E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

আতাইকুলা বধ্যভূমি : ৪৩বছরেও লাগেনি উন্নয়নের ছোঁয়া

২০১৪ ডিসেম্বর ১২ ১৭:৫৩:০৪
আতাইকুলা বধ্যভূমি : ৪৩বছরেও লাগেনি উন্নয়নের ছোঁয়া

নওগাঁ প্রতিনিধি : নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার আতাইকুলা গ্রামে মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বহনকারী ঐতিহাসিক বধ্যভূমিতে স্বাধীনতার দীর্ঘ ৪৩ বছর অতিবাহিত হলেও আজও কোন উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। পাকি-হানাদার বাহিনীর হাতে নিহত ৫২ শহীদদের পরিবার এখনও পায়নি কোন সাহায্য সহায়তা। পায়নি কোন বিধবা ভাতা কিংবা বয়স্ক ভাতা। বাড়ির কর্তাদের হারিয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছে এখানকার মুক্তিকামী শহীদ পরিবারের সদস্যরা।

এই বধ্যভূমিটি শহীদ পরিবারের সদস্যরা নিজেদের উদ্দ্যোগে কোন রকমে ইটের প্রাচীর দিয়ে ঘিরে রেখেছে মাত্র। শহীদদের স্মৃতি রক্ষার্থে এলাকাবাসীদেরও দাবী এই বধ্যভূমি স্থানে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের। ওই দিনের নারকীয় ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়েও বেঁচে যাওয়া আতাইকুলা গ্রামের প্রদ্যুত চন্দ্র পাল, সাধন চন্দ্র পাল ও নিখিল চন্দ্র পাল ওই দিনের করুন হত্যাযজ্ঞের কাহিনী অশ্রুসিক্ত নয়নে বর্ণনা করে বলেন, ১৯৭১ সালের ২৫ এপ্রিল রবিবার সকাল ১০টায় ছোট যমুনা নদী পার হয়ে আসে একদল হানাদার বাহিনী। মুক্তিযোদ্ধারা এই গ্রামে আছে বলে তারা সন্দেহ করে প্রথমে গ্রামটিকে ঘিরে ফেলে প্রতিটি বাড়ি থেকে নগদ টাকা স্বর্নালংকাসহ বাড়ির নারী পুরুষকে ধরে নিয়ে ওই গ্রামের বলরাম চন্দ্রের বাড়ির উঠানে নিয়ে যায়। সেখানে পুরুষদের উঠানে সারিবদ্ধ করে দাঁড়িয়ে রাখে আর উঠানের পাশেই নারীদের এক ঘরে রাখে। একের পর এক নারীদের ওপরে চালায় পাশবিক নির্যাতন। পরে সারিবদ্ধ পুরুষদের ওপরে চলে ব্রাশ ফায়ার। মুহুর্তের মধ্যেই ওই গ্রামের ৫২ জন শহীদ হন। পরে তারা বিভিন্ন বাড়িতে লুটপাটসহ অগ্নিসংযোগ করে চলে যায়। শহীদদের মধ্য থেকে গুলিবিদ্ধ হয়েও কোন রকমে প্রানে বেঁচে যায় প্রদ্যুত পাল, সাধন পাল ও নিখিল পাল। প্রদ্যুত পাল জানান, ওই দিন তার বাবা, কাকা জ্যাঠা এবং গ্রামের লোকজনের সঙ্গে তাকেও সারিবদ্ধ করে ব্রাশ ফায়ার চালানো হয়েছিল। মুহুর্তের মধ্যে প্রাণ হারায় ৫২ জন লোক।

হানাদার বাহিনীরা চলে যাবার পর রক্তাক্ত ও গুলিবিদ্ধ অবস্থায় লাশের মধ্য থেকে কোন রকমে বেঁচে গিয়ে তিনি তার বাড়িতে যান। তিনি জানান সবাইকে হারিয়ে আমরা নিঃস্ব হয়েছি। স্বাধীনতার ৪৩ বছর পার হলেও কোন সরকারের আমলে কোন শহীদ পরিবার এখনও কোন সাহায্য সহায়তা পায়নি। কোন স্মৃতিস্তম্ভও গড়ে ওঠেনি এই বধ্যভূমিতে।

শহীদ পরিবারের সদস্যরা জানান, বিগত ১৯৯৬ সালে সাবেক সংসদ সদস্য শাহিন মনোয়ারা হক নিজ উদ্যোগে কিছু অনুদান দিয়ে কোন রকমে ফলকে শহীদদের নাম লিপিবদ্ধ করলেও পরবর্তীতে আর কোন কাজ হয়নি। বধ্যভূমিটি পড়ে আছে অযত্ন আর অবহেলায়। সাধন পাল জানান, ৩ দিন ৫২টি লাশ পরে থাকার পর পাশের গ্রামের লোকজনরা কোন রকমে ঘটনাস্থলের পাশেই মাটি খুঁড়ে পুঁতে রাখে। নিখিল পাল জানান, যুদ্ধে বেঁচে গেলেও আজও তাদের ভাগ্যের কোন উন্নতি হয়নি। কোন রকমে হারিয়ে যাওয়া পাল সম্প্রদায়ের মাটির ব্যবসা করে বেঁচে আছে তারা। অবিলম্বে সরকারি ভাবে শহীদদের স্মৃতি রক্ষার্থে সেখানে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হোক এবং এই সব অসহায় সুবিধা বঞ্চিত শহীদ পরিবারগুলোকে যথাযথ মর্যাদা প্রদান করা হোক বলে জোর দাবি এলাকাবাসী ও শহীদ পরিবারের সদস্যদের।

(বিএম/এএস/ডিসেম্বর ১২, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

১৬ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test