E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

আইন থাকা সত্ত্বেও বন্ধ হচ্ছে না 'শিশু শ্রম'

২০১৪ অক্টোবর ১৪ ১০:১৭:৫৩
আইন থাকা সত্ত্বেও বন্ধ হচ্ছে না 'শিশু শ্রম'

বিশেষ প্রতিবেদক : আইন থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশে বন্ধ হচ্ছে না শিশু শ্রম। এর কারণ কখনো দারিদ্রতা, আবার কখনো হয়ে দাঁড়িয়েছে নিম্নবিত্ত পরিবারের বাবা মায়েদের অবহেলা।

শিশু শ্রম আইন দেখলে দেখা যায়, জাতিসংঘে ১৮ বছরের নিচে সকলকে শিশু হিসাবে গণনা করা হচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে এর হিসাব ১৪ বছর বয়স। কারখানা আইনের ৬৬ এবং ৭৬ ধারায় বলা হয়েছে, ১৪ বছরের নিচে কাউকে কারখানায় নিয়োগ দেওয়া যাবে না। এমনকি কারখানা চলাকালীন অবস্থায় এই বয়সী কাউকে কারখানার ভিতরে ঢুকতে দেওয়া যাবে না। গৃহকর্মীর কাজেও এই একই ধরনের বাধ্য বাধ্যকতা রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় সম্পূর্ন এর বিপরীত। এই সব স্থানে বেশীর ভাগই কাজ করছে শিশু।

শিশু শ্রমিকদের বাস্তব অবস্থা জানার জন্য উত্তরাধিকার ৭১ নিউজ কথা বলেছিল রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে কর্মরত রয়েছে এমন কিছু শিশু শ্রমিকের সাথে।

# কথা হয়েছিল নীলক্ষেতে লেগুনার হেলপার জনির সাথে। তার বয়স আনুমানিক ৭/৮ বছর।

এতো ছোট বয়সে কেন এই কাজ করে জানতে চাইলে জনি বলে, 'লেগুনায় কাম করি ট্যাকার জন্য। বাসায় বাপে অসুস্থ। মায়ে মাইনষের বাড়ি কাম করে। ঘরে ৪ ভাই-বইন। আমি সবার বড়। মায়ের কামাইতে সংসার চলে না। তাই বছর খানেক ধইরা আমিও কামে নাইমা পড়ছি।'

শিশু শ্রমিক আইনের বিপক্ষে হওয়া সত্ত্বেও কেন এই শিশুটিকে এই ঝুঁকিপূর্ন কাজে নিয়োগ দিয়েছেন এমন প্রশ্নের জবাবে লেগুনার মালিক শরিফ বলেন, আমার কি দোষ। ওর মায়ে আমার পরিচিত। ওর মায়ে আইসা আমার হাতে পায়ে ধরল যে তার পুলাডারে যেন কামে লই। তাই নিছি। ওর মায়ে কইল পুলাডারে কামে না নিলে না খাইয়া থাকন লাগবো। আমি কাউরে কামে লইলে যদি কারো ঘরে খাওন আহে তয় তো ভাল।

# কথা হয় ময়মনসিংহ থেকে আগত লোহা শ্রমিক রাজুর সঙ্গে। বয়স ১০ বছর। এতো ছোট বয়সে কাজে আসার কারণ ব্যাখ্যা করে রাজু বলে, 'মায়ে মইরা যাওনের পরে বাপে আরেকটা বিয়া করে। ঘরে সৎ মায়ে খাওন দেয় না। ক্ষিধার জ্বালা সইজ্জ করতে না পাইরা চাচার লগে ঢাকায় আইছি। চাচায় আইনা এই লোহা লক্করের দোকানে দিছে। এখন ভালোই আছি। মাসে ২০০০ টাকা পাই। তয় গ্রামের বাড়ির আমাগো পুকুরটা কথা মনে পড়লে মাঝে মাঝে কাইন্দা দেই।'

আইন অনুযায়ী সকল শিশুকে তার মৌলিক অধিকার দেওয়া একটি রাষ্ট্রের কর্তব্য। কিন্তু এই ক্ষেত্রেও দেখা গেছে বাস্তবতা ভিন্ন। কেননা শিশুরা তাদের খাদ্য-বস্ত্র এবং বাসস্থানের নিরাপত্তা খুঁজতেই যুক্ত হয়েছে বিভিন্ন ঝঁকিপূর্ন কর্মস্থানে। একটু খাদ্যের নিরাপত্তা খুঁজতে গিয়ে সে হারিয়ে ফেলেছে শিক্ষার চাহিদা। এমন শিশুর সাথেও কথা বলেছে উত্তরাধিকার৭১ নিউজ।

# কথা হয়েছিল শাহাবাগ এলাকায় ফুল বিক্রেতা ৮ বছর বয়সী আখির সাথে। ফুল বিক্রি কেন কর এই প্রশ্নের জবাবে আখি বলে, 'মায়ে বেঁচতে কয় তাই ফুল বেঁচি। ফুল না বেঁচলে মায়ে মারে। কয় খাওন দিবো না।'

আখির কাছে থেকে জানা যায় সকাল বেলা তার হাতে ফুল দিয়ে তার মা বলে দেয় দুপুরের মধ্যে ১৫০ টাকার ফুল না বেঁচতে পারলে দুপরের খাবার দিবে না।

স্কুলে যেতে ইচ্ছা করে না এমন প্রশ্নের জবাবে আখি বলে, না ইচ্ছা করে না।

কেন?

স্কুলে যাইয়া কি হইবো। আমার লগের কেউ স্কুলে যায় না। তাই আমিও স্কুলে যামু না।

শিশু শ্রমিকদের ব্যাপারে উত্তরাধিকার ৭১ নিউজ কথা বলেছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সোসিওলোজির শিক্ষক মোকাদ্দেম হোসেনের সাথে।

তিনি এ বিষয়ে উত্তরাধিকার ৭১ নিউজকে জানান, আসলে আমাদের সামাজিক অবস্থার কারণেই প্রতিনিয়ত বেড়ে যাচ্ছে শিশু শ্রমিকের পরিমাণ। বাবা-মা অনেক সময় দারিদ্রতার কারণে প্রায় বাধ্য হয়েই তাদের শিশুদের ঠেলে দিচ্ছে বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ন কাজে।

তিনি বলেন, শিশু শ্রমকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা না করতে পারলে আসলে থামানো যাবে না। আর এর জন্য দরকার সরকারের পাশাপাশি সমাজের সকল স্তরের মানুষের সাহায্য।

(এমএম/অ/অক্টোবর ১৪, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

২০ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test