E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সুন্দরবনে শুটকি পল্লী থেকে মাছ আহরণের প্রস্তুতি শেষ

২০১৪ সেপ্টেম্বর ২৮ ১৮:১২:৫৬
সুন্দরবনে শুটকি পল্লী থেকে মাছ আহরণের প্রস্তুতি শেষ

বাগেরহাট প্রতিনিধি : বঙ্গোপসাগর উপকুল বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের দুবলাসহ ১৪ টি চরে আগামী ৯ অক্টোবর থেকে শুরু হচ্ছে ৫ মাস ব্যাপী শুটকি আহরন মৌসুম। ইতিমধ্যে পূর্ব সুন্দরবন বিভাগ থেকে নির্ধারিত রাজস্ব পরিশোধ করে পাশ-পারর্মিট নিতে ডিপো মালিক, বহরদারসহ কয়েক হাজার জেলে আবেদন করেছে। বঙ্গোপসাগরসহ বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগে কমপক্ষে ১৭টি বনদস্যু বাহিনীর মুক্তিপনের দাবিতে জেলে ও বনজীবীদের অপহরন বানিজ্যের কারনে আতংকে রয়েছে এসব জেলে, বহরদার ও ডিপো মালিকরা। এবারের শুটকি মাছ আহরণ মৌসুমকে সামনে রেখে রবিবার দুপুরে বাগেরহাটে পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বন কর্মকর্তা ও সুন্দরবনের দুবলা ফিসার ম্যান গ্রুপের নেতারা প্রস্তুতি মুলক মতবিনিময় সভা করেছে। সভায় সুন্দরবনের বনজ সম্পদ বিনষ্ট না করা ও বনদস্যু তৎপরতা রোধে একযোগে কাজ করতে ঐক্যমতে পৌছায়।

সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের ডিএফও মো: আমীর হোসাইন চৌধূরীর সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় বক্তৃতা করেন, দুবলার ফিসারম্যান গ্রুপের চেয়াম্যান মেজর (অব:) জিয়া উদ্দিন, আশাশুনি উপজেলার চেয়ারম্যান এবিএম মোস্তাকিম, পিরোজপুরের শাহানুর রহমান শামীম, মংলার জালাল আহম্মেদ বুলবুল, খুলনার খাঁন শফিউল্লাহ খোকন, শেখ মঈন উদ্দিন টোকন, রূপসার আব্দুল হক বিশ্বাস, আসলাম শেখ, বাগেরহাট চেম্বারের সভাপতি শাহজান মিনা, মনিরুল ইসলাম, চাঁদপাই রেঞ্জ কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ, শরনখোলা রেঞ্জ কর্মকর্তা কামাল উদ্দিন আহম্মেদ প্রমূখ। সুন্দরবনের সুন্দরীকাঠসহ বনসম্পদ ব্যবহার করে জেলেরা কাঁকড়া (গেরাফি) তৈরি করে মাছ আহরন করার ফলে প্রতিবছর কোটি কোটি টাকার বনজ সম্পদ নষ্ট হচ্ছে। এর ফলে উজাড় হচ্ছে সুন্দরবন। এর হাত থেকে রেহাই পেতে এবার বন বিভাগ ও ব্যবসায়ীরা যৌথ মতবিনিময় সভায় একমত পোষন করেন যে, এবার সুন্দরবনে কোন প্রকার বনজ সম্পদ যেন ক্ষতি না হয় সে সকলকে সচেতন থাকতে হবে।

সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের ডিএফও আমির হোসেন চৌধুরী বলেন, প্রতিবছর শুটকি মৌসুমে সুন্দরবনের অস্থায়ী জেলে পল্লীতে থেকে প্রায় ৬ হাজার জেলে শত শত ট্রলার ও নৌকা নিয়ে বঙ্গোপসাগরসহ সুন্দরবনে মাছ আহরণ করে। এ সময়ে তারা কাঠ ব্যবহার করে গেরাফি (কাঁকড়া) তৈরি করার ফলে বনজ সম্পদ ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। এরই প্রেক্ষিতে এবার যাতে কোন প্রকার কাঠ ব্যবহার না করা হয়। সে ব্যাপারে ব্যবসায়ী নেতাদের নিয়ে মতবিনিময় সভা করা হয়। এছাড়া সুন্দরবনে বনদস্যুদের তৎপরতা রোধে এবার কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলে তিনি জানান। ব্যবসায়ী নেতারা বলেন, সুন্দরবন উপকূলীয় এলাকাসহ বঙ্গোপসাগরে মাছ আহরণ কালে প্রতিবছর বনদস্যুদের মোটা অংকের চাঁদা দেওয়াসহ তাদের নানা হয়রানীর শিকার হতে হয়। এর থেকে পরিত্রান পেতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী জানান তারা।

পূর্ব সুন্দরবন বিভাগ সুত্রে জানাগেছে, সমুদ্রে মৎস্য আহরন ও শুটকি মৌসুমকে ঘিরে এবছরও প্রায় ১০ হাজার জেলে ও মৎস্য ব্যবসায়ী জড়ো হবে সুন্দরবনের দুবলার চর, মেহেরআলীর চর, আলোরকোল, অফিসকিল্লা, মাঝেরকিল্লা, শেলার চর, নারকেলবাড়িয়া, ছোট আমবাড়িয়া, বড় আমবাড়িয়া, মানিকখালী, কবরখালী, চাপড়াখালীর চর, কোকিলমনি ও হলদাখালী চরে। সুন্দরবন অভ্যন্তরে কমপক্ষে ১৫ টি মৎস্য আহরণ, প্রক্রিয়াকরণ ও বাজারজাতকরণ কেন্দ্র নিয়ে এই দুবলা জেলে পল্লী । দুবলা জেলে পল্লীর জেলেরা নিজেদের থাকা, মাছ ধরার সরঞ্জাম রাখা ও শুটকী তৈরির জন্য প্রতি বছর অস্থায়ী ঘর ও মাচা তৈরি করে থাকে। জেলেরা সমুদ্র মোহনায় বেহুন্দীসহ বিভিন্ন প্রকার জাল দিয়ে মাছ শিকার করে তা বাছাই করে জাত ওয়ারী মাছগুলো শুটকী করে থাকে। জেলে পল্লীতে জেলেদের ঘর তৈরি ও জ্বালানি ব্যবহারের জন্য নির্ধারিত রাজস্ব আদায় করে থাকে সুন্দরবন বন বিভাগের দুবলা টহল ফাঁড়ি ।

গত মৌসুমে এপল্লীর জেলেদের আহরিত ২৫ হাজার ২’শ ৩৮ কুইন্টাল শুটকি মাছ থেকে সুন্দরবন বিভাগের রাজস্ব আয় করে ১ কোটি ২৭ লাখ ৯ হাজার টাকা। গত শুটকি মৌসুমে ৫৫ জন ডিপো মালিক,১৩ জন বহরদার,৮৯৫টি জেলে ঘরে থেকে প্রায় ৬ হাজার জেলে শুটকির জন্য মাছ আহরন করে। এবছর শুটকির জন্য মাছ আহরনে বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগে ১১৫জন ডিপো মালিক, ১২ জন বহরদার, ৩ হাজার ৪’শটি অস্থায়ী ঘর তৈরির জন্য জেলেরা আবেদন করেছে।

সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের ডিএফও জানান, দুবলা ফিসার ম্যান গ্রুপের নেতাদের দাবির প্রক্ষিতে আগামী ৯ অক্টোবর জেলে,বহরদার ও ডিপো মালিকদের আনুমতি পএ দেয়া হবে। মৎস্যজীবী নেতারা জানান, এরপর প্রায় ১০ হাজার জেলে ও বহরদার মংলা থেকে কোস্টগার্ডের সহয়তা নিয়ে জেলেরা নিরাপদে শুটকি পল্লীতে পৌছাবে। মৌসুমের শুরুতেই দেশের দক্ষিণ পশ্চিম উপকুলের হাজার হাজার জেলে ও মৎস্য ব্যবসায়ীরা সুন্দরবন সংলগ্ন দুবলার চরাঞ্চালে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া,ঝড়-জলোচ্ছ্বাস ও বনদস্যুদের উৎপাতের মধ্যেও জীবন -জীবীকার তাগিদে সাগর পাড়ের চরাঞ্চালে পৌছাতে সব প্রস্তুতি শেষ করেছ তারা।

(একে/এএস/সেপ্টেম্বর ২৮, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

২৫ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test