E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সংস্কার হচ্ছে না রামপাল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভবন, রোগীর ভোগান্তি

২০১৪ অক্টোবর ০৫ ১৪:৫৫:৩৬
সংস্কার হচ্ছে না রামপাল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভবন, রোগীর ভোগান্তি

বাগেরহাট প্রতিনিধি : বাগেরহাটের রামপাল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ৩১ শয্যা বিশিষ্ট মূল ভবন গত এপ্রিল মাসে হঠাৎ করে ফাটলসহ দেবে যায়। এরপর স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর ভবনটি ঝুঁকিপূর্ন ও ব্যবহারের অনুপযোগী হিসাবে সিলগালা করে দেয়। রোগীদের পার্শ্ববর্তী সম্প্রসারিত ১৯ শয্যা ভবনের স্থানান্তর করা হয়।

আজও পর্যন্ত সেই ভবনের কোন সংস্কার বা নতুন ভবন নির্মানে কর্তৃপক্ষ কোন উদ্যোগ গ্রহন না করায় উপজেলার দুই লক্ষাধিক মানুষের একমাত্র চিকিৎসাকেন্দ্রে রোগীদের স্থানাভাবে মেঝেতে আশ্রয় নিয়ে চিকিৎসা সেবা গ্রহন করতে হচ্ছে। অনেক সময় রোগীদের জায়গা সংকুলানের অভাবে প্রায় ৫০ কি.মি. পথ পাড়ি দিয়ে খুলনা মেডিকেল হাসাপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। চিকিৎসা সেবার জন্যে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে এ উপজেলাবাসিকে।

রামপাল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, ১৯৬৫ সালে বাগেরহাটের রামপালে ৩১ শয্যাবিশিষ্ট রুরাল হেলথ্ সেন্টার হিসাবে দ্বিতল এ স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি নির্মান করা হয়। উপজেলার ১০ ইউনিয়ন ও সদরের প্রায় দুই লক্ষাধিক মানুষের একমাত্র উপজেলা স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র এটি। উপজেলায় সরকারী বা বেসরকারী আর কোন স্বাস্থ্য কেন্দ্র নেই। এরপর ১৯৯০ সালে এটি ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে উন্নীত করা হয়। মূল ভবনের পাশে বহির্বভাগসহ ১৯ শয্যার আর একটি ভবন নির্মান করা হয়। গত এপ্রিল মাসের ৮ তারিখ রাত্রে হঠাৎ করে প্রচন্ড শব্দে মূল ভবনের বাইরের অংশে বিরাট ফাটলসহ বেশ খানিক অংশ দেবে যায়। কিছু কিছু কক্ষের পলেস্তারাও খসে পড়ে। তাৎক্ষনিকভাবে রোগীদের পার্শ্ববর্তী ভবনে ঠাসাঠাসি করে স্থানান্তর করা হয়।

রামপাল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান সহকারী মিজানুর রহমান জানান, পরের দিন বিষয়টি স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের বাগেরহাট জেলার প্রকৌশলীকে জানানো হলে তারা এসে ভবনটি ভবনটি ঝুঁকিপূর্ন ও ব্যবহারের অনুপযোগী হিসাবে সিলগালা করে দেয়। খুব দ্রুত ভবন সংস্কার অথবা নতুন ভবন নির্মানের আশ্বাস দিয়ে যান তারা। কিন্ত এখনো পর্যন্ত কোন ব্যবস্থাই গৃহীত হয়নি।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মূল ভবনটির চারপাশের দেয়ালে বিরাট ফাটল। দোতলায় রোগীদের চিকিৎসার জন্যে পুরুষ ও নারী ওয়ার্ড দুটি তালা লাগিযে রাখা। তবে জায়গার অভাবে নিচের অন্যান্য কক্ষগুলি দাপ্তরিককাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। পাশের সম্প্রসারিত ১৯ শয্যা ভবনে পুরুষ ও নারী ওয়ার্ডে প্রায় ৪০ জনের মত রোগী ঠাসাঠাসি করে আছেন। অনেকে কক্ষের মেঝেতে চাঁদর বিছিয়ে আছেন। অনেকে জায়গা না পাওয়ায় চিকিৎসার জন্যে প্রায় ৪০ কি.মি. দূরে খুলনা মেডিকেলে কলেজে যেতে বাধ্য হয়েছেন।

চিকিৎসা নিতে আসা ঝনঝনিয়া গ্রামের ফিরোজ শেখ (৪০) বলেন, ‘এই ছোট কক্ষের মধ্যে এত সিট বসানো হয়েছে। আর রোগীদের স্বজন যখন আসে তখন রীতিমত দমবন্ধ অবস্থা হয়। সুস্থ লোকই অসুস্থ হয়ে পড়বে। আর আমরা যারা অসুস্থ তাদের অবস্থা বুঝতেই পারছেন। সোনাতুনিয়া গ্রামের পারভীন (২৭) বলেন, আমাদের এ উপজেলায় আর কোন স্বাস্থ্য কেন্দ্র নেই। আমাদের মত গরীব মানুষের অত টাকা খরচ করে খুলনায় যাওয়ার উপায় নেই। ফলে কষ্ট হলেও কিছু করার নেই।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সেবিকা মমতা রানী সরকার বলেন, ৫০ শয্যার সুবিধা যদি আমাদেরকে ১৯ শয্যার মধ্যে দিতে হয় তাহলে রোগীদের ভোগান্তি ছাড়া তো আর কোন উপায় নেই। মাঝে মাঝে রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে আমাদের রীতিমত হিমশিম খেতে হয়। দ্রুত এ সমস্যার সমাধান হওয়া উচিত।

রামপাল উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা উৎপল কুমার দেবনাথ বলেন, আমরা নিজেরাই ঝুঁকি নিয়ে মূল ভবনে অফিস করছি। রোগীদের ভোগান্তিও চরমে। ঘটনার পর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা নিজেরা এসে দেখে গেলেন। আমরা বহুবার জানিয়েছি কিন্তÍ কোন প্রতিকার এখনো পাইনি।

এবিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের বাগেরহাট জেলার সহকারী প্রকৌশলী গনেশ চন্দ্র সিনহা মুঠোফোনে বলেন, ঘটনার পরপরই এ ভবন বিষয়ে আমরা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়কে জানিয়ে ছিলাম। কিন্তÍ এখনো কোন বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। বরাদ্দ পেলে সংস্কার করা হবে।

(একে/জেএ/অক্টোবর ০৫, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

২০ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test