E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

জাজিরায় ভয়াবহ রূপ নিয়েছে পদ্মার ভাঙ্গন

২০১৪ অক্টোবর ১৮ ১৫:১৮:২৮
জাজিরায় ভয়াবহ রূপ নিয়েছে পদ্মার ভাঙ্গন

শরীয়তপুর প্রতিনিধি : গত তিন সপ্তাহে পদ্মার ভাঙ্গনে বিলিন হয়ে গেছে শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার বড়কান্দি, কুন্ডেরচর ও পালেরচর ইউনিয়নের অর্ধ সহাস্রাধিক বসত বাড়ি, ফসলি জমি, শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান । ঝুঁকিতে রয়েছে  আরও একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বড়কান্দি ইউনিয়ন পরিষদ, দূর্গারহাট বাজার, একমাত্র ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ কয়েক শত পরিবার। এ পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ায়নি কেউ,  কোন সহায়তা জোটেনি সহায় সম্বলহারা এ সব মানুষের।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, শত শত পরিবার তাদের ঘর বাড়ি ভেঙ্গে ও গাছপালা কেটে সরিয়ে নিচ্ছে নিরাপদ কোন স্থানে। যাদের দূরে কোথাও যাওয়ার সুযোগ নেই তারা আশ্রয় নিয়েছে অন্যের ফসলী জমিতে আর রাস্তার পাশে । সর্বস্ব হারানো মানেুষের কাছে ২০ কেজি ভিজিএফ এর চাল ছাড়া কোন সহায়তা পৌঁছেনি। অনেকেই খেয়ে-না খেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে।

বর্ষার পানি নেমে যাওয়ার সাথে সাথে নতুন করে ব্যাপকভাবে ভাঙ্গন শুরু হয়েছে জেলার জাজিরা উপজেলার চরাঞ্চলের তিনটি ইউনিয়নের বিশাল এলাকা নিয়ে। অক্টোবরের মাঝা মাঝি সময় থেকে শুরু হয়ে এ ভাঙ্গন এখন তীব্র আকার ধারন করেছে। সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জাজিরা উপজেলার বড়কান্দি ইউনিয়ন। গত দুই সপ্তাহে এ ইউনিয়নের ছৈয়ালকান্দি, মাদবরকান্দি, কাদির সরদারকান্দি, মুন্সিকান্দি, মাঝিকান্দি, মলঙ্গীকান্দি, দীন মোহাম্মদ শেখকান্দি, মৃধাকান্দি, তাইজ উদ্দিন মাদবরকান্দি, কোতোয়ালকান্দি, কুড়িটাকার চর ও নওয়াপাড়া গ্রামের অন্তত ২ শত ৩০টি বসত বাড়ি সর্বগ্রাসী পদ্মা ভেঙ্গে নিয়ে গেছে।

উল্লেখিত ১২টি গ্রামের মধ্যে তিনটি গ্রাম সম্পূর্নভাবে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। আংশিকভাবে ভাঙ্গনের শিকার হয়েছে ৯টি গ্রাম। এখনো হুমকীর মধ্যে রয়েছে আরও ৭-৮টি গ্রাম। ঈদুল আজহার তিন দিন আগে নদী গর্ভে চলে গেছে ৬নং নজিম উদ্দিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ও কাদির সরদার কান্দি জামে মসজিদটি। মসজিদ সংলগ্ন গণকবরস্থানটি আংশিক অবস্থায় ঝুলে রয়েছে, তবে ভাঙ্গন অব্যাহত থাকলে তা দু চার দিনের মধ্যে ভেঙ্গে যাবে বলে ধারণা করছে এলাকাবাসী। চরম হুমকীর মুখে রয়েছে নওয়াপাড়া রেজিঃ প্রাথমিক বিদ্যালয়টিও। ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম। কিছুতেই থামছে না এই ভাঙ্গন বরং তা দিন দিন আরও ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করছে। এ ভাঙ্গন কোথায় গিয়ে শেষ হবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় বড়কান্দি ইউনিয়নসহ পাশ্ববর্তী ইউনিয়নের মানুষ।

পদ্মার করালগ্রাসে সব হারিয়ে জাজিরার বড়কান্দি ইউনিয়নের ছৈয়লকান্দি গ্রামের মোহাম্মদ আলী ছৈয়ালের স্ত্রী সামর্ত্যজান বেগম এখন পাগল প্রায়। সারা দিন ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে নদীর দিকে। আর প্রতিদিন নদী ভাঙ্গা রোধে ফুল আর রঙ্গিন কাগজে কুলা সাজিয়ে ভাসিয়ে দেয় পদ্মার বুকে। প্রতিনিয়তই ভেঙ্গে চলেছে রাক্ষুসী পদ্মা। গ্রাস করছে শত শত পরিবারকে।

একই গ্রামের অশতিপর বৃদ্ধা আমেনা বেগম বলেন, জীবনে ৭ থেকে ৮ বার সর্বনাশা পদ্মার ভাঙ্গনের শিকার হয়েছি। বার বার নতুন নতুন স্থানে বসতী গড়েছি । এবারও অসময়ে এসে পদ্মা সব ছিনিয়ে নিয়ে গেল। এখন শেষ সময়। শরীরে আর শক্তি পাইনা। চোখেও দেখিনা। এই বয়সে কোথায় গিয়ে দাঁড়াবো জানিনা।

৬ নং নজিম উদ্দিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ৫ম শ্রেনীর ছাত্র মোঃ ইমরান হোসেন কষ্টের সাথে বলে, বিদ্যালয় ভেঙ্গে যাওয়ায় পড়াশুনা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। চেয়ারম্যানের কাচারী ঘরে আমাদের ক্লাস হচ্ছে। অনেক সময় রোদ আর বৃষ্টিতে খোলা আকাশের নিচে বসেও পড়তে হচ্ছে । তাই আমাদের একটি নতুন বিদ্যালয় খুব দরকার।

বরকান্দি এরাকার কৃষক আব্দুল মান্নান হাওলাদার বলেন, আমার দুই একর ফসলী জমি পাকা ধানসহ কয়েকদিন আগে নদীতে ভেঙ্গে নিয়ে গেছে। বসত বাড়িটিও এথন হুমকির মুখে। বার বার এভাবে নদীতে ভাঙলে আমাদের ছেলে মেয়েদের ভবিষ্যৎ কি হবে। আমরা সরকারের কাছে অনুরোধ জানাই আমাদের যেন একটা বেরী বাধ দিয়ে রক্ষা করেন।

বড়কান্দি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এস এম সিরাজুল ইসলাম বলেন, আশ্বিন-কার্তিক মাসে আমার জীবনে তিনি এমন ভাঙ্গা দেখিনি। ভাঙ্গন কবলিত এসব মানুষ অসহায় অবস্থায় রাস্তার পাশে খোলা আকাশের নীচে মানবেতর জীবন যাপন করছে। ২০ কেজি চাল ছাড়া সরকারী কোন সহযোগিতা করতে পারিনি ভাঙ্গনের শিকার এসব মানুষদের। এভাবে ভাঙ্গন অব্যাহত থাকলে বড়কান্দি ইউনিয়ন পরিষদ, দূর্গারহাট, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ অনেক গ্রাম বিলীন হয়ে যাবে। তিনি সরকারের কাছে দাবি করেন, ভাঙ্গন মোকাবিলায় নদী শাসন করে একটি স্থায়ী বাধ নির্মাণের জন্য।

শরীয়তপুর জেলা প্রশাসক রাম চন্দ্র দাস বলেন, নদী ভাঙ্গল কবলিত এলাকার সকল তথ্য প্রশাসনের কাছে রয়েছে । ইতোমধ্যে দূর্গতদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে। ভাঙ্গনে সব হারানো এসব মানুষদের পূর্নবাসনের জন্য জায়গা খোঁজা হচ্ছে, বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

(কেএনআই/এএস/অক্টোবর ১৮, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test