E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

তাঁতীবাজারের ঐতিহ্যবাহী 'স্বর্ণশিল্প' ধ্বংসের মুখে

২০১৪ অক্টোবর ১৬ ০৮:২৪:০৮
তাঁতীবাজারের ঐতিহ্যবাহী 'স্বর্ণশিল্প' ধ্বংসের মুখে

বিশেষ প্রতিবেদক : পুরান ঢাকার তাঁতীবাজারের ঐতিহ্যবাহী স্বর্ণালংকার শিল্প প্রায় ধ্বংসের মুখে। দেশি বাজারে মন্দা এবং আর্ন্তজাতিক স্বর্ণের বাজারে অস্থিতিশীলতাই এর অন্যতম কারণ। এছাড়াও দেখা গেছে এখন অনেক জুয়েলার্সই বিদেশ থেকে গহনা আমদানি করেন। আর যারা আমদানি করেন না তাদেরও রয়েছে নিজেস্ব কারিগর। তাঁতী বাজারে স্বর্ণ বানানো পাশাপাশি পোদ্দারী এবং বন্ধকী ব্যবসায়ের খুব হাকডাক ছিল এক সময়। এখন তাও প্রায় বিলিনের পথে।

এই বিষয়ে উত্তরাধিকার৭১ নিউজ কথা বলেছিল তাঁতী বাজার বনিক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ইউসুফ শরীফ এর সাথে।

তিনি বলেন, তাঁতী বাজারের এই স্বর্ণব্যবসা আসলে টিকে ছিল মধ্যবিত্তদের কারণে। কিন্তু বর্তমানে স্বর্ণের বাজারে স্থিতিশীলতা না থাকায় তারা কোনো উৎসব ছাড়া স্বর্ণালংকার বানায় না বললেই চলে। ইমিটিশন এর কারণে অবশ্য স্বর্ণের চাহিদা অনেকাংশেই লোপ পেয়েছে। আর উচ্চবিত্ত ক্রেতারা বেশিরভাগই কেনেন স্বনামধন্য বড় জুয়েলারি হাউজ থেকে। যার ফলে এই শিল্প প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে।

প্রতিদিন কি পরিমাণ কেনাবেচা হয় তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আগে কোনো উৎসব ছাড়াও প্রতিদিন একটি ছোট দোকানেও ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা হতো। আর এখন তা দাঁড়িয়েছে মাত্র ৫ থেকে ৭ হাজার টাকায়। কোন কোন দিন আবার হয়ও না। এই অবস্থায় ব্যবসা টিকিয়ে রাখাই দায়।

এই বিষয়ে উত্তরাধিকার৭১ নিউজকে আরেক স্থানীয় স্বর্ণব্যবসায়ী বলেন, তাঁতী বাজারে যেসব ব্যবসায়ী আছেন তাদের বেশীর ভাগই তিন পুরুষ ধরে এই ব্যবসাই করেন। কিন্তু বর্তমানে ব্যবসায়ের মন্দার কারণে তাদের অনেককেই বাঁধ্য হয়ে ছাড়তে হচ্ছে এই ব্যবসা।

তাঁতীবাজারে স্বর্ণশিল্পের মধ্যে আরেকটি উল্লেখযোগ্য ব্যবসা হলো পোদ্দারী ব্যবসায়। জুয়েলার্স ব্যবসায়ীরা স্বর্ণালংকার যেমনিভাবে ক্রয়-বিক্রয় করেন ঠিক তেমনিভাবে পোদ্দারী ব্যবসায়ীরা পাকা বা তেজাবী স্বর্ণ ক্রয়-বিক্রয় করেন। পোদ্দারী ব্যবসায়ের বর্তমান অবস্থা নিয়ে কথা হয়েছিল তাঁতী বাজারের বনিক সমিতির সাধারন সম্পাদক রঞ্জন বিশ্বাসের সাথে।

তিনি বলেন, এই শ্রেনীর ব্যবসায়ীদের মধ্যে বড় ব্যবসাযীরা পাকা সোনা কেনাবেচা করেন। আর যারা একটু নিম্নশ্রেনীর তারা খাদ সহ সোনা কিনে তা গলিয়ে খাদ বের করে পাকা সোনা বানিয়ে তা জুয়েলারি মালিকদের কাছে বিক্রি করে। কিন্তু বর্তমানে বড় জুয়েলারি মালিকরা সাধারনত দেশের বাহিরে থেকেই সোনা আমদানি করেন। যার ফলে পোদ্দারী ব্যবসায়র অবস্থা অনেকটাই মন্দার পথে।

তাঁতীবাজারের স্বর্ণপাড়ায় এল দেখা যায় অসংখ্য বন্ধকীর দোকান। এক সময়ের বেশ লাভজনক ব্যবসায় ছিল এটি। বন্ধকীর দোকানে আসলে টাকার বিনিময়ে স্বর্ণ বন্ধক রাখা হয়। এই ব্যবসায়ে কাস্টমার স্বর্ণবন্ধক রেখে সুদের বিনিময়ে টাকা ধার নেয়। ব্যবসায়ীরা সাধারনত ১ ভরি স্বর্ণের যে দাম হয় তার চাইতে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা কম দেয়। আর সেই দামের ওপর মাসিক শতকরা ৪ থেকে ৫ টাকা সুদ নেওয়া হয়।

বন্ধকী ব্যবসায়ের বর্তমান অবস্থা নিয়ে কথা হয়েছিল মাহিন গোল্ড কর্নারের আবীর হোসেনের সাথে। তিনি বলেন, স্বর্ণের বাজারে দরের কোনো ঠিক ঠিকানা না থাকায় ব্যবসায়ের অবস্থা এখন ভালো না। তাছাড়া এখন পাড়ায় এবং মহল্লায় বন্ধকীর দোকান হয়ে গেছে। আগে শুধুমাত্র তাঁতী বাজারেই বন্ধকীর দোকান ছিল। তাই আগে মতো কাস্টমার আর নাই।

(এমএম/অ/অক্টোবর ১৬, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

২০ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test