E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বরিশালে ইলিশে প্রাণঘাতি কেমিকেল, নেই চিহ্নিতকরণ প্রযুক্তি

২০১৪ নভেম্বর ০২ ১৩:০৯:১৪
বরিশালে ইলিশে প্রাণঘাতি কেমিকেল, নেই চিহ্নিতকরণ প্রযুক্তি

বরিশাল প্রতিনিধি :ক্রেতা আকর্ষণ ও লোকসান এড়াতে লোভনীয় রুপালী ইলিশে মেশানো হচ্ছে প্রাণঘাতি ইউরিয়া ও গ্লিসারিন। বরিশাল সিটি কর্পোরেশন ও জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে বিষাক্ত রাসায়নিক দ্রব্য চিহ্নিতকরণ প্রযুক্তি না থাকার ফলে ক্রেতারা প্রতারিত ও স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পরেছে নগরবাসী।

বরিশাল অঞ্চলের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার নদী থেকে জেলেরা দিনে-রাতে ইলিশ মাছ নিয়ে আসেন বরিশালের পাইকারী ও খুচরা বাজারে বিক্রির জন্য। নগরীর পোর্ট রোড আড়ত থেকে খুচরা মাছ ব্যবসায়ীরা তা ক্রয় করে নিয়ে হাতেম আলী চৌমাথা, বাজার রোড, সাগরদী, রূপাতলীসহ নগরীর বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করছেন। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত খুচরা বাজারগুলোতে থাকে ক্রেতা সমাগম।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বরিশাল মৎস্য আড়তে ব্যবসায়ীরা সাগর থেকে আসা মাছ ক্রয় করে তাতে ইউরিয়া এবং গ্লিসারিন মেশানো হয়। গভীর সাগরে ইলিশ শিকার করতে গিয়ে ৩/৪ দিন ট্রলারে মাছ বরফ দিয়ে সংরক্ষণ করার পর তার রং বিকৃতি ঘটার কারণে সে সকল মাছে ক্রেতা আকর্ষণ থাকেনা। এ মাছের ক্রেতা আকর্ষণ বাড়াতে অসাধু ব্যবসায়ীরা গ্লিসারিন ও ইউরিয়া সার মেশানো পানিতে ভিজিয়ে ওই মাছ তাজা ও চকচকে করছেন। কেউ কেউ মাছ শক্ত রাখতে প্রাণঘাতি গ্লিসারিন ও ইউরিয়া সার মিশিয়ে রফতানি করছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বরিশাল মৎস্য আড়তের একাধিক ব্যবসায়ীরা জানান, এধরনের মাছ দেখতে চকচকে রংয়ের হয়। ক্রেতারা সহজেই অনুমান করে নিবে মাছগুলো কিছুক্ষন আগে শিকার করা হয়েছে। কিন্তু দেখে বোঝার কোন উপায় নেই যে বিষাক্ত রাসায়নিক মিশ্রিত ইলিশ এটি। খুচরা বাজারে বিক্রেতারা তাদের লোকসান এড়াতে এধরণের বিষাক্ত রাসায়নিক মেশায় ইলিশ মাছে। পোর্ট রোডের একাধিক পাইকারী মাছ ব্যবসায়ীরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমাদের আড়তেও মাঝে মধ্যে কেমক্যিাল মেশাতে দেখা যায়। যখন ইলিশের বেশি চাপ থাকে এবং বিক্রি কম থাকে কিংবা কোন হরতাল বা পরিবহন সমস্যা থাকে তখন আড়তদাররা লোকসান এড়াতে ইলিশে ইউরিয়া এবং গ্লিসারিন মিশিয়ে থাকেন।

এ ব্যপারে বরিশাল মৎস্য আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক নিরব হোসেন টুটুল বলেন, এ ধরণের ঘটনা আমার জানা নেই, তবে ইলিশে প্রাণঘাতি কেমিক্যাল মেশানো হচ্ছে কিনা সে বিষয়ে সমিতির সদস্যদের সাথে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও তিনি জানান।

বরিশালের সিভিল সার্জন ডা. এটিএম মিজানুর রহমান বলেন, গ্লিসারিন ও ইউরিয়া সার মেশানো ইলিশ মানবদেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এতে পাকস্থলীর ক্যান্সার, মারাত্মক চর্ম রোগ, যৌণ অক্ষমতাসহ নানান পাশ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়ার সম্ভবনা রয়েছে। এটি জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

বিসিসি’র বাজারগুলোতে রাসায়নিক মিশ্রিত মাছ বিক্রি বন্ধে কি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে এ ব্যাপারে সিটি মেয়র আহসান হাবিব কামাল বলেন, ইতোমধ্যে কয়েকটি বাজারকে ফরমালিনমুক্ত ঘোষনা করা হয়েছে এবং ইলিশে ক্ষতিকর রাসায়নিক মেশানো হলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে। বরিশালের জেলা প্রশাসক মো. শহীদুল আলম বলেন, এ ধরণের কর্মকান্ড হাতে-নাতে ধরতে পারলে তড়িৎ ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া বরিশাল মৎস্য অবতারন কেন্দ্রে নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

সূত্রমতে, নগরীতে দৈনিক প্রায় ৪’শ মন ইলিশ মাছ বিক্রি হয়। স্থানীয় নদী এবং সাগর থেকে আসে এ মাছ। হিজলা ও মেহেন্দিগঞ্জের মেঘনা, কালাবদর তেঁতুলিয়া, কুয়াকাটা ও চরমোন্তাজ এলাকা থেকে ইলিশ মাছ বেশি আসে পাইকারী বিক্রির জন্য। বরিশালের মৎস্য আড়তদাররা বছরজুড়ে দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন উপজেলার জেলেদের অগ্রিম টাকা দাদন দিয়ে ইলিশ মাছ আমদানি করছেন। বরিশালের মৎস্য আড়ত থেকে বছরে প্রায় এক লাখ ৪৪ হাজার মন ইলিশ বিক্রি করা হয়।

(টিবি/এসসি/নভেম্বর০২,২০১৪)

পাঠকের মতামত:

২০ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test