E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সেই চরে স্কুল হয়নি

২০১৫ জানুয়ারি ০৬ ১৪:৫৮:১৮
সেই চরে স্কুল হয়নি

শরীয়তপুর প্রতিনিধি : জেলা প্রশাসক প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, নতুন বছরের শুরুতে যেদিন থেকে স্কুলে স্কুলে নতুন পাঠদান শুরু হবে সেদিন থেকেই এই চরের সুবিধা বঞ্চিত ছয় শতাধিক শিশু নতুন স্কুল ভবনে তাদের শিক্ষা গ্রহন শুরু করবে। মুছে যাবে তাদের শিক্ষার আলো থেকে অন্ধকারে থাকার গ্লানি। সমগ্র চরাঞ্চল জুড়ে ছড়িয়ে পড়বে আলোক রশ্মি। কিন্তু না, কেউ কথা রাখেনি, সেই চরে স্কুল হয়নি। বছরের প্রথম দিন দেশের কোটি শিশুর মত হাতে নতুন পাঠ্যপুস্তুক তুলে নেবার সৌভাগ্য হয়নি সব হারানো এইসব ভাগ্য বঞ্চিত চর শিশুদের।

গত ৩০ নভেম্বর একটি দৈনিকে শরীয়তপুরের বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলের প্রাথমিক শিক্ষার পশ্চাদপদতা নিয়ে “শরীয়তপুরে অর্ধলক্ষাধিক শিশু প্রাথমিক শিক্ষা বঞ্চিত” শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। এরপর ৩ ডিসেম্বর শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক শরীয়তপুরের গোসাইরহাট উপজেলার কয়েকটি চরাঞ্চল পরিদর্শনে যান। এ সময় তার সফরসঙ্গী হন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, গোসাইরহাট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, উপজেলা শিক্ষা অফিসার, কোদালপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, স্থানীয় একটি বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থার প্রধান নির্বাহীসহ ডজন খানেক গণমাধ্যমকর্মী। চর পরিদর্শনে গিয়ে তিনি প্রকাশিত সংবাদের সত্যতা খুঁজে পান।

উপজেলার কোদালপুর ইউনিয়নে পদ্মা-মেঘনার মধ্যবর্তি এলাকায় জেগে ওঠা মাঝের চরে গিয়ে তিনি প্রত্যক্ষ করেন সেখানে ৬ থেকে ১২ বছর বয়সের শিক্ষা বঞ্চিত অন্তত ৬ শতাধিক শিশু রয়েছে। তাদের জন্য সরকারিভাবে শিক্ষা প্রদানের কোন সুযোগ নেই। নেই কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এইসব শিশুদের মধ্যে মাত্র ৬০ জন শিশুকে একটি স্থানীয় এনজিও বিদেশী দাতা সংস্থার অর্থায়নে প্রাক প্রাথমিক শিক্ষা প্রদান করতো। গত ৩১ ডিসেম্বর ওই প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। প্রকল্পটি নবায়ন করা না হলে মাত্র ৬০ জন শিশুও আর এই সামান্য অক্ষর জ্ঞানের সুযোগ পাবেনা।

ওই দিন জেলা প্রশাসক মাঝেরচর পরিদর্শন শেষে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ও গোসাইরহাট উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে নির্দেশ প্রদান করেন জেলা প্রশাসনের অর্থায়নে ৩১ ডিম্বেরের মধ্যে কাঠ ও টিন দিয়ে স্কুলঘর তৈরি করে ২০১৫ সালের ১ জানুয়ারি থেকে সেখানে শিশুদের পড়ার লেখার যাবতীয় সুযোগ করে দিতে। কিন্তু এ নির্দেশনার একমাস পার হয়ে গেলেও তা বাস্তবায়নের কোন নমুনা দেখা যায়নি। তবে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা এসডিএস নিজেদের উদ্যোগে একটি স্কুলঘর নির্মাণ করে সেখানে ১ থেকে দেড় শত শিশুকে উপ-আনুষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রমের আওতায় প্রাক প্রাথমিক শিক্ষা প্রদান করবে বলে জানা গেছে।

মাঝেরচরের যুবক মোহাম্মদ আলী খালাসী জানান, আমাদের চরে ৬-৭ শত শিশু রয়েছে। তাদের মধ্যে মাত্র ৮০-৯০ জন বাচ্চাকে তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত পড়াতো একটি এনজিও। জানুয়ারীর ২ তারিখ থেকে সারা দেশে নতুন ক্লাস শুরু করলেও এখানকার স্কুল এখন পর্যন্ত বন্ধ রয়েছে। শুনেছি পুরোনো ছোট দুটি স্কুল ঘর ভেঙ্গে নতুন একটি বড় ঘর তুলে সেখানে স্কুল চালু করবে। কিন্তু সেই কাজ আজো শুরু হয়নি।

মাঝের চরের বাসিন্দা মনসুর কাজীর ছেলে মহিউদ্দিন ও মোবারক হাওলাদারের শিশু কন্যা কাকলি আক্তার জানান, আমরা দ্বিতীয় শ্রেণী থেকে ফাইনাল পরীক্ষা দিয়ে তৃতীয় শ্রেণীতে উঠবো। পরীক্ষার পর আমাদের স্কুল আর খুলেনি। নতুন বছরের বইও আমরা পাইনি ক্লাসও শুরু হয়নাই।

শরীয়তপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আলেয়া ফেরদৌসী শিখা বলেন, মাঝেরচর আমরা পরিদর্শন করেছি। সেখানে একটি সংস্থা কিছু শিশুকে প্রাক প্রাথমিক শিক্ষা প্রদান করে আসছিল। তাদেরকে অনুরোধ করা হয়েছে সরকারীভাবে নতুন কোন স্কুল প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত তারা যেন এ কার্যক্রমটি চালিয়ে যায়।

শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক রাম চন্দ্র দাস বলেন, মাঝেরচরের শিশুদের শিক্ষা কার্যক্রম স্থানীয় একটি এনজিওকে চালিয়ে নিতে বলা হয়েছে। এখানে জেলা প্রশাসন তাদের সহায়তা করবে। বিদ্যালয় বিহীন গ্রামে স্কুল নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় মাঝেরচরকে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। এখানকার শিক্ষা বঞ্চিত শিশুদের উজ্জল ভবিষ্যতের চিন্তা থেকে অচিরেই এখানে স্কুল প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে।

(কেএনআই/এএস/জানুয়ারি ০৬, ২০১৫)

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test