E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

পুরান ঢাকার হোটেলগুলো মাদক ও পর্নোছবি তৈরীর আখড়া

২০১৪ নভেম্বর ১২ ১১:৪১:৩৭
পুরান ঢাকার হোটেলগুলো মাদক ও পর্নোছবি তৈরীর আখড়া

বিশেষ প্রতিবেদক : রাজধানীর পুরান ঢাকার হোটেলগুলো এখন পর্নোছবি তৈরী এবং মাদক ব্যবসায়ের ঘাঁটি হিসাবে পরিনত হয়েছে। আর এর ফলে অতিষ্ট এলাকাবাসী। কিন্তু এসব বন্ধ করার জন্য নেই তেমন কোনো উদ্দ্যোগ। কোথাও কোথাও দেখা যায় প্রশাসনও হোটেল মালিকদের ভাড়াটে সন্ত্রাসের কাছে ভয়ে চুপ করে থাকতে বাধ্য হয়। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রশাসন বিক্রি হয়ে যাচ্ছে এই সব হোটেল মালিকদের সামান্য অর্থের কাছে। পুরান ঢাকার তেমনই একটি হোটেল পর্যবেক্ষন করেছিল উত্তরাধিকার৭১ নিউজ।

উল্লেখ্য, গত রোববার রাতে পর্নোছবি তৈরি করতে গিয়ে রাজধানীর পুরান ঢাকার নবাব কাটরা নিমতলীর এলাকার হোটেল সুফিয়া থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচজন শিক্ষার্থীসহ ১১ জনকে আটক করে বংশাল থানা পুলিশের হাতে তুলে দেয় এলাকাবাসী। এসময় তাদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ পর্নোভিডিও, পর্নোসিডি, পর্নো ম্যাগাজিন, পর্নোমুভি তৈরির সরঞ্জাম ও একটি ল্যাপটপ উদ্ধার করা হয়। আটককৃতদের মধ্যে চারজন মেয়ে ও সাতজন ছেলে বলে জানা গেছে।

নিমতলীর হোটেল সুফিয়া থেকে পর্নোছবি তৈরীর অপরাধে ১১জন শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়েছিল এই রবিবার। সেই কথা মাথায় রেখেই উত্তরাধিকার৭১ নিউজ পর্যবেক্ষন করেছিল হোটেল সুফিয়ার বর্তমান অবস্থা।

নিমতলীর হোটেল সুফিয়ার চিত্র

হোটেল সুফিয়ায় গিয়ে দেখা যায় হোটেলটি তালাবদ্ধ। কিন্তু তালাবদ্ধ থাকলেও স্থানীয় পুলিশ ফাঁড়ির কর্মরত পুলিশ সদস্যরা কিছুক্ষণ পরপর হোটেল কর্তৃপক্ষের লোকজনকে ভেতরে প্রবেশ করতে এবং বের হতে সহায়তা করছে।
স্থানীয়দের সাথে এই বিষয়ে কথা বলে জানা যায়, পর্নোছবি তৈরি, বাজারজাত আর মাদক ব্যবসার আখড়ায় পরিণত হয়েছিল রাজধানীর পুরান ঢাকার নবাব কাটারা-নিমতলী এলাকার হোটেল সুফিয়া। এখান থেকে শুধু পর্নোছবি তৈরীই নয়, মদ, গাঁজা, ফেন্সিডিল, ইয়াবাসহ বিভিন্ন প্রকার মাদক দ্রব্য আশে পাশের এলাকায় সরবরাহ করাও হতো।

তারা বলেন, মাঝে মাঝেই হোটেল সুফিয়াতে এ ধরনের অপকর্ম হয়ে আসছে। স্বামী-স্ত্রীর পরিচয়ে এই ধরনের অপকর্ম করা হচ্ছে র্দীঘদিন ধরে।

তারা আরোও অভিযোগ করে বলেন, স্থানীয় পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ জাহাঙ্গীর এসে হোটেলের সামনে কিছুক্ষন পরপর টহল দিচ্ছেন এবং হোটেলের স্টাফদের যখন তখন ভেতরে প্রবেশ করতে আর বের হতে সাহায্য করছেন।

এ বিষয়ে নবাবকাটারা সমাজকল্যাণ সংগঠন ও পঞ্চায়েত কমিটির সাধারন সম্পাদক নাসির উদ্দিন সরকার জানান, হোটেল সুফিয়ার মালিক খন্দকার ফরিদ উদ্দিন খুব ভালো মানুষ। দীর্ঘদিন ধরে তিনি এ হোটেলটি পরিচালনা করে আসছিলেন। কিন্তু শারিরীক অসুস্থতার তিনি কয়েক বছর ধরে লন্ডনে অবস্থান করছেন। তার অবর্তমানে হোটেল দেখাশোনার দায়িত্ব পালন করছেন তার ভাতিজা রায়হান।

তিনি বলেন, আশেপাশের এলাকায় হোটেল সুফিয়ার বেশ সুনাম ছিল। কিন্তু সাত/আট মাস ধরে এখানে এ ধরনের অনৈতিক কার্যকলাপ চলছে। এ বিষয়ে অনেকবার হোটেল মালিক প্রবাসী ফরিদ উদ্দিনকে জানানোর চেষ্টা করেও আমরা যোগাযোগ করতে পারিনি। তবে তার ভাতিজা রায়হানকে এ বিষয়ে জানালেও তিনি কোন ব্যবস্থা নেননি।

তিনি বলেন, হোটেলের ম্যানেজার নজরুল এবং তার ভাই মফিজুল এ সকল অপকর্মের মূল হোতা। আর প্রশাসনিকভাবে তাদের যাবতীয় সহযোগীতা করেন স্থানীয় পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ জাহাঙ্গীর। ঘটনার দিন ম্যানেজার নজরুলকে গ্রেফতার করলেও পরদিন বিকালেই তিনি জামিনে বের হয়ে আসেন বলেও অভিযোগ করেন নাসির।

এ বিষয়ে ৩৩নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সভাপতি মো. আমিন বলেন, শুধু পর্নোগ্রাফিই নয়, দেহ ব্যবসাসহ মাদক সরবরাহও করা হয় এ হোটেলে। মদ, গাঁজা, ফেন্সিডিল ও ইয়াবাসহ বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্য এখানে এনে তারপর হোটেল থেকে বিভিন্ন গ্রুপের কাছে ভাগ করে দেয়া হয়। যা এলাকার বিভিন্ন স্পটে বিক্রি করা হয়।

আমিন বলেন, এ সকল ঘটনার প্রতিবাদ জানানোয় এবং প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করায় রবিবার রাতে হোটেল কর্তৃপক্ষের ভাড়াটে মাস্তানরা অস্ত্র দেখিয়ে তাদের ভয় দেখিয়েছে।

বংশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল কুদ্দুছ ফকির জানিয়েছেন, আটককৃত ১১ জনের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ হোটেলের কিছু স্টাফ রয়েছে। তাদের আমরা ডিএমপি অ্যাক্টের ৭৪ ধারায় তাদের আদালতে পাঠিয়েছি। তাই এ বিষয়ে এখন আর কিছু বলতে পারছি না।

হোটেল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে কোন এ্যাকশন নেয়া হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আপাতত আমরা হোটেলটি তালাবদ্ধ করে রেখেছি। অর্ডার ছাড়া এ্যাকশন গ্রহণের কোন এখতিয়ার আমাদের নেই। উপর থেকে অর্ডার আসলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

এদিকে হোটেল সুফিয়া বন্ধ এবং অপরাধীদের শাস্তির দাবিতে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে স্মারকলিপি প্রদান ও মানববন্ধন কর্মসূচির সিদ্ধান্ত নিয়েছে নবাব কাটারা-নিমতলীর এলাকাবাসী।

এ বিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, আগামী শুক্রবার আমরা এখানে হোটেলটি বন্ধ করে দেওয়া আর অপরাধীদের বিচারের দাবিতে একটি মানববন্ধন করবো। এছাড়াও একই দাবিতে জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করবো।

তারা বলেন, পুরান ঢাকায় এবং এর আশেপাশে এই রকম অনেক হোটেল গড়ে উঠেছে যেগুলোতে প্রতিনিয়ত এই ধরনের অপকর্ম হয়ে চলেছে। এরকম বহু হোটেল সুফিয়া রয়েছে। আসলে প্রশাসকে কঠোর হতে হবে এই সব ব্যাপারে। অর্থের কাছে বিকে না গিয়ে এগুলোকে র্নিমূল করতে হবে। তবে আমাদের আশঙ্কা রয়েছে প্রশাসন আবারও হোটেলটি খুলে দিতে পারে।

(এমএম/এইচআর/নভেম্বর ১২, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

১৯ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test