E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বাগেরহাটে ভেড়ীবাঁধের অভাবে দেড় লাখ মানুষ দুর্ভোগে

২০১৪ সেপ্টেম্বর ১৫ ১৮:৪৭:১৩
বাগেরহাটে ভেড়ীবাঁধের অভাবে দেড় লাখ মানুষ দুর্ভোগে

বাগেরহাট প্রতিনিধি : জন্মের পর থেকেই জীবনের ঝুকি নিয়ে ট্রলার ও লঞ্চ যোগে নিজের জেলা সদরে ও উপজেলা সদরে চলাচল করছি। আমাদের এলাকায় রাস্তা-ঘাট না থাকায় এভাবেই ঝুকির মধ্যে কেটে গেলো ৫০টি বছর। তবে আশা ছিল হয়তো বা মৃত্যুর আগে রাস্তা-ঘাট ও ভেড়ীবাঁধ দেখে যেতে পারবো কিনা জানি না। হাফ ছেড়ে এই কথা গুলো বললেন মোড়েলগঞ্জ উপজেলার বহরবুনিয়া ইউনিয়নের সমদ্দার খালী গ্রামের ষাটর্ধো জালাল শেখ। তার মতো অনেকেই ওই এলাকার দুর্ভোগ ও দুর্দশার কথা জানালেন এই প্রতিবেদককে।

বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জ উপজেলার কেওড়া নদীর দু’প্রান্তে ভেড়ীবাঁধ ও চলাচলের উপযোগি রাস্তাঘাট না থাকায় প্রায় দেড় লাখ জনসাধারণ স্বাধীনতার ৪ দশক ধরে চরম দূর্ভোগের মধ্যে জীবন-জাপন করছে। এছাড়া এই নদীতে স্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে দু’পাড়ের এলাকাবাসির ঘরবাড়ি তলিয়ে যায়। নদী সংলগ্ন ভেড়িবাঁধ না থাকায় চরম দূর্ভোগে পড়তে হয় এলাকাবাসীর। আর এসব এলাকাবাসি জীবনের ঝুকি নিয়ে নৌকা ও ট্রলার যোগে উপজেলা ও জেলা সদর বাগেরহাটে আসতে হয়। স্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে দু’প্রান্তে বসবাসকারী এলাবাসির ঘরবাড়িসহ জীবন-জীবিকার ফসলি জমি, চিংড়ি ঘের, পুকুর নালা তলিয়ে যায়। এঅবস্থায় সংশ্লিষ্ট এলাকায় ভেড়িবাঁধ ও রাস্তাঘাটের দাবি জানিয়েছেন এলাকার সাধারণ মানুষ।

এলাকবাসি জানায়, বাগেরহাট জেলার মোড়েলগঞ্জ উপজেলার পঞ্চকরন, পুটিখালী, বহরবুনিয়া ও জিঊধারা ইউনিয়ন ৪টি রাক্ষুসে কেওড়া ও পানগুছি নদীর দু’প্রান্তে প্রায় ২০ কিলোমিটার ভেড়িবাঁধ ও অভ্যান্তরে তেমন রাস্তাঘাট না থাকায় ৪ দশক ধরে দেড়’লাখ এলাকাবাসিকে পড়তে হচ্ছে চরম দুর্ভোগে। স্বাধীনতার পর এই জনপদের দু’জন এমপি শেখ আব্দুল আজিজ ও ডা: মোজাম্মেল হোসেন সরকারের একাধিক মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রী থাকলেও এলাকাবাসি তাদের কাংখিত কাচাঁ সড়কটিও পায়নি।

এসব এলাকার মানুষের এখন একমাত্র যাতায়াত ব্যবস্থা নদী পথের নৌকা ও ট্রলার। স্থল পথে তেমন রাস্তাঘাট না থাকায় জীবনের ঝুকি নিয়ে উপজেলা ও জেলা সদরে সব বয়সই মানুষদের ঝড় বন্যা উপেক্ষা নৌ পথে চলাচল করতে হয়। তারপরও ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষায় থাকতে হয় তাদের। কেওড়া ও পানগুছি এই নদীর এপাড়-ওপাড়ে কোন ভেড়িবাধ না থাকায় ভাঙ্গনের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে না গ্রামগঞ্জের হাট-বাজারের দোকানপাট শতশত একর ফসলী জমি। এসব এলাকার বসাবসকারি জনসাধারন পড়ছে চরম দুর্ভোগে। ফলে প্রতিনিয়ত জোয়ার ভাটার লবন পানিতে তাদের দূর্ভোগের যেন অন্ত নেই । এলাকাবাসির একটাই দাবি আর যাতে ঝুকি নিয়ে নৌ-পথে চলাচল করতে না হয়। একারণে ভেড়িবাধ ও রাস্তাঘাট দ্রুত নির্মানের দাবি জানান তারা।


পঞ্চকরন গ্রামের ফেরদাউস মুন্সি ও মোতালেব হোসেন জানান, রাস্তা-ঘাটের অভাবে কর্মক্ষেত্রে এবং অফিস আদালতে সঠিক সময় পৌছাতে পারেন না এলাকার অধিকাংশ মানুষ। পুরো বর্ষাকালটাই মানবতার জীবন-যাপন করতে হয় এ অঞ্চলের মানুষের। সামান্য বর্ষা ও জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পেলে আরো দুর্ভোগ বাড়িয়ে দেয়। তিনি আরো বলেন রাস্তা-ঘাট না থাকায় এই এলাকার চিংড়ি ঘেরর ভেড়ীবাঁধ দিয়ে চলাচল করছে জনসাধারণ।

বহরবুনিয়া গ্রামের কালাম মোল্লা বলেন, এক সময়ের পানগুছি ও কেওড়া নদী দিয়ে বিভাগীয় শহর ও জেলা সদরে নৌ পথে চলাচলের মাধ্যম ছিল বড় বড় লঞ্চ ও স্টীমার। প্রায় ১২ বছর ধরে এই লঞ্চ ও স্টীমার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এলাকার সাধারন মানুষদের চলাচল করতে হয় জীবনের ঝুকি নিয়ে ছোট ছোট ট্রলার যোগে। অনেক সময় র্দূঘটনার শিকার হয়ে জীবন হারাতে হয় অনেকের। মাত্র ১০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে উপজেলা সদরে যেতে সময় লাগে ৩/৪ ঘন্টা। তাও আবার নির্দিষ্ট সময়ের ছেড়ে যাওয়া ট্রলারের অপেক্ষায়। একবার ট্রলার না পাওয়া গেলে ওইদিনের কাজ আর করা সম্ভব হয় না। এভাবে পথে পথে আরো অনেক বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়।

জিউধরা গ্রামের পরিতোষ, হাফিজুর রহমানসহ অনেকেই বলেন, শুস্ক মৌশুমে পায়ে হেটে যাতায়াত করতে হয়। তবে এসব এলাকার নদী ও খাল গুলোর ভাংঙ্গা-চুরা পুল, সাকো দিয়ে ২/৩ ঘন্টা পায়ে হেটে উপজেলা সদরে যেতে হয়। তারা অবকাঠামো উন্নয়নসহ রাস্তাঘাট ও নদী সংলগ্ন ভেড়ী বাঁধের দাবি জানান। জীবনের ঝুকি নিয়ে একমাত্র যাতায়াত নৌ পথে চলাচল করতে হয়। আমাদের এলাকায় ভেড়িবাধ ও তেমন রাস্তাঘাট না থাকায় জোয়ারে পানি জনপদে ঢুকে পড়ায় নানা দূর্ভোগে পড়তে হয়।

ওই এলাকায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চাকুরি জীবিরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এখানে চাকুরী করতে এসে নানা বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। সঠিক সময় লঞ্চ না আসায় ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করতে হয় লঞ্চ ও ট্রলার ঘাটে। অনেক সময় বিকল্প পথ না থাকায় অনেকের বাড়িতে আশ্রায় নিতে হচ্ছে।

গৃহবধু সুমাইয়া বলেন, ২০ বছর আগে মোড়েগঞ্জ উপজেলার ফুলহাতা গ্রামের খালা বাড়ী বেড়াতে এসেছিলাম। সেই সময়ে আসার পথে ট্রলারে ডুবে গিয়েছিলাম। বিয়ের পর আবার এই প্রথম জীবনের ঝুকি নিয়ে ট্রলারে বেড়াতে যাচ্ছি।

ঢাকায় চাকুরীজীবি হুমাউন আহম্মেদ বলেন, ‘ঢাকা থেকে বাগেরহাটে সাড়ে ৪ ঘন্টায় পৌছাবার পর গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার জন্য ট্রলারের অপেক্ষায় ৩ ঘন্টা বসে থাকতে হয়। তারপরও সঠিক সময় বাড়ীতে পৌছানো সম্ভব হয় না। এযেন এক মরন দূর্ভোগের মধ্যে পড়েছি’।

স্থানীয় সাংসদ সদস্য আলহাজ্ব ডা. মোজাম্মেল হোসেন ভেড়িবাঁধ না থাকার কথা স্বীকার করে বলেন,‘ পরিবেশ পরিবর্তনের ফলে আমাদের দক্ষিনাঞ্চলের এর ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। জোয়ারের পানি ঢুকে এলাকার ক্ষতি হচ্ছে। ভেড়িবাধের বিকল্প নেই। তাই প্রকল্প বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াধীন। আমাদের এই বর্তমান সরকারের আমলে ভেড়িবাধের কাজ সম্পন্ন করা হবে। কাজ সমাপ্ত হলে নৌ পথে জীবনের ঝুকি নিয়ে জনগণকে চলাচল করতে হবে না’।

(জেএইচবি/এএস/সেপ্টেম্বর ১৫, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

১৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test