E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

আবার আসছে কালা পাহাড়-ধলা পাহাড়

২০১৫ ফেব্রুয়ারি ০৭ ১৮:৩১:৩৭
আবার আসছে কালা পাহাড়-ধলা পাহাড়

বাগেরহাট প্রতিনিধি : সিলেটে হযরত শাহ জালালের মাজারের ঐতিহ্য কবুতর, চট্টগ্রামে হযরত বায়জিদ বোস্তামির মজারের ঐতিহ্য কাছিম। তেমনি বাগেরহাটে হযরত খানজাহানের ঐতিহ্য কুমির। মাজার দীঘির কালা পাহাড়-ধলা পাহাড় কুমিরের শেষ বংশধর বুধবার রাতে মারা যায়। এরমধ্য দেখা দেয় ঐতিহ্য সংকট। বাগেরহাট শহরতলীতে হযরত খানজাহানের (র:) মাজার শরীফের শত-শত বছরের ঐতিহ্য (হ্যারিটেজ) দীঘির কুমির ‘কালা পাহাড়-ধলাপাহাড়ের শেষ বংশধর শতবর্ষী কুমিরের মৃত্যুর পর এবার তাদের অনুসারীদের আবারও বাগেরহাটে ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার।

প্রায় সাড়ে ৫শত বছরের ঐতিহ্য ধরে রাখতে বাগেরহাটের খানজাহানের দিঘির ৬টি কুমিরের বাচ্চা ১৯৮৪ সালে রাজশাহী ও রংপুর চিড়িয়াখানায় নেয়া হয়। এবার হযরত খানজাহানের ঐতিহ্য ধরে রাখতে ওইসব কুমিরগুলোকে দ্রুত তাদের জন্মস্থানে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। শত শত বছরের এ ঐতিহ্য ধরে রাখতে এ অবস্থায় সরকারিভাবে কালাপাহাড় ও ধলাপাহাড়ের বংশধরদের প্রত্যাবর্তনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সরকারি এ উদ্যোগের কথা নিশ্চিত করেছেন বাগেরহাট সদর আসনের এমপি ও মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এ্যাডভোকেট মীর শওকাত আলী বাদশা।

বাগেরহাটে হযরত খানজাহানের মাজার শরীফের প্রধান খাদেম শের আলী ফকির জানান, মাজার দীঘি থেকে ১৯৮৪ সালে ৬টি কুমির ছানা নেবার পর থেকে খানজাহানের মাজারে থাকা কুমিরের ডিম পাড়া অব্যহত থাকলেও অপ্রত্যাশিতভাবে আর ডিম থেকে বাচ্চা ফোটেনি। সময়ের সাথে পাল্লা দিযে কমতে থাকে খানজাহানের মাজারের দিঘির সংখ্যাও। এ অবস্থা মোকাবেলায় দিঘির মাজারের কুমিরের সংখ্যা বাড়াতে ভারতের মাদ্রাজ থেকে আনা হয় (মার্শ) প্রজাতির ৬টি মিঠা পানির কুমির ছানা। ২০০৪ সালের ২৬ জুন ভারতীয় কুমির ছানা খানজাহানের দিঘিতে উন্মুক্ত করা হয়। তবে এ অবন্থাার মধ্যে নানা প্রতিকুলতার কারণে কয়েক মাসের মধ্যে মারা যায় দুটি এছাড়া অন্য দুটিকে নেওয়া হয় মংলার করমজলে কুমির প্রজনন কেন্দ্রে। বর্তমানে মাজারের দীঘিতে ভারত থেকে আনা ২টি কুমির রয়েছে। শতবর্ষী মাদি কুমিরের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে অবসান ঘটে কালাপাহাড় ধলাপাহাড়ার যুগের । এদিন সকালে খানহাজাহান দীঘির উত্তর পাশ্বে খানজাহানের নিজ হাতে ছাড়া কালাপাহাড় ও ধলাপাহাড়ের শেষ বংশধর মাদী কুমির ধলাপাহাড়ের মৃতদেহ ভাসতে দেখা যায়। হযরত খানজাহানের ঐতিহ্য ধরে রাখতে ১৯৮৪ সালে রাজশাহী ও রংপুর চিড়িয়াখানায় নিয়ে যাওয়া কুমিরগুলো ফিরিয়ে আনার দাবি জানান মাজারের এই প্রধান খাদেম।

শত শত বছরের এ ঐতিহ্য ধরে রাখতে এ অবস্থায় সরকারিভাবে কালাপাহাড় ও ধলাপহাড়ের বংশধরদের প্রত্যাবর্তনের উদ্যোগ নেয়া হয়। সরকারি এ উদ্যোগের কথা নিশ্চিত করেছেন বাগেরহাট সদর আসনের এমপি ও মৎস্য ও প্রানী সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এ্যাডভোকেট মীর শওকাত আলী বাদশা। তিনি জানান গত বৃহস্পতিবার হযরত খানজাহান আমলের কুমিরের শেষ বংশধর শতবর্ষী মাদি কুমিরটির মৃত্যু ঘটে। তার পর থেকেই ঐতিহাসিক এ দিঘির ঐতিহ্য রক্ষায় কালাপাহাড় ও ধলাপাহাড়ের বংশ ধরদের আবার দীঘিতে ফিরিয়ে অনার বিষয়ে তৎপরতা শুরু হয়। তিনি জানান এ অবস্থায় তৎকালীন সরকার ১৯৮৪ সালে কালাপাহাড় ও ধলাপাহাড় ৬টি কুমিরের বাচ্চা বাগেরহাট থেকে রংপুর ও রাজশাহীতে নিয়ে যায়। ইতিমধ্যে সেই সময়ের বেচে থাকা কুমিরদের বিষয়ে খোজ নেওয়া হয়েছে । সরকারী ভাবে যতদ্রুত সম্ভব তাদের আবার নিজ জন্মস্থান খানজাহান দিঘিতে ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা চলছে। আর সেটা সম্ভব হলে প্রায় সাড়ে ৫শত বছর ধরে উপমহাদেশের অন্যতম সাধক হযরত খানজাহান আলীর দিঘির ঐতিহ্য রধে রাখা সম্ভব হবে।

মাজারের কুমির নিয়ে প্রচলিত রয়েছে নানা কল্প কাহিনী। তবে ঐতিহাসিকবিদদের মতে দক্ষিনাঞ্চলের মিঠা পানির অভাব দূর করতে সেই সময়ে মরে যাওয়া নদী বাধ দিয়ে খানজাহান এ দিঘির সুচনা করেন। পরে খনন করা সুবিশাল এ দীঘির পানির সুরক্ষার জন্য সেসময়ে দুটি মিঠাপানির কুমির অবমুক্ত করেন। দিঘিতে অবমুক্ত করা এ পুরুষ কুমিরটিকে কালাপাহাড় ও মাদি কুমিরটিকে ধলাপাহাড় হিসেবে নামেই খানজাহান নাম দেন। এঅবস্থায় বংশ পরাম্পর ওই দিঘির কুমির হিংস্রতা ভুলে অনেকটা শান্ত বসবাস করে আসছে। শত শত বছর ধরে এ দিঘির কুমির কখনো কারো জন্য ক্ষাতির বিষয় হয়ে দাড়ায়নি। দেশ বিদেশের অসংখ্য পর্যটক ও মাজার জিয়ারতে আসা দর্শনাথীদের আনা মুরগী ছাগলই ছিল কুমিরের প্রধান খাদ্য।

এদিকে বৃহস্পতিবার খানজাহানের দিঘির ঐতিহ্য একমাত্র শতবর্ষী কুমির ধলাপাহাড় অতিরিক্ত চর্বির কারণেই মারা গিয়েছে এমনটি প্রাথমিক ভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়েছেন বাগেরহাট জেলা প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তর । শনিবার বাগেরহাট জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. সুখেন্দু শেখর গাইন জানান ময়না তদন্তের প্রাথমিক তথ্য মতে দেখা গেছে শতবর্ষী এ কুমিরটি অতিরিক্ত চর্বিই তার মুত্যুর অন্যতম কারণ হয়ে থাকতে পারে। বিষয়টি আরও নিশ্চিত হতে ভিসেরা রির্পোটের জন্য আলামত ঢাকার কেন্দ্রীয় পষু রোগ অনুসন্ধান গবেষণাগারে পাঠানো হয়েছে।

মৃত কুমিরটি ৯ফুট লম্বা ও ৬ফুট চওড়া। খানজাহানে মাজার দিঘির শত বছরের অধিক বযসের মৃত এই মিঠা পানির কুমিরটির মাথাসহ চামড়া ও দাত বাগেরহাট ষাটগুম্বজের প্রত্নতত্বও জাদুঘরে সংরক্ষণের জন্য প্রদান করা হয়েছে।

(একে/এএস/ফেব্রুয়ারি ০৭, ২০১৫)

পাঠকের মতামত:

০১ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test