E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

রাণীনগরে দীর্ঘদিনেও চালু হয়নি ৫০ শয্যার হাসপাতাল

২০১৪ নভেম্বর ০২ ১৮:২৯:১৮
রাণীনগরে দীর্ঘদিনেও চালু হয়নি ৫০ শয্যার হাসপাতাল

বিশ্বজিৎ মনি : নওগাঁর রাণীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি নামে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হলেও এর কার্যক্রম এখনো চালুই হয়নি। সেই মান্ধাত্বার আমলের ৩১ শয্যা বিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জনবলও বর্তমানে নেই সেখানে। চিকিৎসক ও পর্যাপ্ত জনবলের অভাবে স্বাস্থ্যসেবা মারাত্মক বিঘ্নিত হচ্ছে। প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম না থাকায় ৫০ শয্যা বিশিষ্ট নির্মিত তিনতলা ভবনটি এখনো কোন কাজে আসছে না। উপজেলার কয়েক লাখ মানুষের স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম যেন মুখ থুবড়ে পড়েছে এখানে। ৩১ শয্যার হাসপাতালের পদ অনুসারে চিকিৎসক ও জনবল না থাকায় মাত্র ক’জন চিকিৎসক ৫০ শয্যা হাসপাতালে মানসম্মত সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন।

জানা গেছে, বিগত ৪ বছর আগে রানীনগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট একটি নতুন তিনতলা ভবন নির্মান করা হলেও তা প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ও জনবলের অভাবে এখনও পর্যন্ত চালু করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। যেখানে সরকারি বিধিমতে ১২জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও সেখানে প্রতিদিন মাত্র ৬জন চিকিৎসক উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের বৃহৎ এ উপজেলার কয়েক লাখ মানুষের চিকিৎসা সেবা দিতে পারছে না। আবার এই ক’জন চিকিৎসকের মধ্যে অনেকেই প্রতিদিন উপস্থিত থাকেন না। এ জন্য দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে রোগীদের।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন থেকে এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কনসালটেন্ট সার্জারী, মেডিসিন ও মেডিকেল অফিসারের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো শূন্য রয়েছে। মাঝে মধ্যে এ পদগুলোর মধ্য থেকে কোন পদে নিয়োগ দেয়া হলেও তা স্থায়ী হয় না। নিয়োগ প্রাপ্তরা উপজেলা সদরের চেয়ে যে কোন জেলা সদর বা বিভাগীয় শহরে থাকতে পছন্দ করেন। তাই তারা বিভিন্ন ট্রেনিং ও বিশেষ কোর্সের অজুহাতে এখানে স্থায়ী হতে রাজি হন না। এছাড়াও ওপড় মহলে তদবির করে চলে যান নিজের পছন্দ মত স্থানে। আর এই কারণে বর্তমানে মাত্র ৬জন চিকিৎসক দিয়ে বৃহত্তর এ জনগোষ্ঠির চিকিৎসা সেবা চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভিতরে বিদ্যুৎ পোলে রাতে জ্বলে না কোন আলো। তাই রাতে এক ভুতুড়ে পরিবেশের সৃষ্টি হয় এখানে। রাতে পর্যাপ্ত পরিমাণ নিরাপত্তা প্রহরী না থাকায় এবং এর চারিদিকের প্রাচীরের নিরাপত্তা বেষ্টনী দীর্ঘদিনের পুরনো হওয়ায় সহজেই প্রবেশ করতে পারে দুবৃর্ত্তরা। যার ফলে স্টোররুম থেকে ওষুধ চুরির ঘটনাসহ একাধিকবার ঘটেছে অনেক বড় বড় দুর্ঘটনা। চিকিৎসকদের বসবাসের জন্য দীর্ঘদিন পূর্বে তৈরি ভবনগুলোর কোন সংস্কার না করায় আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তারা থাকতেই চান না এখানে। অধিকাংশ চিকিৎসকই জেলা সদরে বসবাস করে থাকেন।

সূত্র জানায়, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আউটডোর ও ইনডোরে প্রতিদিন প্রায় তিন শতাধিক রোগীর সেবা দিতে হয়। চিকিৎসক সংকটের কারণে প্রায়ই রোগীদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। অধিকাংশ চিকিৎসক জেলা শহরে থাকায় অফিসে আসেন বেলা ১১ টা থেকে ১২টায়। তাই রোগীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হয় তাদের জন্য। ৫০শয্যা বিশিষ্ট ভবনের কার্যক্রম চালু না হওয়ায় বেডের অভাবে অনেক সময় ভর্তি হওয়া আবাসিক রোগীদের বেডের অভাবে মেঝেতেই শুয়ে সেবা নিতে হয় দিনের পর দিন। ইনডোরে যেসব রোগী ভর্তি রয়েছে, তারাও ঠিক মানসম্মত সেবা, ওষুধ ও খাবার পান না বলে অভিযোগ রয়েছে।

ভুক্তভোগী রোগীরা জানান, যথাসময়ে চিকিৎসক পাওয়া যায় না । মেডিকেল সহকারী বা ডিপ্লোমা চিকিৎসকদের ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী আবাসিক রোগীদের চিকিৎসা করা হয়। বিশেষজ্ঞ কোন চিকিৎসক না থাকায় অনেক পরিবারের লোকজন কষ্ট করে হলেও তাদের রোগীদের অন্যত্র নিয়ে চিকিৎসা করান। এদিকে শুধু চিকিৎসক সংকটই নয় এছাড়াও এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্টাফ নার্স, স্টোরকীপার (৫ বছর যাবৎ শূন্য), সহকারী নার্স, ইপিআই টেকনেশিয়ান, সহকারী মেডিকেল অফিসার, এমএলএসএস,ও মালীসহ প্রায় ১৪টি পদ শূন্য রয়েছে দীর্ঘদিন যাবৎ। যার সবগুলোই কোন না কোন ভাবে রোগীদের সেবার সঙ্গে সম্পৃক্ত।

এ বিষয়ে রাণীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ এস.এম.নজমুল আহসান বলেন, ৩১শয্যা থেকে ৫০শয্যায় উন্নিত করার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে কোন লিখিত আদেশ এবং যে পরিমাণ জনবল ও সরঞ্জাম প্রয়োজন তা এখনও পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। তাই তা চালু করা সম্ভব হচ্ছেনা। আর শূন্য পদগুলোর জন্য দীর্ঘদিন যাবৎ সিভিল সার্জন বরাবর লিখিত চাহিদাপত্র দেওয়া হয়েছে।

(বিএম/এটিআর/নভেম্বর ০২, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

২০ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test