E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ভেড়ামারায় অন্ধকারে ১৮ কমিউনিটি ক্লিনিক

২০১৪ আগস্ট ৩০ ১৪:৫০:৫২
ভেড়ামারায় অন্ধকারে ১৮ কমিউনিটি ক্লিনিক

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি : বিদ্যুৎ নেই। তাই একে একে ফেরত গেছে ফ্যান, টিউবলাইটস, লাইটসসহ প্রয়োজনীয় অনেক গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশ। বিদ্যুৎ সংযোগের বরাদ্ধকৃত প্রায় ২ লক্ষ টাকাও উত্তোলন করা হয়েছে দেড় বছর আগে।

বিদ্যুৎ সংযোগের নাম করে প্রতিটি কমিউনিটি ক্লিনিক কর্মকতাদের কাছ থেকেও হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে নগদ টাকা। তার পরেও মিলেনি বিদ্যুৎ সংযোগ। কবে নাগদ ক্লিনিকগুলোতে বিদ্যুৎ সংযোগ হবে তাও বলতে পারছেন না কর্মকর্তারা। ফলে এখনও অন্ধকারেই রয়েছে ক্লিনিকগুলো। এ চিত্র বিদ্যুৎ নেই কুষ্টিয়ার ভেড়ামারার ১৮ কমিউনিটি ক্লিনিকের।

ক্লিনিকের সিএইচসিপি’রা এবং হাসপাতালে স্বাস্থ্য পরিদর্শক বলেছেন, ভেড়ামারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের হেড ক্লার্ক সাবিনা ইয়াসমিন লাকি’র দূর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির কারনে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো এই অবস্থা।
২০১৩ সালের প্রথম দিকে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলার ১৮ কমিউনিটি ক্লিনিকের মধ্যে ১৩টি কমিউনিটি ক্লিনিকে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার নির্দেশনা আসে।

প্রতিটি কমিউনিটি ক্লিনিকের অনুকুলে বরাদ্ধ দেওয়া হয় ১৫ হাজার ২’শ ৫০ টাকা করে প্রায় ২ লক্ষ টাকা। ভেড়ামারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের হেড ক্লার্ক সাবিনা ইয়াসমিন লাকি এবং তার স্বামী মুঞ্জুর আলম নিয়ম বর্হিভূত ভাবে বিদ্যুৎ সংযোগের কাজটি বাস্তবায়ন করতে নিজেরাই লেগে পড়েন। তারা বিদ্যুৎ সংযোগের নিয়ম নীতি’র তোয়াক্কা না করে অত্যান্ত নি¤œমানের তার, সুইচ বোর্ড ক্রয় করে দায়সারা গোছের ওয়ারিং কাজ সর্ম্পন্ন করে পুরো টাকাই হাতিয়ে নেন। মানসম্মত ওয়ারিং না হওয়ায় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিও বিদ্যুৎ সংযোগ না দিয়ে মান সম্মত এবং পল্লী বিদ্যুৎর রেজিষ্টার্ড লাইনম্যান দিয়ে ওয়ারিং করার নির্দেশ দেয়। এরপর থেকেই মূলত থেমে গেছে কমিউনিটি ক্লিনিকের বিদ্যুৎ সংযোগ।

জবাবদিহিতা না থাকা এবং ওই হেড ক্লার্ক প্রভাবশালী হওয়ায় কোন কর্মকর্তাই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেইনি। এ ভাবেই চলছে। এখানেই থেমে থাকেনি হেড ক্লার্ক লাকি। তিনি নতুন মিশন শুরু করে প্রতিটি কমিউনিট ক্লিনিকের কর্মকর্তার কাছ থেকে বিদ্যুতের রড এবং তার কেনার জন্য ৭২০টাকা করে আদায় করেন। এ দিকে বিদ্যুৎ না থাকায় ইতোমধ্যে ফেরত গেছে, প্রতিটি ক্লিনিকের জন্য বরাদ্ধকৃত ২টি করে ফ্যান, ১টি টিউবলাইটস, ৪টি লাইটসহ গুরুত্বপূর্ন অনেক যন্ত্রাংশ।


নওদা ক্ষেমিরদিয়াড় কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি আবুল মুঞ্জুর জানিয়েছেন, হেড ক্লার্ক সাবিনা ইয়াসমিন লাকি তার স্বামী মুঞ্জুর আলমকে দিয়ে কমিউনিটি ক্লিনিকে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার কাজ করিয়েছে। অত্যান্ত নি¤œমানের তার, স্ইুচ, বোর্ড ব্যাবহার করে নামকাওয়াস্ত্রে ওয়ারিং করে। অদক্ষ লোক দিয়ে ওয়ারিং করায় লাইনে ফল্ট ছিল। পরে পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের লাইনম্যানরা এসে দেখতে পান নিম্নমানের এবং অত্যান্ত বাজে ভাবে ওয়ারিং করা হয়েছে। ওই অবস্থায় সংযোগ দেওয়া হলে কমিউনিটি ক্লিনিকে ভয়াবহ বিপদ ছাড়াও টান্সফির্মার পর্যন্ত পুড়ে যেতে পারতো। তিনি জানান, ১৮ টি কিমিউনিটি ক্লিনিকের মধ্যে ১৩টি কিমিউনিটি ক্লিনিকেই একই অবস্থা করে রেখেছিল।

নাম প্রকাশ না করা শর্তে কয়েকজন সিএইচসিপি’রা বলেছেন, হেড ক্লাক সাবিনা ইয়াসমিন লাকির দূনীতি এবং স্বজনপ্রীতির কাছে সবাই অসহায়। টিএইচও সহ সব ডাক্তার কর্মকার্তা কর্মচারীরা তার ভয়ে তটস্থ। টাকা ছাড়া কিছুই বঝে না তিনি। অতি লোভের কারনেই বিদ্যুৎ সংযোগের মতো গুরুত্বপূর্ন কাজ তিনি নিজে এবং তার অদক্ষ স্বামীকে দিয়ে করিয়েছেন। তার কারনেই কমিউনিটি ক্লিনিকের চিকিৎসা ব্যবস্থা, সিএইচসিপি দের মনোবল ভেঙ্গে দেওয়া এবং ক্লিনিকের উন্নয়ন থমকে আছে।


কমিউনিটি ক্লিনিকের ইনচার্জ এবং ভেড়ামারা ৫০ শয্যা বিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে’র স্বাস্থ্য পরিদর্শক হাবিবুর রহমান জানিয়েছেন, প্রায় ২ বছর ধরে বিদ্যুৎ সংযোগ পাচ্ছে না ১৩ কমিউনিটি ক্লিনিক। অথচ অনেক আগেই সমুদয় টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। হেড ক্লার্ক এবং তার স্বামী নিয়ম বর্হিভূত ভাবে এই কাজ করেছে। ফলে ক্লিনিকগুলোর উন্নয়ন কাজ এবং কর্মকর্তাদের সেবা দেওয়ার মানসিকতা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তিনি দ্রুত বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার দাবি জানান।


হেড ক্লার্ক সাবিনা ইয়াসমিন লাকি তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ’র সত্যতা স্বীকার করে বলেছেন, এই কাজ ব্যাক্তিগত। এটা করতে কোন ঠিকাদার লাগে না। আমরা নিজেরাই বিদ্যুৎ সংযোগের কাজ টি করেছিলাম। প্রথম দিকে ঝামেলা হয়েছিল কিন্তু বর্তমানে কোন সমস্যা নেই। খুব দ্রুত সংযোগ পাবে ক্লিনিকগুলো। সিএইচসিপিদের কাজ থেকে ব্যাক্তিগত ভাবে টাকা নেওয়া হয়েছিল কিন্তু তা ফেরত দেওয়া হয়েছে।


উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার ডা. রঞ্জক কুমার দত্ত জানিয়েছেন, আমি টিএইচ ও পদে নতুন। সব কাজই করে হেড ক্লার্ক। সিএইচসিপিরা অভিযোগ দেওয়ার পর আমি দ্রুত বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার জন্য হেড ক্লার্ক কে নির্দেশ দিয়েছি। তবে অভিযাগ প্রমানিত হলে হেড ক্লার্কের বিরুদ্ধে নেওয়া হবে।

(কেকে/এএস/আগস্ট ৩০, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

২৫ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test