E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

কুয়াকাটা সৈকতে নামতে হচ্ছে সিঁড়ি বেয়ে !

২০১৪ আগস্ট ১৪ ১৬:০২:৪০
কুয়াকাটা সৈকতে নামতে হচ্ছে সিঁড়ি বেয়ে !

কলাপাড়া থেকে মিলন কর্মকার রাজু : চারিদিকে ধ্বংস স্তুপ। পূর্ব দিকের গোটা সৈকতে ছড়িয়ে ছিঁটিয়ে থাকা গাছের গুঁড়ি ও সৈকত ঘেষা নারিকেল ও ঝাউ বাগানের শতশত গাছ উপড়ে পড়ে আছে। আর পশ্চিম দিকের সৈকতে সাগরে ঢেউয়ের তোড়ে সৈকত ভাঙ্গনের নৃশংসতার ছাপ।

দেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটা সৈকতের বর্তমান চিত্র। কিন্তু প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মণ্ডিত এ সৈকতে তার পরও প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটক আসলেও তারা এখন পড়ছেন নতুন বিড়ম্বনায়। সৈকতের প্রাকৃতিক ধ্বংসযজ্ঞের ভয়াবহতা পর্যটকরা আগে দেখলেও সৈকতে নামতে না পারার বিড়ম্বনায় আগে পড়েন নি।
গতকাল বিকালে কুয়াকাটা সৈকতে গিয়ে দেখা যায় হাজার হাজার পর্যটক কুয়াকাটা সৈকতের ধ্বংসস্তুপের মধ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। কিন্তু সৈকতে নামতে হচ্ছে তাদের “সিঁড়ি” বেয়ে। গত দুই সপ্তাহ আগে সাগরের উত্তাল ঢেউয়ের তান্ডবে মূল সৈকত সৈকতে ওঠা-নামার প্রধান রাস্তা ভেঙ্গে যাওয়ায় সরাসরি সৈকতে ওঠা-নামা বন্ধ হয়ে যায়। জিড়ো পয়েন্টের রাস্তা থেকে প্রায় ১৫ ফুট নিচে মুল সৈকত। সাগরের প্রতিটি জোয়ার ভাটায় বালুর স্তর ধুইয়ে যাওয়ায় ওই সড়কে দাড়ানোই ঝুঁকি হয়ে পড়ে। তাই কুয়াকাটায় ভ্রমণে আসা পর্যটকদের সুবিধার জন্য স্থানীয় ব্যবসায়িরা এ সিঁড়ি তৈরি করেছেন। সিঁড়ির উপরের ধাপে কাঠের বক্স বসিয়ে নিচে সিমেন্টের খণ্ড বসিয়ে এ সিঁড়ি তৈরি করা হয়েছে। এ সিঁড়িই এখন কুয়াকাটায় ভ্রমণে আসা পর্যটকদের প্রধান আকর্ষণে পরিনত হয়েছে।
খুলনা থেকে সপরিবারে কুয়াকাটায় ভ্রমণে আসা ব্যবসায়ি মনজুরুল ইসলাম জানান, কুয়াকাটা সৈকতই বিশ্বের একমাত্র সৈকত যে সৈকতে সিঁড়ি বেয়ে নামতে হচ্ছে। তিনি জানান, কুয়াকাটার জিরো পয়েন্টে এসে এই দৃশ্য দেখে অবাক। প্রায় সাত বছর আগের দেখে যাওয়া কুয়াকাটাকে বর্তমান অবস্থার সাথে কিছুতেই মেলাতে পারছেন না। সৈকতের কোন উন্নয়ন না দেখে তিনি বিস্মিত।
ঢাকার আজিমপুর থেকে কুয়াকাটায় ভ্রমণে আসা সাহাদাত রনি ও মিথিলা রনি জানান, এ দৃশ্য সত্যিই ভয়াবহ। সাগরে যেভাবে সৈকত ভাঙ্গছে তাতে এখনই জরুরী সৈকত রক্ষা প্রকল্প গ্রহন করা উচিত। তারা জানান, দিনের আলোতে সৈকতে ভ্রমণ করা কিছুটা নিরাপদ হলেও রাতে এই রাস্তায় দাড়িয়ে সমুদ্র দেখতে হয়। আর এখন জোয়ারের সময় সৈকতে কোন ওয়াকিং জোন না থাকায় রাস্তা ও বাগানের মধ্যেই ঠাঁয় দাড়িয়ে থাকতে হচ্ছে।
কুয়াকাটার একাধিক ব্যবসায়ি জানান, তারা এই সিড়ি না করলে পর্যটকদের রাস্তায় দাড়িয়েই থাকতে হতো। তাছাড়া এটা হয়তো আগামী জোয়ারে ভাসিয়ে নিবে। তারপর আবার নতুন করে কারা এই সিঁড়ি বানাবে ?
কুয়াকাটায় ভ্রমণে আসা একাধিক পর্যটক জানান, তারা গাড়ি নিয়ে আসলেও সৈকতে নামতে পারছেন। ভাটার সময় পানি নেমে যাওয়ায় বাগানের মধ্যে দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে কিছু মোটরসাইকেল চালক সৈকতে নামলেও সৈকত ঘুরে দেখাতে এখন তারা নিচ্ছেন অতিরিক্ত ভাড়া। আর পূর্ব-পশ্চিমে পায়ে হেঁটে ঘুরে বেড়াতে চাইলে খুব সাবধানে হাঁটতে হয়। কেননা সৈকতের চারিদিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে আছে সাগরের তাণ্ডবে ভেঙ্গে যাওয়া গাছের গুঁড়ি। এতে পা আটকে প্রতিদিনই পর্যটকরা আহত হচ্ছেন। তাদের দাবি সৈকত রক্ষায় এখনই উদ্যেগ না নিলে গোটা কুয়াকাটাই চলে যাবে সাগরে।
পাউবোর কলাপাড়া অফিসের সহকারী প্রকেীশলী আবুল বাশার জানান, কুয়াকাটা সৈকত রক্ষার একটি পরিকল্পনা সরকারের আছে। এ প্রকল্পটি অনুমোদন হলে ভাঙ্গনের কবল থেকে কুয়াকাটার মূল সৈকত কে রক্ষা করা যাবে। ইতিমধ্যে সাগরের ঢেউয়ের তোড়ে ভাঙ্গন কবলিত মাঝিবাড়ি পয়েন্টে ব্লক ফেলে ভাঙ্গন ঠেকানোর উদ্যেগ নেয়া হয়েছে।
(এএস/আগস্ট ১৪, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

২৫ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test