E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

সুন্দরবনের শুটকি পল্লীতে ভালো নেই ২৫ হাজার জেলে

২০১৪ নভেম্বর ১০ ১৮:২৪:৫০
সুন্দরবনের শুটকি পল্লীতে ভালো নেই ২৫ হাজার জেলে

বাগেরহাট প্রতিনিধি : বঙ্গোপসাগর উপকুল বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের দুবলাসহ ১১টি শুটকি পল্লীর ২৫ হাজার জেলে- বহরদ্দাররা ভালো নেই। নেই তাদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল, সুপেয় পানি, চিকিৎসা সেবা। সারাক্ষণ তাড়িয়ে বেড়ায় বনদস্যু আতঙ্ক। বছরের পর বছর ধরে শুটকী পল্লীর জেলে বহরদ্দার জীবন মৃত্যুর মুখোমুখি হয়ে দেশের জন্য শতশত কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করলেও তাগের ভাগ্য বদলে নেয়া হয়নি কোন উদ্যোগ। 

আলোরকোল শুটকি পল্লীর বহরদার গাজী গোলাম রসুল বলেন, ‘আমি ১৯৮১ সাল থেকে সুন্দরবনে এই শুটকি পল্লীতে থেকে জেলেদের দিয়ে সাগরে মাছ আহরণ করে আসছি। আমরা হাজার হাজার জেলে ও ব্যবসায়ীরা বন বিভাগকে নির্ধারিত রাজস্ব দিয়ে এই চরে অবস্থান নেই। সিডর ও আইলার মত বড় বড় দুর্যোগে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মাছ আহরণ করে থাকি। অথচ সরকার আসে সরকার যায় আমাদের সমস্যার কোন সমাধান হয় না। নেই কোন ঘুর্ণিঝড় আশ্রায় কেন্দ্র। কারিতাসের তৈরি ৪ টি আশ্রয় কেন্দ্রের মধ্যে ২ টি এখন পরিত্যাক্ত।

সেখানে কথা হয় জেলে নুরমোহাম্মদের সাথে। তিনি বলেন, কি কমূ ভাই আমাদের ভাগ্যের কথা। স্ত্রী,সন্তান ও আত্মীয় স্বজন রেখে সাগরে মাছ ধরতে আসি। বনে বাঘ,পানিতে কুমির ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ মাথায় নিয়ে প্রায় ১৬ বছর ধরে জীবন বাচাঁতে মাছ ধরার কাছ করি। তারপরও ডাকাইতের ভয়। কোথায় যাব বাব দাদার আমল থেকে জেলে হিসেবে কাজ করে আসছি। খাবার পানি সমস্যা ও জ্বরজারিসহ অসুখ ওইলে কেউ দেখার নেই। মোগো দাবি সরকারের কাছে যাতে মোরা অসুধসহ ডাক্তার পাই-পুকুরের খাবার পানি পাই। ঝড় অইলে থাকার ব্যবস্থা চাই’।

দুবলা ফিসারম্যান গ্রুপের কো চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন বলেন, সুন্দরবনের শুটকি পল্লী এলাকার ১৯ টি চরে কমপক্ষে ১টি করে ঘুর্নিঝড় আশ্রয়ন কেন্দ্র ও পুকুর খনন করা জরুরী। শুটকি মৌসুমের জন্য সার্বক্ষনিক ওষুধসহ একজন সরকারি ডাক্তার প্রয়োজন। বনদস্যুদের অপতৎপরতা ও গভীর সমুদ্রে ভিন দেশী জেলেদের অনুপ্রবেশ রোধে সার্বক্ষনিক কোষ্টগার্ড ও নৌবাহিনীর জনবল বাড়িয়ে নজরদারী জোরদার করা প্রয়োজন।

প্রতি বছর অক্টোবর মাস থেকে ৫ মাসব্যাপী চলে সুন্দরবন উপকুলে শুটকি আহরণ। পূর্ব সুন্দরবন বিভাগ থেকে নির্ধারিত রাজস্ব পরিশোধ করে পাশ-পারমিট নিতে ডিপো মালিক, বহরদারসহ এসব জেলেরা শুটকি আহরণে যায়। বঙ্গোপসাগরসহ বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগে কমপক্ষে ১৭টি বনদস্যু বাহিনীর মুক্তিপণের দাবিতে জেলে ও বনজীবীদের অপহরন বানিজ্যের কারনে আতংকে থাকতে হয় জেলে, বহরদার ও ডিপো মালিকদের। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া মধ্যে ঝড়-জলোচ্ছ্বাস ও বনদস্যুদের উৎপাত আশংকার মধ্যেও জীবন জীবিকার তাগিদে সাগর পাড়ের চরাঞ্চালে অবস্থান নেয় এসব হত দরিদ্র জেলেরা।

জেলেদের সার্বিক বিষয়টি সরেজমিনে দেখতে এই প্রথম বারের মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রনালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এ্যাডভোকেট মীর শওকাত আলী বাদশার নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল ৩ দিনের সফরে সুন্দরবনের শুটকী পল্লীতে যান। তিনি জেলেদের সাথে মতবিনিময় কালে বলেন, ভারত ও মিয়নমারের কাছ থেকে সমুদ্র বিজয়ের পর সরকার বিস্তৃত সমুদ্র সম্পদ রক্ষায় ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহন করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় মৎস্য ও প্রানী সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির নেতৃবৃন্দ সুন্দরবনের শুটকী পল্লীর আলোরকোলে এসেছেন। সেখানের জেলেদের সমস্যা নিয়ে প্রতিনিধি দল কথা বলেন। সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি জেলেদের সমস্যা দ্রুত সমাধানের আশ্বাস দেন।

বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত মৌসুমে পল্লীর জেলেদের আহরিত ২৫ হাজার ২’শ ৩৮ কুইন্টাল শুটকি মাছ থেকে সুন্দরবন বিভাগের রাজস্ব আয় করে ১ কোটি ২৭ লাখ ৯ হাজার টাকা। গত শুটকি মৌসুমে ৫৫ জন ডিপো মালিক,১৩ জন বহরদার, ৮৯৫টি জেলে ঘরে থেকে প্রায় ২৫ হাজার জেলে শুটকির জন্য মাছ আহরণ করে। এবছর সুন্দরবনের ১১টি চরে শুটকির জন্য মাছ আহরণে বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগে ১১৫ জন ডিপো মালিক, ১২ জন বহরদার, ৩ হাজার ৪’শটি অস্থায়ী ঘর তৈরি করে শুটকী প্রক্রিয়াজাত করছে। সমুদ্রে মৎস্য আহরণ ও শুটকি মৌসুমকে ঘিরে সুন্দরবনের দুবলার চর, মেহেরআলীর চর, আলোরকোল, অফিসকিলল্লা, মাঝের কিলল্লা, শেলার চর, নারকেলবাড়িয়া, মানিকখালী, চাপড়াখালীর চর, কোকিলমনি ও হলদাখালী চরে অবস্থান নেয় এসব জেলে ও বহরদ্দাররা।

(একে/এএস/নভেম্বর ১০, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

২৫ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test