E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

মান্দায় এমপিওভূক্ত হয়নি ৫৩ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বন্ধ হয়ে গেছে ৮টি

২০১৪ সেপ্টেম্বর ২৩ ১৮:২২:৪৯
মান্দায় এমপিওভূক্ত হয়নি ৫৩ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বন্ধ হয়ে গেছে ৮টি

নওগাঁ প্রতিনিধি : দীর্ঘদিন পেরিয়ে গেলেও নওগাঁর মান্দায় এমপিওভূক্ত হয়নি উপজেলার ৫৩ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বেতন-ভাতার অভাবে এসব প্রতিষ্ঠানের ৮ শতাধিক শিক্ষক-কর্মচারি মানবেতর জীবন যাপন করছেন। অর্থাভাবে ইতোমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে ৮টি প্রতিষ্ঠানের পাঠদান কার্যক্রম। আরো ৩০ প্রতিষ্ঠান বন্ধ হবার উপক্রম হয়েছে বলে জানা গেছে।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সুত্রে জানা গেছে, উপজেলার ৬১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিনেও এমপিওভূক্ত হয়নি। জুনিয়র শাখা এমপিওভূক্ত হলেও মাধ্যমিক স্তর আজো বঞ্চিত রয়েছে এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ১৫টি। এগুলো হচ্ছে চককামদেব, মৈনম, ছোটমুল্লুক, সতীহাট জিএস, জোতবাজার, লালপুকুরিয়া, মহানগর ও মুক্তিযোদ্ধা মেমোরিয়াল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এবং নবগ্রাম, শিশইল, চকরঘুনাথ, চকউমেদ, মটগাড়ী, পাঁজরভাঙ্গা ও কাঁশোপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়। এছাড়া সাহাপুর এএম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও এনায়েতপুর আইডিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়ের জুনিয়র কিংবা মাধ্যমিক কোনো শাখা আজও এমপিওভূক্ত হয় নি।

উপজেলার ৯টি প্রতিষ্ঠানের স্কুল শাখা এমপিওভূক্ত থাকলেও কলেজ শাখা বঞ্চিত রয়েছে। এগুলো হচ্ছে ইনডেক্স টেকনিক্যাল এন্ড বিএম কলেজ সংযুক্ত সাধারণ শাখা, চকউলী, কাঞ্চন বিএল, মান্দা এসসি পাইলট, সতীহাট কেটি, ভারশোঁ, ঘোনা আদর্শ, দক্ষিণ মৈনম এবং কালিকাপুর চককালিকাপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ। এছাড়া এমপিও বঞ্চিত রয়েছে জোতবাজার মহিলা কলেজ, চৌবাড়িয়া হাট, বালুবাজার শফিউদ্দিন মোল্লা, পূর্বমান্দা আইডিয়াল, মহানগর ও চককামদেব আদর্শ মহাবিদ্যালয়।

অপরদিকে গাইহানা কৃষ্ণপুর মহিলা দাখিল মাদ্রাসা, হলুদঘর দাখিল মাদ্রাসা, চককানু দারুস সালাম মহিলা দাখিল মাদ্রাসা, এলেঙ্গা ইসলামীয়া, তুড়–কগ্রাম ইসলামীয়া, নিমবাড়িয়া, গোয়ালমান্দা খোড়ারঘাট, এনায়েতপুর জোয়ারদারপাড়া, কুড়িয়াপাড়া, চকমানিক চকশ্রীকৃষ্ণ ও গাড়ীক্ষেত্র দাখিল মাদ্রাসা অর্থাভাবে চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। টেকনিক্যাল এন্ড বিএম কলেজের অবস্থাও অত্যন্ত নাজুক। এগুলো হচ্ছে চককামদেব টেকনিক্যাল এন্ড বিএম কলেজ, ফতেপুর টেকনিক্যাল এন্ড বিএম কলেজ, কাঞ্চন মহিলা টেকনিক্যাল এন্ড বিএম কলেজ, আলহেরা কৃষি কলেজ, চককামদেব টেকনিক্যাল (ভোক) স্কুল, নুরুল্লাবাদ জোতবাজার বিএম কলেজ, নুরুল্লাবাদ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড বিএম কলেজ এবং জেড এন্ড জেড ট্রেনিং ইন্সটিটিউট। উপজেলা সদরে অবস্থিত রেবা আখতার আলিম মাদ্রাসা দাখিল পর্যন্ত এমপিওভূক্ত হলেও ১২ বছর ধরে বঞ্চিত রয়েছে আলিম শাখার শিক্ষক-কর্মচারিরা।


সংশ্লিষ্ট সুত্র জানায়, এদের মধ্যে অন্তত: ৩০টি প্রতিষ্ঠানের অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। অচিরে এসব প্রতিষ্ঠান এমপিওভূক্ত না হলে অর্থাভাবে যেকোনো সময় এগুলোর কার্যক্রম বন্ধ হবার আশঙ্কা রয়েছে। সুত্রটি আরো জানায়, বেতনভাতা না থাকায় ইতোমধ্যে ৮টি প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এগুলো হচ্ছে আন্ধারিয়াপাড়া নিম্ন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়, তালপাতিলা নিম্ন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়, শ্যামপুর নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, বৈলশিং নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, চকরঘুনাথ দাখিল মাদ্রাসা, গোবিন্দপুর দাখিল মাদ্রাসা, পলাশবাড়ী দাখিল মাদ্রাসা ও দক্ষিণ মৈনম দাখিল মাদ্রাসা।

এনায়েতপুর আইডিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এমদাদুল হক জানান, স্থানীয় শিক্ষানুরাগি ব্যক্তিদের সহায়তায় ১৯৯৭ সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করা হয়। ২০০০ সালে পাঠদানের অনুমতি ও ২০০৫ সালে একাডেমিক স্বীকৃতি লাভ করে প্রতিষ্ঠানটি। বর্তমানে দুই শতাধিক শিক্ষার্থী ওই প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করছে। ২০১২ সালে এ প্রতিষ্ঠান থেকে জেএসসি পরীক্ষা ৩০জন শিক্ষার্থী অংশ নিয়ে ২৯ জন কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়। এর মধ্যে একজন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ লাভ করে।

২০১৩ সালে জেএসসি পরীক্ষায় ৫৫ জন অংশ নিয়ে ৫৪ জন উত্তীর্ণ হয়েছে। প্রধান শিক্ষক আরো জানান, বর্তমানে এ প্রতিষ্ঠানে ১৪ জন শিক্ষক-কর্মচারি কর্মরত আছেন। দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে বেতনভাতা ছাড়াই শিক্ষার্থীদের নিয়মিত পাঠদান দিয়ে আসছেন তারা। অচিরে এমপিওভূক্ত না হলে প্রতিষ্ঠানটি চালানো দুরুহ হয়ে পড়বে বলে তিনি দাবি করেন।

সাহাপুকুরিয়া এএম বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহজাহান আলী জানান, ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠা ও ২০০৬ সালে একাডেমিক স্বীকৃতি লাভ করলেও আজো এমপিওভূক্ত হয়নি। এতে প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ১২ জন শিক্ষক-কর্মচারি নিয়ে দুর্মূল্যের বাজারে তাদের চরম মানবেতন জীবন যাপন করতে হচ্ছে। ২০১৪ সালে এসএসসি পরীক্ষায় প্রতিষ্ঠানটি শতভাগ পাশের গৌরব অর্জন করে।

ইনডেক্স টেকনিক্যাল এন্ড বিএম কলেজ অধ্যক্ষ মোজাফফর হোসেন জানান, উপজেলা সদরে অবস্থিত একমাত্র বিএম কলেজ এটি। এর সঙ্গে সাধারন শাখা সংযুক্ত করা হয়েছে। ২০০৪ সালে এটি স্থাপিত হবার পর থেকে পাবলিক পরীক্ষার কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ২০০৯ সালে একাডেমিক স্বীকৃতির পর থেকে নিয়মিতভাবে এইচএসসি (বিএম) ও এইচএসসি (সাধারণ) পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন এ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। বর্তমানে ৩৯ জন শিক্ষক-কর্মচারি দিয়ে প্রায় ৫শ’ জন শিক্ষার্থীর পাঠদান চলছে। এমপিওভূক্ত না হওয়ায় প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারিরা মানবেতর জীবন যাপন করছে।

চককামদেব টেকনিকেল এন্ড বিএম কলেজ অধ্যক্ষ মাসুদ রানা জানান, এ প্রতিষ্ঠানটি ২০০১ সালে প্রতিষ্ঠা ও ২০০৪ সালে একাডেমিক স্বীকৃতি লাভ করে। ২০০৬ সাল থেকে নিয়মিতভাবে এইচএসসি (বিএম) পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে এ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। ২০১৪ সালের পরীক্ষায় ৪৫ জন অংশ নিয়ে ৪৪ জন পাশ করে। বেতনভাতা না পাওয়ায় ১৫জন শিক্ষক-কর্মচারির দিন কাটচ্ছে অতি কষ্টে।

(বিএম/এএস/সেপ্টেম্বর ২৩, ২০১৪)


পাঠকের মতামত:

১০ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test