E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

মরা খালে থৈ থৈ পানি, শেরপুরে কৃষকের মুখে হাসি

২০১৪ মে ০৬ ১৬:৪১:৩১
মরা খালে থৈ থৈ পানি, শেরপুরে কৃষকের মুখে হাসি

শেরপুর প্রতিনিধি : একটি ক্ষুদ্র সেচ প্রকল্প পাল্টে দিয়েছে এলাকার জীবনচিত্র। মরা খাল ভরে ওঠেছে থৈ থৈ পানিতে। আর সেই খালের মজুদ পানিতে প্রায় ৮০০ একর জমিতে বোরো আবাদের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার ভোগাই নদী থেকে সুতিয়ার খালে পানি স্থানান্তর করে জল কপাটের (স্লুইজ গেট) মাধ্যমে পানি আটকে রেখে সুতিয়ার পাড়ের দু‘ধারের ১৫ গ্রামের কৃষকরা এবার বোরো আবাদ করতে পারায় তাদের মুখেও হাসি ফুটে ওঠেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০১০/১১অর্থ বছরে জাপানী সাহায্য সংস্থা জাইকা’র (জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেটিভ এসোসিয়েশন) অর্থায়নে স্থানীয় জনগনের অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে এলজিইডি প্রায় ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নালিতাবাড়ীর ভোগাই নদীতে এই ক্ষুদ্র সেচ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করে। রামচন্দ্রকুড়া ইউনিয়নের ফুলপুর বান্দের বাজার সংলগ্ন ভোগাই নদীর পাড়ে বিদ্যুত চালিত দুইটি মর্টার এবং সুতিয়া খালের ৮ কিলোমিটার ভাটিতে একটি জলকপাট নির্মান করা হয়। মর্টারের মাধ্যমে ভোগাই নদী থেকে পানি তুলে সেই পানি মাটির নীচ দিয়ে পাইপের মাধ্যমে সুতিয়া খালে নিয়ে মজুদ করা হয়। এর ফলে নালিতাবাড়ী উপজেলার তিন ইউনিয়নের ১২শতাধিক কৃষক সেচ সুবিধা পেয়ে এবার বোরো আবাদ করেছে। এ ক্ষুদ্র সেচ পরিচালনার জন্য স্থানীয় কৃষকদের নিয়ে গড়ে ওঠেছে ‘সুতিয়ার খাল পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি’। এলাকার ৭০০ কৃষক ওই পানি ব্যবস্থাপানা সমিতির সদস্য।
স্থানীয় কৃষকরা জানান, দেশ স্বাধীনের প্রায় সাড়ে তিন যুগেরও বেশী সময় অতিবাহিত হলেও নালিতাবাড়ীর রামচন্দ্রকুড়া, কাকরকান্দি ও নালিতাবাড়ী ইউনিয়নের প্রায় ১৫ টি গ্রামের শত শত কৃষক সেচ সুবিধা না থাকায় বোরো আবাদ করতে পারতো না। কিন্তু এবার ক্ষুদ্র সেচ হওয়ায় ওইসব এলাকার কৃষকরা সেচের সুবিধা পেয়ে বোরো আবাদ করতে পেরে মহাখুশি। তাছাড়া খালে পানি থাকায় দেশী জাতের মাছও পাওয়া যাচ্ছে। এলাকার লোকজন খালের পানিতে গোসল করতে পারছে। তারা তাদের গবাদি পশু ধোয়াতে পারছে এবং নিত্যদিনের কাজে পানির সহজপ্রাপ্যতা ঘটেছে বলেও তারা জানান। অনেকে বলেন, আগে শুস্ক মওশুমে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ার কারণে ওইসব এলাকার টিউবঅয়েলগুলোতে পানি উঠতো না। কিন্তু সুতিয়া খালে পানি থাকায় শুস্ক মওশুমেও এবার তাদের টিউবঅয়েল গুলোতেও পানি পেতে কোন সমস্য হয়নি।
সরেজমিনে নালিতাাবাড়ীর রামচন্দ্রকুড়া, কাকরকান্দি ও নালিতাবাড়ী ইউনিয়নের ফুলপুর, গেদালুপাড়া, পলাশিয়া, হাতিবান্দা, খুজিকুড়া, চান্দের নন্নী, চিনামারা, কেরেঙ্গা পাড়া, কাউলারা ও বিন্নিবাড়ী গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, সুতিয়া খালে স্যালো মেশিন বা এলএলপি পাম্প বসিয়ে আশ-পাশের জমিতে পানি সেচ দেওয়া হচ্ছে। সুতয়া খালের দুইধারে প্রায় ৭০ টি এলএলপি পাম্প বসিয়ে সেচের জন্য পানি তোলা হচ্ছে। সমিতির সদস্যভুক্ত কৃষকদের নিকট থেকে একর প্রতি সেচ খরচ বাবদ নেওয়া হচ্ছে ৩ হাজার ৮০ টাকা এবং যারা সদস্যভুক্ত নয় তাদের নিকট থেকে নেওয়া হচ্ছে ৩ হাজার ৬০০ টাকা করে। প্রায় পাঁচশত একর জমিতে এবার আবাদ করা বোরো ধানের শীষ বাতাসে দুলছে। ধানের শীষ দোলার সাথে কৃষকদের মনেও নতুন করে আনন্দের দোলা লেগেছে। হাতিবান্দা গ্রামের কৃষক মো.আবদুস সালাম কালু, আব্দুল কাজিম ও মো. আব্দুল্লাহ বলেন, স্লুইস গেট অওয়ায় আইজ আমরা বোরো আবাদ করবার পাইতাছি। এই পরথম আমরা বোরোর আবাদ করলাম। বিন্নিবাড়ী গ্রামের কৃষক হুরমুজ আলী ও আবুল কালাম বলেন, মনে আমগরে এহন খুব খুশী। এই পরথম আমরা সেচের পানি পাইয়া বোরো আবাদ করছি। ধানের ফলনও ভালা দেখতাছি। চিনামারা গ্রামের কৃষক আব্দুর রশিদ, বজলুর রহমান ও আহাম্মদ আলী বলেন, সুইজ গেট অউয়নে সুতিয়া খালে ইতার পানি পাইছি। খালে পানি থাহনে কই, টেংরা, পুটি, দারকিনা সহ নানা জাতের দেশি মাছ পাওয়া যাইতাছে। ইবার আমগর টিবলেও পানি ওঠছে। ইডা অউয়নে আমগরে খুব উফুগার অইছে।
সুতিয়ার খাল পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির সভাপতি মো. রেজাউল করিম বলেন, এলাকার সংসদ সদস্য কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীর একান্ত চেষ্টার ফলে স্বাধীনতার পর এই প্রথম এ এলাকায় জনগণ বোরো আবাদ করতে পারছে। সুতিয়া খালে পানি মজুদ করে এবার সেচের সুবিধা পেয়ে নতুন করে ৫০০ একর জমি বোরো আবাদের আওতায় এসেছে। আগামী বছর এ আবাদ ৮০০ একর ছাড়িয়ে যাবে। তাছাড়া সুতয়া খালে সমিতির মাধ্যমে আগামীতে মজুদ পানিতে মাছ চাষ প্রকল্প হাতে নেওয়া হবে।
নালিতাবাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ বলেন, ভোগাই নদী থেকে সুতিয়া খালে পাািন মজুদের ক্ষুদ্রসেচ প্রকল্পটি ওই এলাকার জীবনচিত্র পাল্টে দিয়েছে। এ থেকে কৃষকরা দারুণভাবে উপকৃত হচ্ছেন। সেচকার্যে ‘আন্ডারগ্রাউন্ড ওয়াটার’ বা মাটির নীচের পানির চাইতে ‘সারফেস ওয়াটার’ বা উপরের পানি ব্যবহার করার দিকে আমরা এখন নজর দিচ্ছি। এ ধরনের ক্ষুদ্র সেচ বাস্তবায়নের মাধ্যমে সন্নিহিত এলাকাগুলোতে সেচ সুবিধা তৈরী করে শস্য উৎপাদন বৃদ্ধি ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব বলে তিনি উল্লেখ করেন।
এলজিইডি‘র নালিতাবাড়ী উপঝেলা প্রকৌশলী আনোয়ার পারভেজ বলেন, ভোগাই নদীর পানি স্থানান্তর করে সুতিয়া খালে পানি বন্টনের এই ক্ষুদ্র সেচ প্রকল্পটি ৮১০ একর জমির লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে যাত্রা শুরু হয়েছে। তবে আগামীতে আরো বেশী জমি এই প্রকল্পের আওতায় আনার কথা তিনি জানান। তিনি বলেন, এতে শুধু বোরো আবাদেই কৃষক সুফলভোগী হয়নি। পানি বন্টন থেকেও এই প্রকল্পের আওতায় কৃষকরা অর্থনৈতিকভাবেও সুফলভোগী হবে।
(এইচবি/এএস/মে ০৬, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

২৭ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test