E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

টুপির দাম ৩ হাজার, আতর ২০ হাজার!

২০১৪ জুলাই ১৬ ০২:২২:৫৬
টুপির দাম ৩ হাজার, আতর ২০ হাজার!

স্টাফ রিপোর্টার : রোজা ও ঈদকে ঘিরে নতুন পোশাকের পাশাপাশি আতর, টুপি, তসবিহ ও জায়নামাজ কেনার ধুম পড়েছে। বায়তুল মোকাররম মসজিদ মার্কেট, গুলিস্তান, মিটফোর্ড সুগন্ধি বাজার, নিউ মার্কেট, চকবাজারসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার বিক্রেতারা জানান, ঈদ যতই এগিয়ে আসছে বিক্রি ততই বাড়ছে।

ঈদকে সামনে রেখে ট্রাফিক সিগন্যালে থামা গাড়িতে আর ফুটপাথে মৌসুমি হকাররা বিক্রি করছেন আতর, টুপি আর নামাজ শিক্ষার বই। অলিগলির ছোট দোকানগুলোতেও পাওয়া যাচ্ছে ঈদের এসব অনুষঙ্গ। আবার পাড়া-মহল্লায় মসজিদের সামনে মাদুর পেতে টুপি, মেসওয়াক ও সুগন্ধি বিক্রি করতে দেখা গেছে অনেককে।

দেশীয় টুপির বাজার
রোজা ও ঈদ উপলক্ষে দেশীয় টুপির বাজার দারুণ চাঙ্গা। একই সঙ্গে বেড়েছে রফতানিও। পুরান ঢাকার চকবাজার ও বগুড়া থেকে হরেক রকমের টুপি সারা দেশে বিপণন করা হচ্ছে। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে গড়ে উঠেছে ছোট ছোট টুপির কারখানা।

দেশীয় বাজারে নুরানী, আল কবির, আল শহিদ, আল ফারুক, লেইস, পুশিকাটা পুঁতি, জালি, গোল, আড়ি, এসি, সাতে, টরে ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের টুপি পাওয়া যাচ্ছে। রাজধানীর বায়তুল মোকাররম, নিউ মার্কেট, চকবাজারসহ বিভিন্ন মসজিদ এলাকায় টুপি বিক্রি হচ্ছে। এসব টুপি সর্বনিম্ন ১০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৮০০ টাকায়ও বিক্রি হচ্ছে। তবে মাঝারি মানের টুপি ৪০ টাকা থেকে ২০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যায়। আর বিদেশি টুপির মধ্যে তুর্কি, পাকিস্তানি লেইস, পিপসি, চায়নাসহ হরেক নামের নজরকাড়া নকশার টুপি রয়েছে। বিদেশি এসব টুপির দেশে দাম সর্বনিম্ন ৮০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ এক হাজার টাকার মধ্যে।

দেশি টুপির পাশাপাশি বাহারি নকশা ও আকৃতির বিদেশি টুপিও পাওয়া যাচ্ছে দোকানে। নকশার সঙ্গে মিল রেখে এসব টুপির চমকপ্রদ সব নাম দিয়েছেন বিক্রেতারা। দোকান ঘুরে দেখা গেল, চীনা টুপি ১৫০ থেকে ২০০ টাকা, পাকিস্তানি টুপি ১৫০ থেকে ৬০০, ভারতীয় টুপি ২০ থেকে ৬০০ এবং দেশে তৈরি টুপি ১০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

পাকিস্তানি টুপির মধ্যে আসিফ জারদারি বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকায়। চীনের ওয়ানি ৫৫০ টাকা, ভারতের গুজরাটি ২৫০ থেকে ৩০০, সিডনি ৪০০, পাঠান ৪৫০ এবং ছোট পুঁতির সঙ্গে সোনালি সুতোর কাজ করা প্রতিটি টুপি বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৮০০ টাকায়। এ ছাড়া নেটের তৈরি চীনা টুপি ১৫০ টাকা এবং তুর্কি টুপি ৫০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বায়তুল মোকাররম মার্কেটের সবচেয়ে বড় টুপির দোকান বরকতীয় আতর হাউসের স্বত্বাধিকারী আব্দুল গফুর বলেন, ‘আমাদের এখানে ক্রেতারা আসেন বিদেশি উন্নতমানের টুপি কিনতে। এর মধ্যে সবচেয়ে দামি টুপি হচ্ছে মালয়েশিয়ান মাহাথির টুপি। যার দাম পড়বে প্রতিটি তিন হাজার টাকা।’

বায়তুল মোকররম মসজিদ মার্কেটের টুপি বিক্রেতা মো. সোহাগ বলেন, রোজার শুরু থেকেই টুপির বিক্রি ভালো। এই সময়টায় ভালো লাভ হয়।
আতরের তোলা ২০ হাজার টাকা

দাদার জন্য ভালো আতরের খোঁজে বায়তুল মোকাররম মসজিদ মার্কেটে এসেছিলেন এনজিও কর্মকর্তা ফিরোজ কবীর। এক দোকানে সবচেয়ে ভালো মানের আতর চাইতেই সৌদি আরবের ‘উদ’ আতরের ছোট্ট শিশি হাতে তুলে দিলেন দোকানি। দাম হাঁকলেন এক তোলা ২০ হাজার টাকা। দোকানি নাজমুল হাসানের দাবি, উদই এবারের ঈদে আসা সবচেয়ে ভালো আতর। দাম শুনে প্রথমে ভড়কে গেলেও শেষ পর্যন্ত এক হাজার ২০০ টাকায় এক শিশি ‘লর্ড’ আতর কিনলেন ফিরোজ। দোকানির দাবি, লর্ডও সৌদি আরবেরই তৈরি। বললেন, এবার বিদেশি আতরের চাহিদাই বেশি। বিক্রিও অন্যবারের চেয়ে ভালো।

বায়তুল মোকাররম থেকে আতর কিনেছেন কলেজছাত্র শরিফও। তিনি বলেন, ঈদের দিন বিশেষ দিন। আর ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী আতর ব্যবহার করা সুন্নত। এ কারণেই আতর কেনা।

রাজধানীর আতরের দোকানগুলো ঘুরে দেখা যায়, ১০০ মিলিলিটারের সুলতান এক হাজার ৮০০ থেকে দুই হাজার টাকা, আলফারেজ দুই হাজার, লর্ড এক হাজার ২০০, সিলভার এক হাজার ৮০০, ওপেন এক হাজার ৫০০, আলফে জহুর দুই হাজার, ব্ল্যাক অ্যাকসেস এক হাজার ৫০০, রোজ এক হাজার ৭০০, ডাহনাল উদ পাঁচ হাজার, ইস্কাদা কালেকশন এক হাজার ৫০০, ইগুবস এক হাজার ৬০০, বস এক হাজার ৫০০ এবং ম্যাডার রোজ ব্র্যান্ডের আতর এক হাজার ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এ ছাড়া প্রতি শিশি সৌদির রয়্যাল ম্যারেজ ৫০ টাকা, ওয়ানম্যান শো ১২০, শপিজ ৬০০, সাফসাফা ২০০, দুবাইয়ের সুলতান ২২০, ভারতের কোবরা ২৫০, মুম্বাইয়ের দরবার ৩০০, নূর ৩০০ এবং ইরানি গাউহ আতর ১২০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। দেশীয় আতর পাওয়া যাচ্ছে ২০ থেকে ৩০০ টাকার মধ্যে। এর মধ্যে দরবার-কাঁচাবেলি ২০ টাকা, মদিনা ৪০ এবং জান্নাতুল ফেরদাউস ২০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।

মিরপুর-১ নম্বর সেক্টরে ফুটপাথের আতর বিক্রেতা শরিফুল ইসলাম বলেন, গত বছরের তুলনায় এবার আতরের বিক্রি বেশি। দাম কম হওয়ায় অনেক ক্রেতাই দেশি আতর ‘শাহি দরবার’ কিনছেন। দেশি শাহি দরবার আতর ৪৫ থেকে ৫০ টাকা, রজনীগন্ধা ৪০ থেকে ৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বলে বিক্রেতারা জানান।

জায়নামাজে বাহারি নকশা
ঈদের সকালে নামাজে যাওয়ার অন্যতম অনুষঙ্গ জায়নামাজ। এসব জায়নামাজেও যুক্ত হয়েছে নকশা আর কারুকাজ। বিক্রেতারা বলছেন, বাজারে যেসব জায়নামাজ পাওয়া যায় তার বেশির ভাগই বিদেশে তৈরি। এবার পাকিস্তানে তৈরি কোকার জায়নামাজ ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা, শাহীন ৫০০ থেকে ৬৫০, ন্যাশনাল ৪৫০ থেকে ৬০০, তুরস্কের আইরিন ৫০০ থেকে ৬০০, কাটারে নেওয়াজ ৪৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া দেশে তৈরি গ্যাভার্ডিন কাপড়ের জায়নামাজগুলো বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১২০ টাকায়।

জরির কাজ করা তুরস্কের আইরিন জায়নামাজ ৭০০ থেকে ৯০০ টাকা এবং সিরিয়ার জায়নামাজের জন্য তিন হাজার টাকা পর্যন্ত দাম হাঁকছেন দোকানিরা। এ ছাড়া একসঙ্গে তিনজন নামাজ পড়া যায়, তুরস্কে তৈরি এমন আকৃতির জায়নামাজের দাম চাওয়া হচ্ছে পাঁচ হাজার টাকা।

কুষ্টিয়ার তৈরি জায়নামাজগুলো ১০০ থেকে ১৫০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে বলে জানালেন জায়নামাজ বিক্রেতা মো. ইয়াছিন। তবে বিদেশি জায়নামাজই বেশি বিক্রি হচ্ছে বলে জানালেন তিনি।

কাঠ-পাথরের তসবি
প্লাস্টিকের পাশাপাশি কাঠ ও পাথরের তৈরি বিভিন্ন ধরনের তসবি পাওয়া যাচ্ছে দোকানগুলোতে। আকার ও উপাদান ভেদে দামেও পার্থক্য রয়েছে।
রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেটে আকিক পাথরের তৈরি তসবি ৪০০ থেকে ১২০০ টাকা, জমরুদ ৩০০ থেকে ৬০০, সোলেমানি পাথরের তসবি ৩০ থেকে ১৫০, ক্রিস্টালের তসবি ৫০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া কাঠের তৈরি তসবি ৫০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বলে জানালেন দোকানিরা।
ঈদের আরেক অনুষঙ্গ সৌদি আরবের সুরমা প্রতি তোলা বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা দামে।

(ওএস/এস/জুলাই ১৬, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

২৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test