E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সুন্দরবনে মাছ ধরতে না পারায় সহস্রাধিক জেলে বেকার

২০১৪ ডিসেম্বর ১৫ ১৪:৩০:৩৪
সুন্দরবনে মাছ ধরতে না পারায় সহস্রাধিক জেলে বেকার

বাগেরহাট প্রতিনিধি : পূর্ব সুন্দরবনের চাদঁপাই রেঞ্জ সংলগ্ন বাগেরহাটের মংলা উপজেলার জেলেরা নদী খালে মাছ শিকার করতে না পারায় জীবিকা নির্বাহ করা সহস্রাধিক জেলে পরিবার বেকার সময় পার করছেন। শ্যালা নদ-নদীর খালে তেল ভেসে থাকায় তারা জাল ফেলে মাছ শিকার করতে পারছেন না ওখানকার জেলেরা।

এ অবস্থা চলতে থাকলে সুন্দরবনের নদী খালের উপর নির্ভরশীল এসব জেলে পরিবারকে অর্ধাহারে অনাহারে কাটাতে হতে পারে বলে তারা আশংকা করছেন। দিন যাচ্ছে আর জেলেদের উদ্বেগ বাড়ছে। তবে বনবিভাগ বলছে এই অবস্থা সাময়িক। তাছাড়া এখন সুন্দরবনে (ভাটা) মরা গোন চলছে। ভাটার সময় এসব নদী খালে মাছও কম পাওয়া যায়। আগামী ৪-৫দিনের মধ্যে এই অবস্থার পরিবর্তন হয়ে গেলে জেলেরা আবার নদী খালে মাছ শিকার করতে পারবে বলে তারা দাবী করেছেন বন বিভাগ।

পূর্ব সুন্দরবনের চাদঁপাই রেঞ্জ সংলগ্ন বাগেরহাটের মংলা উপজেলার চিলা ইউনিয়নের জয়মনি, জয়মনিরঘোল, চরের খাল,বাশতলা, বৈদ্ধমারী এবং কাটাখালী গ্রামের জেলেদের সঙ্গে কথা হলে এখর জানান তারা

চরের খাল গ্রামের বাসিন্দা জেলে মুজিবুর রহমান (৪০) বলেন, ‘সুন্দরবনের শেলা নদীতে বাগদা চিংড়ির রেণু পোনা এবং সাদা মাছ শিকার করে আমার সংসার চলে। কিন্তু গত মঙ্গলবার দুপুরের পর এই নদীতে থোকা থোকা তেল ভেসে আসতে শুরু করে। ওই সময়ে আমরা শেলা নদীতে কয়েকশ জেলে মাছ শিকার করছিলাম। ওই তেল দেখে আমরা নদী থেকে জাল তুলে নিয়ে বাড়িতে ফিরে আসি। ওই দিনের পর আমরা আর নদীতে জাল ফেলতে পারিনি। সংসার চালাতে আমাদের খুব কষ্ট হচ্ছে।

জয়মনি গ্রামের কালাম সরদার (৩৮) বলেন, ‘নেটজাল পেতে আমি বাগদা চিংড়ির রেণু পোনা সংগ্রহ করি। নেটজাল পাতলে তাতে নদীতে ভেসে থাকা তেল জালে আটকে গেলে আমার ভীষণ ক্ষতি হয়ে যাবে। ওই নেটজাল কিনতে আমার প্রায় পাঁচ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। তাই আমরা নদীতে মাছ ধরা বন্ধ রেখেছি। এই অবস্থা চলতে থাকলে আমাদের অনাহারে অর্ধাহারে থাকতে হবে বলে তিনি শংকা প্রকাশ করছেন।

কাটাখালী গ্রামের জেলে অরবিন্দু রায় (৪২) বলেন, নদীতে তেল ভাসার পর আমরা জেলেরা বেকার হয়ে পড়েছি। আমাদের কিছু পরিবার নদীতে ভেসে থাকা তেল সংগ্রহ করে এবং বনভিাগের কাজে অংশ নিয়ে কিছু টাকা রোজগার করছে। তবে বড় অংশই হাতগুটিয়ে বসে রয়েছে। এই অবস্থা চলতে থাকলে আমাদের চুলায় হাড়ি চড়বে না অনাহারে কাটাতে হতে পারে।

চিলা ইউনিয়ন পরিষদের ৮ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. লুৎফর রহমান বলেন, আমার ওয়ার্ডে চার থেকে পাঁচশ পরিবার সুন্দরবনের নদীখালে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। বুধবার থেকে ওইসব জেলে পরিবার নদীখালে মাছ শিকার বন্ধ রেখেছে। এই কয়দিন সংসার চালাতে তাদের খুব কষ্ট হচ্ছে। জেলেদের জালে তেল জড়িয়ে তা নষ্ট হওয়ার আশংকায় তারা বর্তমানে বসে রয়েছে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে তারা আবার স্বস্ব কর্মে ফিরে যেতে পারবে বলে আশা করছি।

চিলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ সফিকুল ইসলাম রাসেল বলেন, এই ইউনিয়নে তিন থেকে চার হাজার পরিবার সুন্দরবনের উপর নির্ভরশীল। নদীখালে তেল ছড়িয়ে পড়ার পর তারা বর্তমানে নদীতে জাল ফেলা বন্ধ রেখেছে। তবে এরমধ্যে বেশকিছু পরিবার তেল তোলার কাজে যোগ দিয়েছে। ওই তেল বিক্রি করে অনেকে ভাল টাকা রোজগার করছেন। আর যারা তেল তুলতে পারছেন না তারা বেকার হয়ে বসে আছেন।

এসব বিষয়ে সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) আমির হোসাইন চৌধুরী সোমবার সকালে বলেন, তেলবাহী ট্যাংকার ডুবির পর শেলা ও পশুর নদীতে তেল ভেসে থাকায় এই নদীর উপর নির্ভরশীল জেলেরা মাছ শিকার বন্ধ রেখেছে। এতে শেলা নদীর সংলগ্ন জেলেরা বেকার দিন পার করছেন। তাদের সংসার চালাতে কিছুটা অসুবিধা হচ্ছে। তবে বর্তমানে বেকার বসে থাকা শতাধিক জেলেকে টাকার বিনিময়ে কাজে নিয়েছি তারা কাজ করছে এবং নদীতে ভেসে থাকা তেল তুলেও কিছু জেলে পরিবার ভাল টাকা আয় করছেন। সাময়িক হচ্ছে। আগামী অমাবশ্যায় জোয়ারের আগে এই সমস্যা কেটে যাবে এবং এসব জেলেরা আবার নদীতে মাছ শিকার শুরু করতে পারবে বলে দাবি করেন তিনি।

(একে/এএস/ডিসেম্বর ১৫, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

১৮ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test