E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শরবত তৈরীতে ব্যবহৃত হচ্ছে মাছের বরফ

২০১৪ অক্টোবর ১৩ ১২:৪১:২২
শরবত তৈরীতে ব্যবহৃত হচ্ছে মাছের বরফ

স্টাফ রিপোর্টার, ঢাকা : গরমের তীব্রতায় অতিষ্ট হয়ে সামান্য শান্তি খুঁজতে অনেকেই তৃষ্ণা মিটিয়ে নেন রাস্তার ধারে বিক্রি করা লেবুর শরবত দিয়ে। কিন্তু এই শরবতে ব্যবহৃত বরফ গুলো কতটুকু স্বাস্থ্যসম্মত খাওয়ার সময় তা একবারও কি ভাবেন ক্রেতারা? শরবত তৈরীতে এই বরফ গুলো ব্যবহৃত হচ্ছে মাছের তৈরী বরফই।

এই বরফ গুলো বানানো হচ্ছে ঢাকার বিভিন্ন বরফের কারখানায়। এর মধ্যে রয়েছে কাওরানবাজার, কাপতানবাজার, সূত্রাপুর, যাত্রাবাড়ি এবং সোয়ারি ঘাটের বরফ কারখানা।

উত্তরাধিকার৭১ নিউজ এর প্রতিবেদক সরেজমিনে পরিদর্শন করেছিল কিছু বরফ কারখানা।

কাওরানবাজার বরফ কারখানা চিত্র:
কাওরান বাজার থেকে তেঁজকুনি পাড়া যেতে পড়ে এই বরফ কারখানাটি। তবে প্রথম দেখায় এটিকে কারখানা মনে হবে না। বাথরুথের চেয়েও ছোট এবং চিপা একটি জায়গায় বানানো হচ্ছে বরফ। বরফ বানানো হচ্ছে সরাসরি লাইনের গন্ধ যুক্ত পানি দিয়ে। একই পানি দিয়ে ছোট এবং বড় সাইজের বরফ বানানো হচ্ছে। যারা শরবত বিক্রেতা তারা নিচ্ছে ছোট আকারের বরফ। আর যারা মাছ বিক্রেতা তারা নিচ্ছে বড় আকারের বরফ। শরবত এবং মাছের বরফের মধ্যে পার্থক্য একটিই। সেটি হচ্ছে আকারের।

সারিবদ্ধ ভাবে বরফের পাত্রে পানি এবং লবন দিয়ে বিদ্যুতের লাইনের সাথে সংযুক্ত করে রেখে দেওয়া হয়। জমাট বাঁধলে এগুলোকে বরফ আকারে বিক্রি করা হয়। জায়গা কম থাকায় দেখা গেল কারখানার শ্রমিকরা অস্বাস্থ্যকর ভাবে বরফের পাত্রের ওপর উঠেই টেনে বের করছে জমাট বাঁধা বরফ। বরফ বের করতে করতে আবার অনেক সময় তাদের শরীর বেয়ে ঘামও গরিয়ে গিয়ে পড়ছে বরফের ওপর।

সূত্রাপুর বরফ কারখানা চিত্র:
পুরানো ঢাকার সূত্রাপুর থানা থেকে খানিকটা বায়ে মোড় নিতেই গলির মুখে অবস্থিত এই বরফ কারখানাটি। ছোট্ট একটি রুম নিয়ে তৈরী করা এই কারখানাটি। মাটির মধ্যে ময়লা আর্বজনা। স্যতসেঁতে ভাব বিরাজ করছে চারদিকে। একপাশে বরফের পাত্রগুলো সাজানো। তবে এইখানে কেবল ছোট আকারের বরফই তৈরী হয়। এইখানেও বরফের জন্য ব্যবহার করা হয় সরাসরি লাইনের র্দুগন্ধযুক্ত পানি।

বরফ কারখানা গুলো পরির্দশনের পর উত্তরাধিকার৭১ নিউজ কথা বলেছিল এই সকল খুচরা শরবত বিক্রেতাদের সাথে। কথা হয়েছিল শাহাবাগ এলাকার চারুকলার সামনে শরবত বিক্রেতা সুর্দশনের সাথে। এই শরবতের জন্য বরফ কোথায় থেকে নিয়ে আসা হয় এমন প্রশ্নে জবাবে তিনি বলেন, আমি বরফ আনি কাওরানবাজার থাইকা।

‘এই বরফ তো স্বাস্থ্য সম্মত না’ এমন কথার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বলেন, স্বাস্থ্যসম্মত কিনা তা আমি জানি না। তয় সবাই এইখান থাইকাই বরফ আনে। আর জাগো কাছ থাইকা এই বরফ আনি তারাও কইছে এই বরফ ভালো।

কথা হয়েছিল জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে শরবত বিক্রেতা শরিফ এর সাথে। এই বরফ কোথায় থেকে আনা হয় জানতে চাওয়ার সাথে সাথে তিনি বলেন, এইডি ভালো বরফ। মালাইয়ের বরফ। এইখ্যানে কোনো ভেজাল নাই।

কোথা থেকে আনা হয় এই বরফ আবারও জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোনো বরফ কারখানা থেকে নয় স্টেডিয়াম থেকে। পাইকারা বরফ নিয়ে আসে কারখানা থেকে । সেখান থেকেই তারা এই বরফ সংগ্রহ করে। তাই কেমন ভাবে তৈরী হয় এই বরফ তা বলতে পারে না সে।

পরবর্তী সময়ে উত্তরাধিকার৭১ নিউজ কথা বলেছিল এই সব শরবত যারা খায় তাদের সাথে। দেখা যায় এইসব শরবত ছাত্র-ছাত্রী থেকে শুরু করে রিকসাওয়ালা পর্যন্ত সকল শ্রেনীর লোকজনই খাচ্ছেন।

কথা হয়েছিল রাজধানীর একটি প্রাইভেট ভার্সিটিতে পড়ুয়া ছাত্র আশিকুর রহমানের সাথে।

‘এই শরবতে যে বরফ ব্যবহার করা হয় স্বাস্থ্যসম্মত নয়। আসলে মাছে যেই বরফ ব্যবহার করা হয় সেই একই বরফ ব্যবহার করা হচ্ছে এখানে ’ কিন্তু একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হওয়া সত্ত্বেও কেন খাচ্ছে এই শরবত তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আসলে এই গরমে এই একটি খাবারই খেলে শান্তি লাগে। তাছাড়া গরমে তো লেবুর শরবতের চেয়ে ভালো জিনিস আর হতে পারে না। তিনি বলেন, ভেজাল ছাড়া কিইবা আছে। তাই খাওয়ার সময় এতো কিছু চিন্তা করি না। তাছাড়া বরফ গুলো দেখতে তো ভালোই মনে হয়। আমি কিভাবে জানবো এটা কি পানি দিয়ে তৈরী হয়।

কথা হয়েছিল ফার্মগেট এলাকার এক রিকসা চালক সবুজ এর সাথে। কেন খাচ্ছেন এই শরবত এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এই গরমে শরবতটা খাইলে শান্তি লাগে তাই খাই। তাছাড়া দামও কম। অন্য কোনো কিছু তো আর এতো কম দামে পাওয়া যাবে না।

শরবতে যে বরফ ব্যবহার করা হয় তা তো মাছের ব্যবহৃত বরফ তা কি জানেন?

এই কথায় তিনি বলেন, মাছের বরফ না কিয়ের বরফ তা আমাগো এতো জাইনা লাভ কি বাপু। খাওয়ানের দরকার খাই।

এই বরফ খাওয়ার ফলে মানুষ কি কি সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন তা জানার জন্য উত্তরাধিকার৭১ নিউজ কথা বলেছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়ো কেমিস্ট্রি বিভাগের অধ্যাপক তাজমেরি ইসলামের সঙ্গে।

অধ্যাপক তাজমেরি ইসলাম জানান, মাছে ব্যবহৃত বরফে যে পানি ব্যবহার করা হচ্ছে তা সাধারনত লাইনের গন্ধযুক্ত পানি। আর এই পানি ব্যবহারের ফলে ডায়রিয়া হতে পারে। তাছাড়া মাছ ভালো রাখার জন্য বরফে কিছু মেডিসিন ব্যবহার করা হয়। যা মানুষের শরীরের জন্য খুব ক্ষতিকর। বরফে ব্যবহৃত এই মেডিসিন অনেক সময় ক্যন্সারের কারণও হতে পারে।

(এমএম/অ/অক্টোবর ১৩, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

২০ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test