E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বরগুনায় অবৈধ কাঠ কয়লার চুল্লী, গ্রামজুড়ে ধোঁয়া

২০১৫ জানুয়ারি ০৮ ১৩:৪৯:০৬
বরগুনায় অবৈধ কাঠ কয়লার চুল্লী, গ্রামজুড়ে ধোঁয়া

বরগুনা প্রতিনিধি : মাটির চুলায় একহাত দেড় হাতের কাঠের টুকরো সারিবদ্ধভাবে গোলাকৃতি চুল্লীতে সাজানো হয়। এরপর কাদা মাটির প্রলেপ দিয়ে প্রতিটি কাঠের ফাঁক ফোঁকর আটকিয়ে আগুন জ্বালানো  হয়। ওই মাটির প্রলেপের ভিতর এক একটি চুল্লীতে আটটি ছিদ্র দিয়ে অবিরত বের হয় ধোঁয়া।

দিন রাত চব্বিশ ঘন্টা জ্বলে এই অবৈধ কাঠ কয়লার চুল্লী। বিশাল সাইজের ৬ থেকে ৮টি চুলা দিন রাত অবিরত জ্বলছে। এসব চুল্লীর ধোঁয়া আচ্ছন্ন হয়ে পড়ছে আশপাশে। বিষাক্ত ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ছে গ্রামজুড়ে । আর কাঠ পোড়ানোর ধোঁয়ায় ওজন স্তর ভারী হয়ে একদিকে যেমন জলবায়ুর উপর বিরুপ প্রভাব পড়ছে অন্যদিকে কৃষি নির্ভর উপকূলীয় অঞ্চলের পরিবেশে চরম বিপর্যয় ঘটছে। সেই সাথে জনস্বাস্থ্যের ওপর হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে এ কয়লা পোড়ানোর চুল্লী। উপকূলীয় বরগুনায় পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদন বিহীন কাঠ পোড়ানোর এ কয়লার চুল্লী পরিবেশের মারাত্মক বিপর্যয় ডেকে আনছে। জেলার পাঁচটি উপজেলায় মোট ২০টি অবৈধ কাঠ কয়লার চুল্লীর সন্ধান পাওয়া গেছে। এরমধ্যে বরগুনা সদরে ৬টি, পাথরঘাটায় ৬টি ও তালতলীতে ৮টি কয়লা তৈরির চুল্লী রয়েছে বলে জানা গেছে।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, বরগুনার আনাচে কানাচে গড়ে উঠছে কাঠ পুড়িয়ে কয়লা তৈরির অবৈধ চুল্লী। এসব চুল্লীতে প্রতিদিন হাজার হাজার মন কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। ফলে একদিকে বনাঞ্চল হচ্ছে উজাড় আর অন্যদিকে পরিবেশ পড়ছে চরম বিপর্য়য়ের মুখে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে এসব অবৈধ চুল্লী বন্ধের কোন উদ্যোগ নেই। পাথরঘাটা উপজেলার মাদারতলী গ্রামে গড়ে উঠেছে ৬টি চুল্লী। স্থানীয় প্রভাবশালী ফজলু সর্দার কয়লার চুল্লী বসিয়ে কাঠ পুড়িয়ে কয়লা তৈরি করছেন। এসব চুল্লীতে কাঠ সাজিয়ে ১৫ দিন পর্যন্ত এই কাঠ পুড়িয়ে পরে তৈরি হয় কয়লা। প্রতিটি চুল্লীতে ২৫০ মন করে কাঠ দেওয়া হয়। এই কাঠ পোড়ানোর পরে ২০ কেজি করে কয়লা বস্তাবন্দি করা হয়। বাজারে ৪০০ টাকা করে বিক্রি করা হয এই কাঠ কয়লা।

স্থানীয় গ্রামবাসিরা জানান,দিন রাত এসব চূলায় কাঠ পুড়ছে। কাঠ পোড়ানোর ধোয়ায় এলাকার পরিবেশ ক্ষতি হচ্ছে। চুল্লীর আশ পাশের বাসিন্দাদের শ্বাস কষ্টসহ গাছ পালাও বিবর্ণ হয়ে পড়ছে। অপরদিকে কাঠ পোড়ানোর ফলে এলাকার গাছ পালাও উজাড় হচ্ছে।

মাদারতলীর ফজলু সর্দারের মালিকানাধীন অবৈধ কাঠ কয়লা তৈরির চুল্লির শ্রমিক আলামিন জানান, এই চুল্লী দুটিতে প্রতি ১৫ দিন অন্তর ৫০শত মন কাঠ পোড়ানো হয়। কাঠ পুড়িয়ে কালো কয়লা হলে তা বিক্রি হয় ঢাকায়। এই কয়লা দিয়ে শহরে রান্না কাজসহ বিভিন্ন কারখানায় জ্বালানী হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অনুষদের ডিন আ ক ম মোস্তফা জামান বলেন, ‘সিডর-আইলাসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে যে বৃক্ষ জানমালের সুরক্ষাকবজ হিসেবে কাজ করে। ব্যাপকহারে এইসব বৃক্ষনিধনের কারণে কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ বাড়বে। ফলে উষ্ণতা বাড়ার পাশাপাশি পরিবেশ হুমকিতে পড়বে।

পরিবেশ অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীযয় পরিচালক সুকুমার বিশ্বাস বলেন, এই কাঠ কয়লার চুল্লী সম্পূর্ণ অবৈধ। এর কোন পরিবেশ ছাড়পত্র নেই । অচিরেই এসব চুল্লীর সন্ধানে অভিযান চালানো হবে।

বরগুনা জেলা প্রশাসক মীর জহুরুল ইসলাম বলেন, এসব অবৈধ কাঠ কয়লার চুল্লী বন্ধে অচিড়েই ভ্রম্যমাণ আদালত বসিয়ে বন্ধ করার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

(এমএইচ/পিবি/এএস/জানুয়ারি ০৮,২০১৫)

পাঠকের মতামত:

০৭ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test