে মিন্টু শিকদারকে আট সহযোগীসহ গ্রেপ্তার করেছে ডিবি পুলিশ। সম্প্রতি এ চক্রের কবলে পড়ে অনেক মানুষ অচেতন হয়েছেন বলে জানান ডিবির কর্মকর্তারা। মিন্টুর সহযোগী আব্দুল মান্নান, মাছুম দেওয়ান, নুরুল ইসলাম, ফারুক হোসেন ও নুরুজ্জামান অনেক দিন ধরেই এ অপকর্মে জড়িত ছিল।

ডিবির সহকারী কমিশনার মাহমুদ নাসের জনি জানান, সম্প্রতি অজ্ঞান পার্টির তৎপরতা বেড়ে যাওয়ায় গোয়েন্দা পুলিশ চক্রগুলোকে গ্রেপ্তারে বিশেষ অভিযানে নেমেছে। ঈদকে কেন্দ্র করে নজরদারি জোরদার করা হয়েছে।

গত ১ জুলাই বিমানবন্দর সড়কে আর্মি অফিসার মেসের সামনে থেকে ক্যান্টনমেন্ট থানা পুলিশ দুই অজ্ঞান পার্টির সদস্যকে আটক করে। এ চক্রটি সিএনজি অটোরিকশা চালকেদের অচেতন করে গাড়ি নিয়ে যেত। এমন চক্রের হোতাদের বিরুদ্ধেও অভিযান শুরু করেছে ডিবি।

ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘গরমের সময়, আর ঈদের সময় অজ্ঞান পার্টির চক্রগুলো তৎপর হয়ে ওঠে। এদের বেশিরভাগই আমাদের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছে। চিহ্নিত গ্রুপগুলো নতুন করে তৎপরতা চালাচ্ছে কি না সে বিষয়ে আমরা সজাগ আছি।’

সাম্প্রতিক ঘটনা থেকে জানা গেছে, অজ্ঞান পার্টির কবলে অচেতন হওয়ার আগে কেউ ডাব খেয়েছেন। কেউ ঠাণ্ডা পানি পান করেছেন। কেউবা খেয়েছেন বাদাম। কেউ খেয়েছেন চিকিৎসার ওষুধ বিশেষ হালুয়া। আবার কিছু না খেয়েও জ্ঞান হারিয়ে টাকা-পয়সা খুইয়েছেন কেউ কেউ।

জানা যায়, রাজধানীর বাস টার্মিনাল ও স্টেশনগুলোর মধ্যে সায়েদাবাদ, সাইনবোর্ড, যাত্রাবাড়ী, গুলিস্তান, ফুলবাড়িয়া, গাবতলি, শ্যামলী, কল্যাণপুর, মহাখালিতে অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা তৎপরতা চালাচ্ছে। এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ মোড় যেমন ফার্মগেট, শাহবাগ, পল্টন, কাকরাইল, মালিবাগ, কারওয়ান বাজারসহ বিভিন্ন জায়গায় ছদ্মবেশে অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা তৎপরতা চালিয়ে থাকে। তারা কখনো ডাব বিক্রেতা, কখনো ভ্রাম্যমাণ পান সিগারেটের দোকান, কখনো হকার সেজেও এ কাজ করে।

ভুক্তভোগীরা বলছেন, মাওয়া থেকে গুলিস্তান-সায়েদাবাদ রুট, কাচপুর-নারায়ণগঞ্জ থেকে যাত্রাবাড়ী-সায়েদাবাদ ও গুলিস্তান; গাজীপুর থেকে আব্দুল্লাহপুর; মহাখালী ও সাভার থেকে গাবতলী, মিরপুর ও চিড়িয়াখানা রুটের বাসগুলোতে এখন অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা বেশি সক্রিয়।

ডিবির কর্মকর্তারা জানান, অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা পাকিস্তানে তৈরি আমদানি নিষিদ্ধ ‘এনিভেট’ ট্যাবলেটটি বেশি ব্যবহার করছে। তবে এখন অনেক নতুন কৌশল ব্যবহার করা হচ্ছে।

রোগীদের অভিজ্ঞতার বরাত দিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের মেডিকেল অফিসার আব্দুস সালাম বলেন, ‘পানীয়র মধ্যেই চেতনানাশক বেশি ব্যবহার করা হচ্ছে। ইফতারের পরই বেশি রোগী আসে। সিএনজি অটোরিকশার যাত্রীদের ঘায়েল করতে সিটের ওপর ক্লোরোফর্ম লেপটে দেয় দুর্বৃত্তরা। অনেক সময় যাত্রীবেশে সিএনজিতে উঠে স্প্রে করে দেয়। ডায়াবেটিক রোগীদের চিকিৎসায় ব্যবহৃত ইনস্যুলিন ইনজেকশনও এখন ব্যবহার করছে অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা।’

(ওএস/এস/জুলাই ১৪,২০১৪)

পাঠকের মতামত:

২৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test