E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে গ্রাহকদের ভোগান্তি চরমে

২০১৪ ডিসেম্বর ০২ ১৬:৫৪:৪১
আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে গ্রাহকদের ভোগান্তি চরমে

শরীয়তপুর প্রতিনিধি : কয়েকদিন আগে ভ্রাম্যমাণ আদালত ও পুলিশের অভিযানে শরীয়তপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস দালাল শুন্য হয়। দালাল তাড়ানোর প্রতিবাদে ফরম জমা নেয়া ও নতুন পাসপোর্ট ইস্যু বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। এতে সীমাহীন ভোগান্তিতে পরে পাসপোর্ট গ্রাহকরা। এক সপ্তাহ বন্ধ থাকার পর কার্যক্রম স্বাভাবিক করা হলেও ভোগান্তি কমেনি গ্রাহকদের।

গত ২৫ নভেম্বর মঙ্গলবার দুপুরে শরীয়তপুর সদর থানা পুলিশ দালালদের ধরার জন্য পাসপোর্ট অফিস এলাকায় অভিযান চালিয়ে সোহাগ ও রাজু নামে দুই দালালকে আটক করেন। এসময় রাজুকে এক মাস কারাদন্ড ও সোহাগকে ৫ শত টাকা জরিমানা করেন নির্বাহী মেজিস্ট্রেড এ,এফ,এম ফিরুজ মাহমুদ। এর পর কর্মকর্তা ও দালালদের যোগসাযোসে ওই দিন দুপুরের পর থেকেই যান্ত্রিক ক্রটিজনিত কারণ দেখিয়ে আবেদন পত্র জমা নেয়া ও পাসপোর্ট সরবরাহ বন্ধ করে দেন অফিসের সহকারি পরিচালক মেহেদী হাসান। ফলে প্রতিদিন শত শত গ্রাহক ভোগান্তির শিকার হতে থাকে। এক সপ্তাহ পরে সোমবার অফিসের কার্যক্রম শুরু করা হলেও আগের নিয়মে ফরমে ত্রুটি দেখিয়ে ফেরত পাঠানো হচ্ছে সেই দালালদের কাছেই।

শরীয়তপুর পাসপোর্ট কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, শরীয়তপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের মাধ্যমে মেশিন রিডবল পাসপোর্ট করানোর কাজ শুরু হয়েছে গত ১৮ জুন থেকে । শুরু থেকেই পাসপোর্ট অফিসের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারি এবং চিহ্নিত কিছু দালাল পাসপোর্ট করতে আগ্রহী নাগরিকদের কাছ থেকে প্রকাশ্যে প্রতিটি পাসপোর্টের বিপরিতে ১ হাজার ২ শত টাকা অরিক্তি ফি আদায় করছে। পাসপোর্ট আবেদনকারীরা জানিয়েছেন ১ মাসের মধ্যে স্বাভাবিক পাসপোর্ট করার জন্য ব্যাংকে ৩ হাজার ১ শত টাকা জমা দিতে হয় এবং ১৫ দিন মেয়াদের মধ্যে জরুরী ভিত্তিতে পাসপোর্ট করার জন্য ব্যাংকে জমা দিতে হয় ৬ হাজার টাকা। এর পরেও নানা ধরনের অযুহাত দেখিয়ে এবং হয়রানী করে অফিসের কর্মকর্তারা অতিরিক্ত ফি না দিলে কাউকেই পাসপোর্ট দিচ্ছে না। গত প্রায় ৬ মাসে শরীয়তপুর আঞ্চলিক অফিসের মাধ্যমে সাড়ে ১১ হাজার মেশিন রিডবল পাসপোর্ট করানো হেয়ছে। এ হিসেব অনুযায়ী ১ কোটি ২০ লাখ টাকারও বেশী ঘুষ নিয়েছে দালাল ও কর্মচারীরা।

একটি সূত্র থেকে জানা গেছে, শরীয়তপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসকে ঘিরে অন্তত ২০ জন দালালের একটি চক্র স্বক্রিয় রয়েছে। এদের মধ্যে রাজনৈতিক পরিচয়ের কর্মী থেকে শুরু করে সংবাদকর্মীও রয়েছে। শরীয়তপুরে কর্মরত প্রভাবশালী কয়েকটি প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়ার কর্মীরা এই দালালচক্রের অন্যতম হোতা। অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, কর্মকর্তাদের সাথে একটি অভিনব চুক্তির মাধ্যমে ভদ্রবেশী দালাল হিসেবে কাজ করছে তারা। এই দালালরা প্রথমে গ্রাহকদের দিয়ে অফিস থেকে ফরম তুলে নেয়। পরে ফরম পুরণ থেকে শুরু করে ব্যাংকে টাকা জমা ও নির্ধারিত ডেস্কে ফরম জমা দেয়ার দায়িত্বটি তারা পালন করে। বিনিময়ে গ্রাহকের কাছ থেকে প্রতি পাসপোর্টের বিপরিতে অতিরিক্ত ১ হাজার ২ শত টাকা গ্রহন করে। ১ হাজার ২ শত টাকা থেকে সাধারন দালালেরা নিচ্ছে ২ শত টাকা বাকি ১ হাজার টাকা তুলে দিচ্ছেন কর্মকর্তাদের হাতে। অপরদিকে ভিআইপি দালাল নামে পরিচিত মিডিয়া কর্মীরা নিজেরা ১ হাজার টাকা রেখে অফিসকে দিচ্ছে ২ শত টাকা। জানা গেছে, পাসপোর্ট অফিসের সহকারি পরিচালক মেহেদী হাসান, কর্মচারী জহিরুল ইসলাম ও মোশাররফ হোসেন সরাসরি ঘুষের টাকা গ্রহন করেন।

ভোগান্তির শিকার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জাজিরা উপজেলার একজন পাসপোর্ট গ্রাহক বলেন, আমি একটি জটিল রোগে আক্রান্ত। আমাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আমার চিকিৎসক জরুরী ভিত্তিতে ভারতের ভেলুরে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। আমি ৮ দিন আগে ফরম এনে জনৈক দালালের হাতে তুলে দিয়েছি। আমার ইমারজেন্সি পাসপোর্ট করা দরকার। কিন্তু আমার ফরম এখনো জমাই হয়নি বলে শুনছি। সময়মত পাসপোর্ট করে ভারতে যেতে না পারলে আমার জীবন সংকটাপন্ন হয়ে পরবে।

সোমবার পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে দেখা গেছে, আগের মত করেই বিভিন্ন ভুল দেখিয়ে গ্রাহকদের ফরম ফেরত দেয়া হচ্ছে। পাসপোর্ট গ্রাহক আব্দুল জাব্বার, অজিত কুমার, কাশেম জমাদ্দার বলেন, আমরা নিজেরা পাসপোর্ট করার ফরম উঠিয়ে তা পুরন করে জমা দিতে গেলে বিভিন্ন ধরনের ভুলভ্রান্তি ও কাটা ছেড়ার অযুহাত তুলে কর্মকর্তারা ফেরত দিয়ে দেয়। এরপর বাধ্য হয়ে দালালের কাছে যেতে হয়েছে। দালালদের সাথে ১২ শত টাকা ঘুষ দেয়ার চুক্তি হলে তারা সব ঠিকঠাক করে দিচ্ছে। ভুক্তভোগিরা জানান, আসলে প্রত্যেকটি দালাল অফিসারদের নিয়োগকৃত বলে আমরা প্রমান পেয়েছি।

শরীয়তপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সহাকরি পরিচালক মো. মেহেদী হাসান বলেন, বেশ কিছুদিন থেকেই পাসপোর্ট প্রিন্ট করার ক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছিল। তাই যান্ত্রিক ত্রুটিজনিত কারণে গত মঙ্গলবার দুপুর থেকে আবেদন পত্র জমা নেয়া ও পাসপোর্ট সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছিল। এখন স্বাভাবিক হয়েছে। দালাল সম্পর্কিত একটি প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখানে কোন দালাল রয়েছে বলে আমার জানা নেই।

(কেএনআই/এএস/ডিসেম্বর ০২, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test