E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বিলুপ্তির পথে নওগাঁর মৃৎ শিল্প, কুমোরদের বড়ই দুর্দিন

২০১৪ সেপ্টেম্বর ১০ ১৭:৩৫:৪০
বিলুপ্তির পথে নওগাঁর মৃৎ শিল্প, কুমোরদের বড়ই দুর্দিন

নওগাঁ প্রতিনিধি : নওগাঁ অঞ্চলে মৃৎ শিল্প প্রায় বিলুপ্তির পথে। আগের যুগে মানুষ নিত্য প্রয়োজনীয় ব্যবহারিক পন্য হিসাবে মৃৎ শিল্পের তৈরি থালা, বাসন, হাঁড়ি, পাতিল, ঘটি-বাটি, বদনা ইত্যাদি ব্যাপক ভাবে ব্যবহার করতেন। এককালে যে মৃৎ শিল্পের তৈজষপত্র অভিজাত পরিবারের নিত্যদিনের ব্যবহার্য  ছিল।

বর্তমানে দেশে কম দামে এ্যালুমোনিয়াম , মেলামাইন, প্লাষ্টিক সহ বিভিন্ন মেটাল সামগ্রীর দাপটে মৃৎ শিল্পের তৈরি সামগ্রীর চাহিদা ব্যাপক হারে হ্রাস পেয়েছে। জীবন-জীবিকার তাগিদে কঠোর ভাবে পরিশ্রম করে স্থানীয় ভাবে মৃৎ শিল্পের ওপর নির্ভশীল কয়েকটি পরিবার এখনও শুধু ঐতিহ্য ধরে রেখেছে। বর্তমানে নওগাঁ অঞ্চলে মৃৎ শিল্প প্রায় বিলুপ্তির পথে। তাই কুমোরদের আজ বড়ই দুর্দিন।

স্থানীয় ভাবে মৃৎ শিল্পিদের কুমোর বলা হয়। স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন কুমোরদের পরিবারগুলো লুন্ঠনের শিকার হয়ে ভারতে পাড়ি জমায়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর রিক্ত হাতে মৃৎ শিল্পিরা পৈতিক ভিটে মাটিতে ফিরে আসে। ফিরে এসে তারা এই মৃৎ শিল্পকে পুনঃ স্থাপনের চেষ্টা চালিয়ে রুজি রোজগারের সংগ্রাম শুরু করে। কিন্তু প্রয়োজনীয় পুঁজির অভাবে এবং বালের বিবর্তনে অনেক কুমোররা শিল্প স্থাপন করতে না পেরে পেশা বদলিয়ে নানা পেশায় জড়িয়ে পড়ছে। আগে কুমোররা যেখান- সেখান থেকে মাটি সংগ্রহ করে তারা তৈজষপত্র তৈরী করতো। কিন্তু এখন কুমারদেরকে মাটি কিনে নিতে হয়। কুমোররা অসম্ভব শৈল্পিক দক্ষতা ও মনের মাঝে লুকায়িত মাধুর্য দিয়ে চোখ ধাঁধানো মন কাড়ানো কারুকার্য তৈরি করে হাঁড়ি-পাতিল, কলস, বদনা, ফুলের টব, ফুলদানী, জীবজন্তু, পাখির অবয়ব সাজ-সজ্জা অলংকারসহ বাংলার চিরাচরিত সব নিদর্শন তৈরি করে থাকেন। যা নজর করার মত। মাটির তৈরী সামগ্রীর কদর না থাকায় ঝেলার অধিকাংশ এলাকার কুমোররা তাদের জাত পেশা ছেড়ে অন্য পেশা গ্রহন করেছে।


নওগাঁর ধামইরহাট কুমোর পাড়ার মৃৎ শিল্পী শ্রী রামায়ন পালের সঙ্গে কথা হলো। ৬৩ বছর বয়স্ক প্রবীন রামায়ন পাল এক সময় রাজশাহী বেতারে তবলা বাদক ছিলেন। স্বগীয় পিতা শিউ প্রসাদ পালের মৃত্যুর পর তিন পুত্র, দুই কন্যার জনক রামায়ন পাল সব কিছু ছেড়ে পৈত্রিক ভিটাতে এখনও মাথার ঘাম পায়ে ফেলে নিরলস ভাবে বাপ-দাদার আদি পেশা আঁকরে ধরে আছেন। অতীতে এই পেশায় ভালই লাভ হত। কিন্তু বর্তমানে এর ওপর নির্ভর করে তিনবেলা ভাল ভাবে ডাল- ভাত জোটেনা। এখনও অনাহারে-অর্ধাহারে অতি কষ্টে দিন কাটতে হয় তাদের। আধুনিকতার প্রভাবে ছেলেরা এ পেশা ছেড়ে অন্য পেশা ও ব্যবসায় যোগ দিয়েছে। তিনি বলেন “বংশগত ভাবে এ পেশা ধরে আছি। আমার মত হাতে গোনা কয়েকজন পালের (কুমোর) মৃত্যু হলে এই শিল্প ধামইরহাটেই শুধু নয়, গোটা নওগাঁ জেলা থেকেই নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।” তিনি ক্ষোভের সঙ্গে জানান, অতীতে তারা তাদের শিল্প সম্ভার নিয়ে প্রতিটি উৎসব ও গ্রাম্য মেলায় ষ্টল সাজিয়ে বিশেষ ভূমিকা পালন করে এসেছেন।

শিশুরা তাদের পছন্দের মাটির তৈরী খেলনা, হাতি, বক, বাঘ, হরিণ, পুতুল ইত্যাদি কিনতে ছুটে আসতো। কিন্তু বর্তমানে তা হচ্ছে না। এই শিল্পের তৈরি পণ্যের চাহিদা নাই বললেই চলে। আর এই কারণে এই শিল্প দিনের পর দিন বিলূপ্ত হতে চলেছে। রামায়ন পাল জানান, মাটি কিনে দৈহিক পরিশ্রম করে কাঁধে নিয়ে গ্রামের পর গ্রাম ঘুরে ঘুরে বিক্রি করতে হয়। কষ্টের ও খরচের অনুপাতে তেমন লাভ হয়না। তাই ঐতিহ্যবাহী এই মৃৎ শিল্পের বিকাশ ও মান উন্নয়নে সরকারিভাবে আর্থিক অনুদান বা স্বল্প সুদে ঋণ প্রদান করলে বাংলার এই ঐতিহ্যকে ধরে রাখা সম্ভব।

(বিএম/এএস/সেপ্টেম্বর ১০, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

০৯ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test