E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

‘ভাত খাইতে পারি না, কোরবানী দিমু ক্যামনে’

২০১৪ অক্টোবর ০৫ ১২:৫৪:৫৯
‘ভাত খাইতে পারি না, কোরবানী দিমু ক্যামনে’


কলাপাড়া (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি : ভাত খাইতে পারি না, কোরবানী দিমু ক্যামনে। আর এইবারতো মোরা ঈদও করতে পারি নাই। ঈদের সময় আডু (হাটু) হোমান পানিতে ঘর ডুইব্বা আছিলো। বউ-পোলা লইয়া বান্দের উপর যে কতো রাইত কাডাইছি। আর মোগো গ্রামে তো হেইরাম (ধনী) মানুষ নাই যে কোরবানী দিয়া মাংস দেবে। আইজ যেমন হাইছা হাক (শাক) দিয়া ভাত খাইছি, ঈদের দিন হেইডাও না থাকতে পারে। গরীব মাইনষের লইগ্যা কোরবানী না এ কথা বলেই দীর্ঘশ্বাষ ছাড়ে নদী ভাঙ্গনে সর্বস্ব হারা জুয়েল খলিফা।

পটুয়াখালীর কলাপাড়ার চাড়িপাড়া গ্রামের জুয়েলের মতো একই চিত্র রামনাবাদ নদীর পাড়ের দশটি গ্রামের হাজার হাজার পরিবারের। এ নদী ঘেষা গ্রামগুলোর শিশুদের মধ্যেও নেই ঈদ আনন্দের কোলাহল। আনন্দ না, বেঁচে থাকাই এখন এই নদীর পাড়ের মানুষের চেষ্টা। প্রতি বছরই তারা ভাসছে, নদী ভাঙ্গনে সর্বস্ব হারাচ্ছে। কিন্তু তাদের সহায়তায় কেউ এগিয়ে আসছে না।
এক সময়ে বাপ-দাদার প্রায় দেড়শ একর সম্পত্তি ছিলো জেলে শাহীন প্যাদার। রাবনাবাদ নদীর রাক্ষুসে গ্রাসে এখন সর্বস্বহারা শাহীনের পরিবারে নেই কোরবানীর আনন্দ। ক্ষুদ্র জেলে শাহীন শুধু এ বছরই প্রায় দেড় লাখ টাকা ঋনগ্রস্থ্য হয়ে পড়েছে সাগরে মাছ না পাওয়ায়। তার ছোট্ট নৌকা ট্রলারটি এখন ঘাটে বাঁধা। একদিন পর কোরবানী স্ত্রী,সন্তানদের মুখে একটু মাংস তুলে দেবেন তারও উপায় নেই।

সত্তোরোর্ধ চান মিয়া এই বয়সে এখনও ভেসে চলেছেন একস্থান থেকে অন্যত্র। রাক্ষুসে রাবনাবাদ নদী গিলে খেয়েছে তার সবকিছু। সহায় সম্পত্তি নদীতে হারিয়ে এখন বাঁধ ঘেষে ঘর করলেও প্রতি বছর নদী ভাঙ্গনে তাকেও বাঁধতে হয় নতুন কুঁড়েঘর। তাই কোন আনন্দই তার মুখের হারানো হাসি আর ফিরিয়ে দিতে পারছে না। বরং নতুন নতুন কষ্টের ও দুঃখের চিহ্ন ফুঁটে উঠছে তার চোখে মুখে। চাঁন মিয়ার ভাষায় ‘মোরাও এ্যাক সময়ে কোরবানী দিছি। হারা গ্রামের মাইনষেরে মাংস দিছি। এ্যাহন মোর কিছু নাই। আর মোরেও কেউ দেয় না।’
এই পরিবারগুলোর মতো হাজারো পরিবারের মধ্যে নেই কোন আনন্দ। চাড়িপাড়া গ্রামের বৃদ্ধ সেরাজ খলিফা জানালেন, আইজ (শনিবার) ভিজিএফ’র দশ কেজি চাউল পাইছি। এইডা না পাইলে ঈদের দিন না খাইয়াই থাকতে হইতো। কারন কাইল (রবিববার) থেইক্কা মাছ ধরা বন্ধ। তহন তো এ্যামনেই না খাইয়া থাকতে হইবে। এ চিত্র লালুয়া ইউনিয়নের নদীভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্থ নাওয়াপাড়া, নয়াকাটা, ছোটপাঁচ নং, বড় পাঁচনং, চাড়িপাড়াসহ দশটি গ্রামের।
চাড়িপাড়া গ্রামের ইউপি সদস্য মজিবর রহমান হাওলাদার জানালেন, এই শুনেছি হারা গ্রামে একটা গরু কোরবানী হইবে। মানুষ হাজার হাজার। আল্লায় এখন ভরসা। তিনি জানালেন, গত তিন মাসে অন্তত শতাধিক পরিবার নদী ভাঙ্গনে সর্বস্ব হারিয়েছে। শতশত পরিবার ভাঙ্গন আতংকে অন্যত্র চলে গেছে। বিস্তীর্ন ফসলের জমি অনাবাদি পড়ে আছে লবন পানির কারনে। এখন যে অবস্থা তাতে খাদ্যসংকট প্রকট আকার ধারন করবে আর কিছুদিন পর।
লালুয়া ইউপি চেয়ারম্যান মীর তারিকুজ্জামান তারা জানান, এবার তার এলাকায় মানুষ সীমাহীন কষ্টে আছে। কিন্তু তাদের সঙ্গতি নেই এই অসহায় মানুষগুলোর পাশে দাড়ানো। কেউ সহায়তা না করলে কোরবানীর দিনে শতশত পরিবারকে না খেয়ে কিংবা শাক-ভাত খেয়েই কাটাতে হবে।

(এমকে/জেএ/ অক্টোবর ০৫, ২০১৪)


পাঠকের মতামত:

০৩ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test