E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

রায়পুরে হাত বাড়ালেই উত্তেজক সিরাপ !

২০১৪ নভেম্বর ০৫ ১৭:৫৫:১৮
রায়পুরে হাত বাড়ালেই উত্তেজক সিরাপ !

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি : লক্ষ্মীপুর জেলা ও উপজেলার হাটবাজারগুলোতে সয়লাব হয়ে গেছে অনুমোদনহীন ক্ষতিকর ও যৌন উত্তেজক কোমল পানীয় সিরাপ। বোতল বা ক্যানের গায়ে আঠারোর্ধ বা প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য বিক্রির কথা থাকলেও শিক্ষার্থীসহ অল্প বয়সী তরুণ-তরুণীরা হাতের নাগালে পাওয়ায় এ সিরাপ সেবনে নেশা করছে। উঠতি বয়সিদের টার্গেট করে বেশি লাভের আশায় দোকানিরা এসব পানীয় নিয়ে এসেছেন জেলাসহ রায়পুর উপজেলায়। এতে স্বাস্থ্য ঝুঁকির পাশাপাশি তাদের মধ্যে অপরাধপ্রবণতা দেখা যাচ্ছে। প্রশাসনের নাকের ডগায় এ পানীয় নির্বিঘ্নে বেচাকেনা হলেও তাদের কোনো তৎপরতা নেই বলেও অভিযোগ রয়েছে।

লক্ষ্মীপুর ও রায়পুর পৌর এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, চা দোকান, পানের দোকান, কনফেকশনারি ও মুদির দোকানে হারবাল নামের উত্তেজক সিরাপ প্রকাশ্যে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। এসব পণ্যের গায়ে বাংলাদেশ মান নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠানের (বিএসটিআই) অনুমোদনের কথা উল্লেখ নেই। এরকম কয়েকটির নাম হলো- জিনসিন প্লাস, আঠারো প্লাস, ডাবল হর্স, পাওয়ারম্যান প্লাস, পাগলু ২ ফিলিংস, হান্ড্রেড পার্সেন্ট চার্জ, পাওয়ারআপ, লিডার ফিলিংস, সেভেন হর্স, কস্তরি হারবাল সিরাপ ও নাইট পাওয়ার। এসব সিরাপ দোকানিরা তরুণ-তরুণীর কাছে বিক্রি করছে। এগুলো ছাড়াও কয়েকটি বোতলের মোড়কে নারী-পরুষের আপত্তিকর ছবিও দেয়া আছে।

এসব সিরাপের গায়ে উৎপাদন বা বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানের সঠিক ঠিকানা পাওয়া যায়নি। ড্রাগ লাইসেন্স নম্বরও পাওয়া যায়নি। কোনোটির মোড়কে ঠিকানা ব্যবহার করা হয়েছে নারায়ণগঞ্জ, পাবনা, বগুড়া, গাজীপুরের কালিয়াকৈর। বেশির ভাগের ঠিকানা দেয়া রয়েছে ঢাকা, বাংলাদেশ। উৎপাদনের তারিখ ও মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ উল্লেখ নেই। এগুলোর মধ্যে ‘পাবনার তৈরি লিডার ফিলিংস’ নামে একটি বোতলের গায়ে বর্ণনা দেয়া হয়েছে এভাবে-‘ইউনানি এ হারবাল দেহের প্রধান অঙ্গসমূহের শক্তি বৃদ্ধি করে। তৃষ্ণা মেটায়, কর্মক্লান্তি দূর করে এবং মনের প্রফুল্লতা আনয়ন করে।’ কোম্পানির নাম লেখা আছে এসএমজি ফুড প্রডাক্টস্। এছাড়া ‘লিডার ফিলিংস’ মিক্সড ফ্রুট ড্রিংকস, পাবনা, বাংলাদেশ। খাওয়ার আগে বোতল ঝাঁকিয়ে নিতে বলা হয়েছে।

লিডার নামে একটি সিরাপের লেবেলে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘ইহা একটি মিক্সড ফ্রুটস (ফলের মিশ্রণ) হারবাল সিরাপ। বিসিআইআরের (এ নামে কোনো প্রতিষ্ঠান নেই) উদ্ভাবিত এবং পরীক্ষিত। নন কার্বোনেট, নন অ্যালকোহল। খুচরা মূল্য ৬০ টাকা।’ বোতলের গায়ে এসএমজি ফুড প্রডাক্টস্ হারবাল কোম্পানির নাম থাকলেও বাস্তবে এর কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। ওই পণ্যের বিবরণে উল্লেখ করা হয়েছে, এতে রয়েছে রেড মাশরুম, স্যাফ্রন, প্রসেস ন্যাচারাল মিক্সড ফ্রুট নির্যাস, চিনি, লিকুইড গ্লুকোজ, কাজু বাদাম, মধু, পারমিটেড ফুড কালার ও ফ্লেভার। আরো বলা হয়েছে, ইহা কোনো ঔষধ নয়, সম্পূরক খাদ্যমাত্র।

বাসস্ট্যান্ড, মধ্যে বাজার, তাজমহল সিনেমা হল সড়কসহ নতুন বাজার, হাসপাতাল সড়ক ও পুরাতন বাজারে সরেজমিন ঘুরে একই দৃশ্য চোখে পড়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলা সদর, রামগঞ্জ উপজেলায়ও এসব অনুমোদনহীন সিরাপ দেদার বিক্রি হচ্ছে। জেলা উপজেলা ছাড়াও সবচে বেশি বিক্রি হচ্ছে গ্রাম অঞ্চলের হাট-বাজারে। কয়েকজন ব্যবসায়ী দাবি করেন, এসব পণ্য ফেনী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, ভোলা ও চৌমুহনীসহ বিভিন্ন কারখানায় গোপনে তৈরি হচ্ছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সরবরাহকারী জানান, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি হয় হারবাল সিরাপের নামে যৌন উত্তেজক জুস। এরপর বোতলজাত করে ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে আশপাশের জেলা ও উপজেলায়।

বাংলা বাজারের ফিড ব্যবসায়ী কামাল হোসেন জানান, কয়েক দিন আগে বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে শখে কস্তরি হারবাল সিরাপ অর্ধেক পান করে। এর কিছুক্ষণ পর তার প্রচণ্ড মাথা ব্যথা শুরু হয়। টানা দুই দিন তার মাথা ব্যথা ছিল। দোকানের মধ্যে তার মাথায় পানি দিতে হয়েছে।

থানা সড়কের মুদি ব্যবসায়ী নিপু জানান, হারবাল সিরাপের চাহিদা ভালো। অনেকে লোকলজ্জার ভয়ে স্লিপ পাঠিয়ে কিনে নেন। তরুণদের কাছে এর চাহিদা বেশি। দিনে অন্তত কয়েকশ বোতল বিক্রি হয়। তাই দোকানীদের লাভও ভালো হয়ে থাকে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরেক ব্যবসায়ী জানান, ভাল খারাপ বুঝিনা এগুলো কিনে নিচ্ছেন তরুণ-যুবকরা। সবাই বিক্রি করে, তাই আমিও বাজার ধরে রাখার জন্য বিক্রি করি।

রায়পুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তা মোস্তফা খালেদ বলেন, ‘উত্তেজক হারবাল সিরাপের নামে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করা হচ্ছে। এসব সিরাপ স্নায়ুকে সাময়িক উত্তেজিত করে। কিন্তু বাস্তবে এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ভয়াবহ। আছে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি। বিশেষ করে উচ্চ রক্তচাপ ও কিডনি রোগীরা এটা সেবন করলে মৃত্যুর মুখে পড়তে পারেন। এছাড়াও সেবনকারীরা নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে পাকস্থলী ও যকৃতের বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারে।

বিএসটিআইয়ের চট্টগ্রাম অঞ্চলের উপ-পরিদর্শক মো.আব্দুর রশিদ মোবাইল ফোনে জানান, বিষয়টি তাদের নজরে আছে। স্থানীয় প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়ে বিএসটিআইয়ের অনুমোদনহীন কোমল পানীয়ের বিরুদ্ধে শিগগিরই জোরালো অভিযান চালানো হবে।

(এমআরএস/এএস/নভেম্বর ০৫, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

২৭ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test