E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বরিশালে ঘুষ ছাড়া পাসপোর্ট না হওয়ার অভিযোগ

২০১৪ নভেম্বর ০৩ ১৫:৪৯:৩২
বরিশালে ঘুষ ছাড়া পাসপোর্ট না হওয়ার অভিযোগ

আঞ্চলিক প্রতিনিধি, বরিশাল : জেলার উজিরপুর উপজেলার বাসিন্দা ইসাহাক আলী হাওলাদার বরিশাল আঞ্চলিক পার্সপোর্ট অফিসের কর্মকর্তাদের সম্মুখে বসেই সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করে বলেন, আবেদন ফরম পূরন করে বরিশাল আঞ্চলিক পার্সপোর্ট অফিসে এসে ফরম জমা দিয়েছি। আর ফরম পূরণে ক্রুটি থাকার অভিযোগ তুলে বার বার অফিস থেকে ফিরিয়ে দিয়ে একজন লোক দেখিয়ে দিয়ে তার মাধ্যমে আবেদন ফরম জমা দিতে বলেছেন অফিসের কর্মকর্তারা। পরবর্তীতে ঝামেলা থেকে বাঁচতে অনেকটা বাধ্য হয়েই অফিসের কর্মচারী শহীদের মাধ্যমে ১৫’শ টাকার বিনিময়ে রফাদফা করে ফেরত দেয়া ফরমই জমা দিয়েছি।

সূত্রমতে, শুধু কর্মচারী শহীদই নয়; অফিসের পিয়ন, গার্ড, অফিস সহকারী থেকে শুরু করে উচ্চ পদস্ত কতিপয় কর্মকর্তা ও পাসপোর্ট অফিসের আইনশৃংখলা রক্ষায় দায়িত্বরত কতিপয় পুলিশ সদস্য এবং স্থানীয় দালালদের অনিয়ম ও ঘুষ বাণিজ্যের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন দূর দূরান্ত থেকে পাসপোর্ট করতে আসা সাধারণ জনগণ। দালালদের এ দৌরাত্ম শুধু অফিসের মধ্যেই সীমাবন্ধ নয়। আঞ্চলিক পাসপোর্ট কার্যালয় ছাপিয়ে বিভিন্ন উপজেলা ও গ্রামাঞ্চলে সৃষ্টি হয়েছে পাসপোর্ট দালাল চক্র। বিষয়টি সকল মহলে অকিবহাল হলেও মানুষের ভোগান্তি ও হয়রানী রোধে নেয়া হচ্ছেনা কার্যকরী কোন পদক্ষেপ।

সূত্রে আরো জানা গেছে, স্বাভাবিক নিয়মে পাসপোর্ট করাতে হলে আবেদন ফরম সংগ্রহ করার পর তা পূরন করে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ পাসপোর্ট অফিসে জমা দেয়ার নিয়ম রয়েছে। আর কাগজপত্র যাচাই বাছাই শেষে ফরম জমা নিয়ে তাকে পাসপোর্ট করে দেয়ার নিয়ম থাকা সত্ত্বেও কাগজপত্রের স্বাভাবিক নিয়মে বরিশাল আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস থেকে সাধারণ মানুষ পাসপোর্ট করাতে পারছেন না।

সরেজমিনে বরিশাল আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস কার্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, পাসপোর্টের আবেদন ফরম জমা দেয়ার জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন অর্ধশত ব্যক্তি। আর আবেদন ফরম জমা নিচ্ছেন মামুন নামের এক কর্মচারী। পাসপোর্ট প্রত্যাশিতদের দীর্ঘলাইন থাকলেও তিনি আবেদন ফরম জমা না নিয়ে কিছু সময় পরপরই নিজের চেয়ার থেকে উঠে দালালদের দেয়া ফাইলগুলো নিয়ে কর্মকর্তার রুমে স্বাক্ষর করাতে যান। আর সাধারণ জনগণের কাছ থেকে যেসব আবেদন ফরম জমা নেয়া হচ্ছে তার অধিকাংশই ক্রুটিপূর্ণ বলে ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে। ত্রিশ মিনিটের ব্যবধানে তিনি ৫টি আবেদন ফরম জমা নিয়ে যাচাই বাছাই করে ৪টি ফেরত দিয়েছেন। এসময় ফেরত যাওয়া আবেদনগুলো যাতে গ্রহন করা হয় সেজন্য মামুনের কাছে অনুরোধ করার সাথে সাথেই সে শহীদ নামের অফিসের এক কর্মচারীকে দেখিয়ে দিয়ে তার মাধ্যমে ফরম জমা দেয়ার কথা বলেন। বাতিল হওয়া একজনের মধ্যে ছিলেন উজিরপুরের ইসাহাক আলী। তাছাড়া ফরম জমা নেয়ার পর ভেরিফিকেশনের নামে চলে আরও বেপরোয়া ঘুষ বাণিজ্য। স্ব স্ব এলাকার থানাগুলাতে পাসপোর্ট সংক্রান্ত তথ্য অফিসে প্রেরণ করলেও গ্রাহকরা অফিসে গেলে তাদের বলা হয় তদন্ত রিপোর্ট আসেনি বলে হয়রানি করা হয়। দু’চারশ টাকা দিলেই ওই অফিসে মিলে যায় তদন্ত রিপোর্ট। যারা এটা জানেনান তাদের পড়তে হয় চরম বিড়ম্বনায়।

ঘুষের টাকা গ্রহণের সময় অফিসের আউট সোর্সিং কর্মচারী শহীদকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, এ টাকা তিনি একা ভোগ করেন না। অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারী সবার মধ্যে এ টাকা বন্টন করা হবে। একপর্যায়ে শহীদের টাকা গ্রহনের বিষয়টি আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের উপ-সহকারী পরিচালক জাকির হোসেনকে অবহিত করা হয়। তাৎক্ষনিক তিনি ঘুষ প্রদানকারী ও ঘুষ গ্রহনকারী ব্যক্তিদের তার রুমে ডেকে আনেন। এসময় ঘুষ প্রদানকারী বিষয়টি স্বীকার করেন। পরবর্তীতে উপ-সহকারী পরিচালক জাকির হোসেন নানাভাবে সাংবাদিকদের ম্যানেজ করার অপচেষ্টা করেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বরিশাল পাসপোর্ট অফিসে মামুন ও জাকির হোসেন নামের দুই কর্মচারী আবেদন ফরম জমা রাখেন। আবেদন ফরম জমা নেয়ার পর যাদের ফরম বাতিল করা হয় তাদের অফিসের অন্যান্য কর্মচারীদের (দালাল) সাথে যোগাযোগ করতে বলেন। বিশেষ করে পাসপোর্ট অফিসের কর্মচারী জামাল, সুমন, ইসমাইল, শামীম, আজিম, ইকবাল, হাসনাইন, মিজানসহ অন্যান্যরা এ বাতিল হওয়া আবেদকারীদের সাথে যোগাযোগ করে ১৫’শ থেকে ২ হাজার টাকা ঘুষ গ্রহণের মাধ্যমে প্রথম পর্যায়ের বাতিল হওয়া ফরমই ক্যাশিয়ার মো. এস.এম জাকিরের কাছে জমা দিচ্ছেন।

নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্র জানায়, পাসপোর্টের জন্য ঘুষ গ্রহন ও দালালীর কাজে শুধু কর্মকর্তা কর্মচারীরাই জড়িত নন, এখানে আইনশৃংখলা রক্ষার দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যরাও জড়িত রয়েছেন ঘুষ বাণিজ্যে। যে কারণে ঘুষ ছাড়া পাসপোর্ট করাতে পারছেন না ভূক্তভোগীরা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ব্যাংক কর্মকর্তা সাংবাদিকদের কাছে বলেন, তিনি তার স্ত্রী ও ছেলের নামে তিনটি পাসপোর্ট করাতে এসেছেন। আবেদন ফরম জমা দেয়ার পর ক্রুটির কথা বলে তাদের ফরম তিনটি ফিরিয়ে দেয়া হয়। পরে হয়রানী এড়াতে দালালদের মাধ্যমে সাড়ে তিন হাজার টাকার বিনিময়ে বাতিল হওয়া তিনটি পাসপোর্ট ফরমই পরবর্তীতে জমা দেয়া হয়েছে।

এ ব্যাপারে বরিশালের জেলা প্রশাসক মো. শহীদুল আলম বলেন, প্রতিষ্ঠানটি স্বায়ত্ত শাসিত হওয়ার কারনে বিষয়টি জেনেও ঘুষ গ্রহনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া যাচ্ছে না। তার পরেও বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও আইনশৃংখলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা করা হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

(টিবি/এএস/নভেম্বর ০৩, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

২০ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test