E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বরিশাল রেঞ্জ পুলিশে বদলী আতঙ্ক

২০১৪ নভেম্বর ০৮ ১৯:৪১:২৯
বরিশাল রেঞ্জ পুলিশে বদলী আতঙ্ক

আঞ্চলিক প্রতিনিধি, বরিশাল : গণবদলী আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে বরিশাল রেঞ্জের ছয় জেলার পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা। গত ১৫ দিনে বরিশাল রেঞ্জের বিভিন্ন জেলা থেকে চারটি পৃথক ডিওতে ৯৯ জন পুলিশ সদস্যকে অন্য জেলায় গণবদলীর আদেশে পুলিশের ওসি থেকে শুরু করে, সাব ইন্সপেক্টর, বিশেষ বাহিনীর সদস্য ও কনস্টবল পর্যায়ে এখন হতাশা ও আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। ছড়িয়ে পরছে চাপা ক্ষোভও। তবে মুখ খোলার সাহস পাচ্ছেন না কেউ। কারণ এসব বদলীর আদেশ দিচ্ছেন স্বয়ং রেঞ্জের ডিআইজ মো. হুমায়ুন কবির। তার গণবদলীর আদেশে ক্ষোভ দানা বেধে উঠেছে পুলিশ প্রশাসনের মাঠ পর্যায়ে। স্বস্তিতে নেই পুলিশ সুপাররাও।

পুলিশ প্রশাসনের সাথে জড়িত সাব ইন্সপেক্টর থেকে শুরু করে কনস্টবল পর্যায়ের একাধিক বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, বর্তমান ডিআইজ মো. হুমায়ুন কবির বরিশালে যোগদান করেই মাঠ পর্যায় থেকে ৩০ অক্টোবর একযোগে ১৭ জনকে বরিশাল জেলার বাইরে অন্য জেলায় বদলী করেন। এর রেশ কাটতে না কাটতেই ৩ নভেম্বর ৫৭ জন, ৬ নভেম্বর ১৭ জনসহ গত ১৫ দিনে মোট ৯৯ জনকে বদলী করেন। সূত্রগুলো বলছে, গত ১০ বছরের বেশী সময় যাবৎ যারা বরিশাল জেলায় অবস্থান করছেন তাদের তালিকা করে এই বদলীর আদেশ দেয়া হয়েছে। তবে কম বয়সীদেরও বদলীর স্বীকার হতে হচ্ছে।

সাধারণ পুলিশ সদস্যদের বক্তব্য, চাকুরীর সুবাদে বদলী হতেই হবে। তবে দেশের চলমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা, সদস্যদের ছেলে মেয়েদের চলমান জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষা, আসন্ন সমাপনী ও বার্ষিক পরীক্ষার কথা চিন্তা করে বদলী করলে এই অসন্তোষ বিরাজ করতনা।
ডিআইজ তার বদলীর আদেশে বলেছেন, বদলীকৃতদের নির্দিষ্ট তারিখের মধ্যে ছাড়পত্র নিতে হবে অন্যথায় তাদের (অবমুক্ত) স্ট্যান্ড রিলিজ করা হবে। এমন আদেশে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে পুলিশ সদস্যরা বলেন, আমরা কি কর্মক্ষেত্রে অপরাধী? যে আমাদের স্ট্যান্ড রিলিজ করা হবে? সাধারণত যারা দায়িত্ব পালনে গিয়ে অপরাধ করে তাদের ক্ষেত্রে স্ট্যান্ড রিলিজ লেখা হয়। আমরাও কি তাই? তাহলে আমাদের বদলীর ক্ষেত্রে কেন অবমুক্ত আদেশ দেয়া হবে?

আবার অনেকে বলছেন, বরিশালে এর আগে এভাবে গণবদলীর আদেশের ঘটনা আর ঘটেনি। অনেকে বলেছেন, তারা শিঘ্রই পেনশনে যাবেন, তাই পেনশনে যাওয়ার আগে নিজ জেলা থেকে পেনশনে যাওয়ার সুযোগ সরকারি ভাবেই তাদের রয়েছে। কিন্তু নোয়াখালীর বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা ডিআজি মো. হুমায়ুন তাও মানছেন না।

জেলা পুলিশের একটি সূত্র জানায়, দুএকজন এমপি-মন্ত্রীর কথায় ব্যক্তিগত কারণে পুলিশ বাহিনীর কথা চিন্তা না করেই তিনি গণবদলীতে নেমেছেন।

অন্য একটি সূত্র জানায়, ডিআইজ হুমায়ুন চেয়েছিলেন তার চাকুরীর বয়স বাকী ছয় মাসে জেলার কাছাকাছি কোন রেঞ্জে চাকুরী শেষ করতে। তাকে সুদুর বরিশাল রেঞ্জে দেয়ায় তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে গণবদলী করছেন মন্ত্রণালয়ের নজর আকৃষ্ট করার জন্য। সর্বশেষ শনিবার বিকেলেও একটি বদলীর আদেশ দেয়া হয়েছে।

পুলিশ বাহিনীর ক্ষুব্ধ সদস্যরা আরও বলেন, সরকারি ভাবে শতভাগ রেশন দিয়ে পরিবার নিয়ে শতভাগ কর্মস্থলে বসবাসের অনুমতি থাকা সত্বেও ওসি থেকে শুরু করে সাধারণ পুলিশ সদস্যদের গত ১৫ দিনে গণবদলীর আদেশে তারা ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তাদের এই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া পর্যায়ক্রমে কার্যক্ষেত্র জনগণের উপর পড়তে পারে। দেশ সেবায় নিয়োজিত সুশৃংখল পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা দেশ মাতৃকার কথা বিবেচনা করে বলেন, সরকারের বক্তব্য অনুযায়ী যে কোন সময় হতে পারে যুদ্ধাপরাধের দায়ে কামরুজ্জানের ফাঁসি। তার ফাঁসির কার্যকর হলে যেকোন সময় পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠতে পারে।
সেক্ষেত্রে নতুন কর্মস্থলে যোগদান করেই বদলীকৃত নতুন সদস্যদের দিয়ে সরকার বরিশালের কতটুকু এলাকা নিয়ন্ত্রনে রাখতে পারবে? তাছাড়া গণবদলীর আদেশের ফলে নতুন কর্মস্থলে যোগদান করতে অন্তত সাত দিন লেগে যাবে। এই সাত দিন ওই এলাকায় কিছু ঘটলে তার দায় কে নেবে ? দেশের দক্ষিনাঞ্চলীয় জেলা বরগুনা ও পটুয়াখলীতে বরাবরই জঙ্গি তৎপরতা বেশী রয়েছে। রাস পূজায় আগতদের মধ্যে জঙ্গি সংগঠনের প্রচারপত্র বিলি করার সময় গত বুধবার কুয়াকাটায় গ্রেফতারও করা হয়েছে তাদের। সেখানে সদ্য যোগদান করা একজন পুলিশ সদস্য নাশকতাকারীদের বিরুদ্ধে কতটুকু কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারে। একদিকে এই বদলীকৃতদের ভাতাদি পরিশোধ করতে সরকারের বিপুল পরিমাণ অর্থের দরকার হবে। অন্যদিকে পরীক্ষার সময় তাদের বদলীর কারণে সন্তানদের পরীক্ষার জন্য আর্থিক যোগান দিতে তাদের হিমশিম খেতে হবে।

(টিবি/এটিআর/নভেম্বর ০৮, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

১৯ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test