E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

আগৈলঝাড়ায় গাছ চুরি, কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা

২০১৪ অক্টোবর ২৮ ১৩:১৫:১০
আগৈলঝাড়ায় গাছ চুরি, কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা

বরিশাল প্রতিনিধি : বরিশালের আগৈলঝাড়ায় সরকারি রাস্তায় লাগানো গাছ কেটে নিয়ে যাচ্ছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা। নির্বিচারে এসব গাছ কাটার ফলে উজাড় হয়ে যাচ্ছে এলাকার বনভূমি। প্রভাব পড়ছে জীব-বৈচিত্র্যের ভারসাম্যে।

বন বিভাগের উদাসীনতা ও চোরের সাথে আপসের কারণে ছয় বছরে মামলা হয়েছে মাত্র ১৫টি। গাছ উদ্ধারের পরিমাণও নামমাত্র। বন বিভাগ কর্তৃক উদ্ধারকৃত গাছও আবার রাতে সরকারি কর্মকর্তারা বিক্রি করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ফলে একদিকে বনায়নের সাথে সম্পৃক্তরা অর্থনৈতিকভাবে বঞ্চিত হচ্ছেন অন্যদিকে সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব।

উপজেলা বনায়ন কর্মকর্তা প্রদীপ চন্দ্র মণ্ডল ও সংশ্লিষ্ঠ অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের ওয়াপদা বেরী বাঁধ, এলজিইডির রাস্তা ও গ্রামীণ জনপদের রাস্তার দুই পাশে সরকারের সামাজিক বনায়ন, তৈরি বাগান, উপকূলীয় সবুজ বেষ্টনী প্রকল্পসহ বিভিন্ন এনজিওর সাথে যৌথভাবে লাগানো ২১টি বাগান রয়েছে। এ সকল বাগানের সুফল ভোগীর সংখ্যা ১৮ হাজার ৫৭ জন।

১৯৯০ সালে শুরু হয় বাগানের কাজ। ১৯৯৯-২০০০ অর্থবছরে উপকূলীয় সবুজ বেস্টনী প্রকল্প ও ২০১০-২০১১ অর্থবছরে সামাজিক বনায়ন কর্মসূচিতে বনায়নের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু করা হয়। ২০০৯ সালে উপজেলা বনায়ন অফিসের কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর থেকে গাছ চোরেরাও বসে নেই। ওই বছর সেপ্টেম্বর মাসের ৯ তারিখে ৫১টি গাছ কাটার ঘটনায় উপজেলা বনায়ন কর্মকর্তা এবিএম ফেরদৌস চাঁদ ত্রিশিরা গ্রামের প্রভাবশালী কালাম ভাট্রি, সারোয়ার ও জালানুর ভাট্রিকে আসামী করে প্রথম মামলা হলেও মোট মামলা হয় ৪টি।

২০১১-২০১২ অর্থবছরে রতনপুর এলাকা, বড়মগড়া থেকে পয়সা হয়ে এনজিও তরঙ্গ রাস্তা, ধরাধর দিঘি থেকে বরিয়ালি মাদ্রাসা পর্যন্ত সড়কের চুরি হওয়া গাছের জন্য তিনটি মামলা করা হয়। এর মধ্যে দুটি মামলার আসামি অজ্ঞাত থাকলেও অপর মামলায় নান্না শরীফ, জলীল শরীফ, অরুন ভূইয়া, সোহাগ ভূইয়া, জালাল ভূইয়া, রনী মীর, সাহাবুদ্দিন ভূইয়াসহ ১২ জনকে আসামি করে মামলা করেন তৎকালীন বনায়ন কর্মকর্তা এবিএম ফেরদৌস।

২০১২-২০১৩ অর্থবছরে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ গাছ চুরির ঘটনা ঘটলেও ওই বছর রেকর্ডপত্রে কোন মামলা দেখা যায়নি।

চলতি অর্থবছরে কাজীরহাট স্লুইজ গেট থেকে নুরু গোমস্তার বাড়ি পর্যন্ত কাটা গাছের ১৬.৫২ ঘন ফুট গাছ উদ্ধার, আমবৌলা আবুল হোসেনের বাড়ি থেকে বাগধা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কাটা গাছের অংশ বিশেষ ১০.২৭ ঘন ফুট, ধরাধর দিঘি থেকে বড়িয়ালি মাদ্রাসা পর্যন্ত প্রায় ৮ ঘন ফুট গাছ উদ্ধার দেখানো হয়। এ ঘটনায় মামলা করা হয় তিনটি।

এ বিষয়ে সর্বশেষ মামলা করা হয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান খোকন বালাসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে। ওই চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে রাস্তার গাছ কেটে বাড়ির সামনে ব্রীজ নির্মাণ করার রয়েছে।

এলাকায় বিভিন্ন সড়কে গাছ চুরির ঘটনা ঘটলেও বনায়ন কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা ঘটনা স্থলে পৌঁছেন দেরি করে বলে অভিযোগ রয়েছে। আবার পানি উন্নয়ন বোর্ডের রাস্তায় গাছ চুরির ঘটনা ঘটলেও সংশ্লিষ্ঠ কর্তৃপক্ষ ও বনায়ন কর্মকর্তার গাফিলতিতে মামলা তো হয়ই না বরং একে অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে পার পাওয়ার চেষ্টা করেন। এতে সহজেই রেহাই পাচ্ছে চোরচক্র। আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছে তারা।

এ ব্যাপারে উপজেলা বনায়ন কর্মকর্তা প্রদীপ চন্দ্র মণ্ডল বলেন, তাদের জনবল কম। তাছাড়া গাছ কেটে নেয়ার পরে তাদের জানানো হয়। তাই তারা আসামি শনাক্ত করতে পারেননা। এছাড়াও জনপ্রতিনিধির দলীয় প্রভাবের কারণে অনেক সময় তারা মামলা করতে পারেন না।

(টিবি/এনডি/অক্টোবর ২৮, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

২০ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test