E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

বঙ্গোপসাগরে ৭ বছরে ১০৯ জেলে খুন

২০১৪ সেপ্টেম্বর ২৮ ১৫:৫৬:৪০
বঙ্গোপসাগরে ৭ বছরে ১০৯ জেলে খুন

বরগুনা প্রতিনিধি : বঙ্গোপসাগর ও সুন্দরবন এলাকায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ২০ জলদস্যু বাহিনী। এই জলদস্যুদের হাতে গত ৭ বছরে বরগুনা জেলা সহ এর পাশ্ববর্তী বিভিন্ন উপকূলীয় অঞ্চলের ১ শত ৯ জন জেলে খুন হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এই জলদস্যু বাহিনীদের অত্যাচারে এখন জেলেরা আর সাগরে মাছ ধরতে যেতে সাহস পাচ্ছেনা। ফলে এ উপকূলের অনেক জেলে পরিবার এখন অর্থ কষ্টে দিনযাপন করছে।

জেলে ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সুন্দরবনকে ঘাটি করে রাজু, গামা, নাসির, নূর হাবিব, শহিদ, সোবাহান, নানা-মহুবর, বড় ভাই-মাইজ্যা ভাই, কবির, বাদল, মুকুল, সাকাত, আনোয়ার, বেলাল, সজল, জালাল, মাহাতাব, সিদ্দিক, জিহাদ ও বাদল বাহিনী নামের ২০টি জলদস্যু বাহিনী তাদের আস্তানা করে সাগরে দস্যুতা করছে। সাগরে মাছ ধরতে আসা জেলেরা প্রতিবার ইলিশ মৌসুমে সাগরে আসার পূর্বে এই বাহিনীদের কাছ থেকে মোটা অংকের বিনিময় সদস্য কার্ড সংগ্রহ করতেহয়। যদি কোন জেলে সদস্য কার্ড না নিয়ে সাগরে মাছ ধরে তাহলে তাকে হয় প্রাণ হারাতে হয় নইলে লাখ লাখ টাকা মুক্তিপণ দিতে হয়। কোষ্টগার্ড ও জেলেদের সূত্রে জানাগেছে এই জলদস্যুদের হাতে গত ৭ বছরে ১০৯ জন জেলে প্রাণ হারিয়েছে। গত মসে পাথরঘাটার ১১ জেলেকে তারা অপহরন করেছে। তারা বর্তমানে নিখোঁজ রয়েছে।

অত্যাধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত এসব বাহিনীর ক্যাডাররা সুন্দরবন ও বঙ্গোপসাগরে একচ্ছত্র আধিপত্য কায়েম করেছে। অপহরণ, চাঁদাবাজি, লুটপাটের ঘটনা ঘটছে প্রতিনিয়ত। দস্যুরা বিভিন্ন সময়ে ছদ্মবেশ ধারণ করে মাছ শিকারের নামে বাঘ ও হরিণসহ বিভিন্ন প্রাণী শিকার করে পাচার করছে।

এদিকে গত তিন বছরে সুন্দরবনে র‌্যাব, পুলিশ ও কোস্ট গার্ডের সাথে ও নিজেদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে সংঘটিত ৩৪টি বন্দুকযুদ্ধে ৫৪জন জলদস্যু নিহত হয়েছে। র‌্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে সুন্দরবনের মূর্তিমান আতঙ্ক জুলফু বাহিনী প্রধান জুলফিকারসহ চার জন নিহত হয়। জুলফিকার হবার পরেই তার বাহিনীর আরেক সদস্য গামা বাহিনী নামে আত্মপ্রকাশ করে। শেষ পর্যন্ত গামাও র‌্যাবের সংগে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়। বঙ্গোপসাগরে প্রতি ডিসেম্বর থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত মাছ ধরার ভরা মৌসুম, এপ্রিল থেকে জুলাই পর্যন্ত সুন্দরবনে মধু ও মোম এবং বছরের অন্য সময় গোলপাতা আহরণের মৌসুম থাকায় বছরজুড়েই বনে ও জলে দস্যুদের অপতৎপরতা থাকে। দস্যুরা জেলে, বাওয়ালি ও মৌয়ালদের সর্বস্ব কেড়ে নেয়ার পাশাপাশি বন বিভাগের বিভিন্ন টহল ফাঁড়িতেও বিভিন্ন সময়ে আক্রমন করার ঘটনা ঘটেছে।

কোস্ট গার্ডের একটি সূত্র জানায়, তারা সুন্দরবনের ২০টি দস্যু দলের প্রধানের নামের তালিকা তৈরি করেছেন। তালিকানুযায়ী বিভিন্ন সময় তারা র‌্যাবের সহায়তা নিয়ে সুন্দরবন, দুবলারচর ও হিরণ পয়েন্টসহ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালাচ্ছেন।

বরগুনা জেলা ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী জলদস্যুদের কাছ থেকে পাস কার্ড সংগ্রহ করার কথা স্বীকার করে জানান, কোস্ট গার্ড ও নৌবাহিনীর সদস্যরা জেলেদের নিরাপত্তা দিতে না পারায় জেলেরা বাঁধ্য হয়ে পাস কার্ড সংগ্রহ করছেন।

বরগুনা জেলা ট্রলার শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আবদুল মন্নান মাঝি জানান, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। তাই তারা প্রাণ রক্ষার্থে জলদস্যুদের টাকা দিচ্ছেন। তিনি আরো জানান, দস্যু কার্ড সংগ্রহ করার পরেও জেলেরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। এক জলদস্যু বাহিনীর কাছ থেকে সদস্য কার্ড সংগ্রহ করলেও আরেক জলদস্যু বাহিনী হামলা ও লুটপাট চালায়। অনেক সময় জলদস্যু বাহিনী দল ও উপদলে ভাগ হয়ে জলেদের উপর অত্যচার চালায়।

(এমএইচ/এএস/সেপ্টেম্বর ২৮, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

২৫ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test