E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ভালো নেই কিশোরগঞ্জের গুণী শিল্পী অমর চন্দ্র শীল

২০১৪ সেপ্টেম্বর ২৪ ১৭:১৫:৩২
ভালো নেই কিশোরগঞ্জের গুণী শিল্পী অমর চন্দ্র শীল

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি : ‘আমার মরমীয়া বন্ধুরে,আমার দরদীয়া বন্ধুরে, আমার দয়াল বন্ধুরে, আর কত কান্দাবে আমারে’ গানের সুরে সুরে কথাগুলো বলছিলেন ষাট ও সত্তর দশকের শিল্পী অমর চন্দ্র শীল। তিনি বলেন, জীবনে কত গান গাইলাম, শিখাইলাম। কোন স্বীকৃতি পেলাম না। জানিনা জীবনের পড়ন্ত বেলায় এসে তা পাব কিনা। আমি প্রতিষ্ঠিত না হলেও আমার ছাত্ররা সংস্কৃতি অঙ্গনে প্রতিষ্ঠিত এতেই আমি খুশি। এ ভাবেই আক্ষেপ করে বলছিলেন, ষাট ও সত্তর দশকের শ্রেষ্ঠ শিল্পী কিশোরগঞ্জের শিল্পী সমাজের উস্তাদ বলে খ্যাত অমর চন্দ্রশীল।

কিশোরগঞ্জ জেলা সদরের যশোদল ইউনিয়নের বীরদাম পাড়ায় অমর চন্দ্র শীলের নিজ বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে তার সীমাহীন দুঃখ, কষ্টের বাস্তব চিত্র। তার দু’পায়ে পানি এসে ফুলে গেছে। স্পষ্ট করে কথাবার্তাও বলতে পারছেন না, কানেও বেশি শোনেন না। বিছানায় নিথর হয়ে শুয়ে আছেন। শারিরিকভাবে কিছুটা ভেঙ্গেও পড়েছেন। সাংবাদিক এসেছে শুনে বিড়বিড় করে অকপটে জীবনের ফেলে আসা অতীতের স্মৃতি চারণ করলেন এ প্রতিবেদকের কাছে খুবই করুণভাবে।

তিনি বলেন, আমি গান গাওয়া শুরু করেছি সেই বৃটিশ আমল থেকেই। আমি পূর্ব পাকিস্তান ও বাংলাদেশের বিভিন্ন গাও গেরামে ঘুরে ঘুরে গান গেয়ে বেড়িয়েছি। ১৯৭৩ সালে পল্লীগীতি গানের শিল্পী হিসাবে বাংলাদেশ বেতারে তালিকাভূক্তি হই। বেতার ও টিভিতে অসংখ্য গান গেয়েছি। মঞ্চে আর গান গাইতে পারি না। এখন নিজের জীবনের গান গাই।

ওস্তাদ অমর চন্দ্র শীলের জন্ম ১৯৩১ সালের অক্টোবর মাসে। তার পিতা জনাথ শীল, দাদা রানা শীল, মাতা শওদা রানী শীল। ১৯৩৬ সালে যশোদলপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেন। ১৯৪১ সালে বীরদাম পাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে কিছুকাল পড়াশোনা করেন। ১৯৪২ সালে কোলকাতার শান্তি নিকেতনে উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতে তালিম নিয়ে গানের উপর দক্ষতা অর্জন করেন। ১৯৫০ সালে বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনে গানে গানে বিরল ভূমিকা রাখেন। তার গানের ওস্তাদ ছিলেন, বিখ্যাত মনসাগীতি শিল্পী অখিল ঠাকুর। সরাসরি তার শীষ্যত্ব লাভ করেছিলেন। তিনি নিজের লেখা গানই গাইতেন বেশি। সেই ১৯৫৬ সাল থেকে গান লেখা শুরু করেছিলেন যা এখনও অব্যাহত রেখেছেন। ইতোমধ্যে তাঁর লেখা একটি গানের বই বেড়িয়েছে। অনেক গানের পান্ডুলিপি অপ্রকাশিত রয়েছে। তিনি মুজিব পরদেশী শিল্পী হিসেবেও পরিচিত। মুজিব পরদেশী গানের ৩জন শিল্পী কানাই লাল শীল, রমেশ শীল ও অমর শীল।

এরমধ্যে তিনি দ্বিতীয় স্থানে ছিলেন। পারিবারিক জীবনে তিনি পাকুন্দিয়া উপজেলার মঠখোলার রায় চরণ শীলের মেয়ে মিলন বালা শীলের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন। তার দুই ছেলে ভজন চন্দ্র শীল ও সুজন চন্দ্র শীল ও মেয়ে মায়া রাণী শীল। তিনি নিজেই শুধু শিল্পী নন। তিনি অসংখ্য গানের শিষ্য গড়ে তুলেছেন। এর মধ্যে প্রয়াত শিল্পী বিপুল ভট্টাচার্য, বেতার ও টিভি শিল্পী আবুল হাশেম, উমা শাহা, গৌরী গীতা মিলু, সুমন আহমেদ রঞ্জন, মুজিবুর রহমান হিরু, দিলরাজ বেগম পুস্প, সুকরিতা বণিক, অ্যাডভোকেট নবী হোসেন, জসিম উদ্দীন হিরো, মাধবী শীল উল্লেখযোগ্য।

তিনি বলেন, গানের ছাত্র শিল্পীদের মধ্যে প্রয়াত বিপুল ভট্টাচার্য আমাকে পীড়া দিয়েছে। সুশীল বাবু আমাকে বলেছিলেন, দাদা বিপুলকে একটু মানুষ করে দেন। তাই আমি গ্রাম থেকে গিয়ে তাদের শহরের বাসায় গান শিখাতাম। শুধু তাই নয় যশোদলের ভট্টাচার্য পাড়ার উপেন্দ্র নাথকে নির্দেশনা দিয়েছিলাম বিপুলকে সহযোগিতা করতে। ফলে বিপুল গানে ও তবলায় পারদর্শী হয়ে উঠেেিছলেন। কিন্তু মৃত্যুর কিছু বছর পূর্বে ঢাকায় একটি সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আমার লেখা একটি গান গাইতে বলেছিলাম তাকে। সেদিন আমার লেখা গানটি সে গায়নি। শিষ্য বিপুলের ব্যবহার আমাকে খুবই পীড়া দিয়েছিল। অমর চন্দ্র শীল এক শিষ্যের ব্যবহারে অসন্তোষ্ট হলেও আরেক শিষ্যের ব্যবহার তাঁকে মুগ্ধ করেছে। সে শিষ্যটি হলেন বর্তমান বাংলাদেশ বেতার ও টিভির এ গ্রেড প্রাপ্ত শিল্পী আবুল হাশেম বাঙালি। তিনি বলেন, আবুল হাশেম আমার সন্তানের মত। পরিবারের যেকোন কাজে তার সহযোগিতা আমাকে উদ্বেলিত করে, আমার প্রেরণা যোগায়। এ শিল্পীকে কাছে পেয়ে তাই গেয়ে উঠেন বন্ধুরে দেখনা কেমনে সুখে আছিরে ও বন্ধুরে.....।

কিশোরগঞ্জ ইতিহাস ঐতিহ্য সংরক্ষণ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক লেখক ও গবেষক আমিনুল হক সাদী বলেন, জীবিত শিল্পীকে সম্মাননা না দিয়ে মরণের পরে সম্মাননার রীতিকে পরিহার করতে হবে। কিশোরগঞ্জের সংস্কৃতি অঙ্গনের সকলকে অমর চন্দ্র শীলের জন্য এগিয়ে আসতে হবে।


(পিকেএস/এএস/সেপ্টেম্বর ২৪, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

১০ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test