E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

অস্তিত্ব সঙ্কটে সাতক্ষীরা শহরের প্রাণসায়র খাল

২০১৫ ফেব্রুয়ারি ১৩ ১৬:৩১:৩১
অস্তিত্ব সঙ্কটে সাতক্ষীরা শহরের প্রাণসায়র খাল

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : এক সময়কার প্রমত্তা প্রাণসায়র খাল আজ অস্তিত্ব সঙ্কটে।  সংযোগ খালগুলোর মুখে পানি উন্নয়ন বোর্ড এর অপরিকল্পিত স্লুইজ গেট নির্মান, প্রাণসায়রের দু’ তীর জবরদখল করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বসতি স্থাপন, খালের মধ্যে বর্জ্য পদার্থ ফেলাসহ খাট কাটানোর সময় অনিয়ম ও দূর্ণীতির আশ্রয় নেওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

সাতক্ষীরার বিশিষ্টসমাজ সেবক গোষ্ট বিহারী মণ্ডল ও তেল, গ্যাস বন্দররক্ষা কমিটির সাতক্ষীরা জেলা শাখার অন্যতম সংগঠক অ্যাড. ফাহিমুল হক কিসলু জানান, ১৮৬৫ সালে অবিভক্ত বাংলার সাতক্ষীরার জমিদার প্রাণনাথ রায় শিক্ষার প্রসার ঘটাতে পিএন হাইস্কুল এ- কলেজ ও ব্যবসা বাণিজ্যের সুবিধার্থে প্রাণসায়র খাল খনন করেন। খেজুরডাঙি থেকে সাতক্ষীরা শহর হয়ে এল্লারচর পর্যন্ত এ খালের দূরত্ব ছিল প্রায় ১৩ কিলোমিটার। চওড়া ছিল ২০০ ফুটের বেশি। সে সময় ইছামতী নদীর হাড়দ্দহ সংযোগ খালের মধ্য দিয়ে কোলকাতা খাল হয়ে স্টীমার প্রবেশ করতো প্রানসায়র খালে। বড় বড় ব্যবসায়িক নৌকা ঢুকত এ খালে। ফলে সাতক্ষীরা ক্রমশঃ সমৃদ্ধশালী শহরে পরিণত হয়। ১৯৮৩ সালে এ মহকুমা শহর থেকে জেলা শহরে রুপান্তরিত হয়।

তারা আরো জানান, ১৯৬৫ সালের প্রথম দিকে স্থানীয় জনগণের মতামতকে প্রাধান্য না দিয়ে বন্যা প্রতিহত করার নামে পানি উন্নয়ন বোর্ড যত্রতত্র স্লইজ গেট নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। এতে তারা ব্যাপক অর্থ বাণিজ্য করে। ইছামতী নদীর হাড়দ্দহ খাল, কোলকাতার খাল, বেতনা নদীর সংযোগ খাল, বালিথা, খেজুরডাঙি নারায়ানজোলসহ কয়েকটি সংযোগখালের মুখে স্লুইজ গেট নির্মাণ করে। খোলপটেুয়া নদীর ব্যাংদহা খালের মুখে স্লুই গেট নির্মাণের চেষ্টা করা হয়। ফলে নদীর স্রোত খালের মধ্যে ঢুকতে না পেরে পলি জমে প্রানসায়র খাল ক্রমশঃ ভরাট হতে শুরু করে। এরপর জলবায়ু ট্রাষ্ট ফান্ডের আওতায় ৯২ লাখ ৫৫ হাজার টাকায় ১০ কিলোমিটার খাল সংস্কারের টেন্ডর পেয়ে ঢাকার মেসার্স নিয়াজ ট্রেডার্স ২০১২ সালের ১৮ অক্টোবর থেকে প্রানসায়র খাল খনন শুরু করেন। ২০১৩ সালের ১৪ এপ্রিলের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা ছিল।

গোষ্ট বিহারী ম-ল ও অ্যাড. ফাহিমুল হক কিসলু জানান, পৌরসভার বাসিন্দাদের বাড়ির পাইপ লাইন খোলা রেখে স্কাবেটর ম্যাশিনের মাধ্যমে খাল খনন করায় সিডিউল বহির্ভুতভাবে কাল খননের অভিযোগ ওঠে। ২০১৩ সালের ৩১ মার্চ স্টেডিয়াম ব্রীজের দক্ষিণ পাশ থেকে পাকা পুল পর্যন্ত খালের দু’পাশের ২৪৮টি বিভিন্ন প্রজাতির গাছ সাতক্ষীরা কালেক্টরেট কর্মকর্তা কর্মচারি বহুমুখী সমবায় সমিতি লিঃ এর কাছ থেকে শহরতলীর কদমতলার মেসার্স দীপা টিম্বার মার্ট এর স্বত্বাধিকারি হাশেম আলী এক লাখ ৪০ হাজার টাকায় ওই গাছ কিনে নেন। পহেলা এপ্রিল থেকে ওই গাছ কাটা শুরু হলে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে তা প্রকাশ পায়। এত গাছ কম টাকায় বিক্রি করে সরকারি টাকা লুটপাট ও সবুজায়ন বিনষ্টের অভিযোগে সাতক্ষীরার পরিবেশবিদ অ্যাড. খগেন্দ্রনাথ ঘোষসহ সাতজন বাদি হয়ে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকসহ ছয় জনকে বিবাদী করে ২০১৩ সালের ৩ এপ্রিল সাতক্ষীরা সাব জজ-২ আদালতে মামলা দায়ের করেন। আদালত নিষেধাজ্ঞা না দেওয়ায় হাশেম আলী সকল গাছ কেটে নিয়ে যান। এরপর বন্ধ হয়ে যায় খাল সংস্কারের বাকি কাজ।

এছাড়া খালের খালের দু’ধারের জমি দখল করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বসতঘর, বাথরুম নির্মাণ করার ফলে খালের প্রস্ত ক্রমশঃ কমতে থাকে। আবাসিক ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের বর্জ পদার্থ খালে ফেলায় গভীরতা দিন দিন কমতে থাকে। এসব কারণে প্রাণসায়র খাল আজ মৃতপ্রায়।
সরেজমিনে বৃহষ্পতিবার বিকেলে সাতক্ষীরা শহরের মধ্যে বয়ে যাওয়া প্রানসায়র খালের দু’ পাশ ঘুরে দেখা গেছে স্টেডিয়াম ব্রীজের দক্ষিণ পাশে খালের জায়গা দখল করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। পাকা পুলের দক্ষিণপাশ থেকে ফার্ণিচার ব্যবসায়িরা দোকান নির্মাণ করে ব্যবসা পরিচালনা করছে। ইসলামী ব্যাংকের পুরাতন ভবনের পশ্চিমপাশে খালের মধ্যে ফেলা হচ্ছে বর্জ্য পদার্থ। বড় বাজারের দক্ষিণ পাশে খালের বেশ কিছু স্থান জুড়ে নিয়মিত ফেলা হচ্ছে বর্জ পদার্থ। এ ছাড়া হাটের ব্রীজের কিছু অংশ পর থেকে গড়েরকান্দা গফুর সাহেবের ব্রীজ পেরিয়ে খালের দু’পাশে খুপড়ি ঘর, কাচা ল্যাট্রিন, খাল ভরাট জমিতে কোথাও পালন শাক, পুঁই শাকের মাচান আবার কোথাও কলা বাগান লাগানো হয়েছে। যাতায়াতের সুবিথধার্থে খালের এপার থেকে ওপার যাতায়াতের স্বার্থে প্রতি ২০ থেকে ২৫ হাত অন্তর অন্তর নির্মাণ করা হয়েছে বাঁশের সাঁকো। এ অবস্থার উত্তরণ ঘটিয়ে প্রানসায়র খালের জীবন ফিরিয়ে দেওয়া প্রায় অসম্ভব বলে জানিয়েছেন খাল পারের বাাসন্দা আয়েশা খাতুন, ফতেমা বিবি, গোলাম হোসেনসহ কয়েকজন।

এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা পৌরসভার প্যানেল মেয়র শফিক উদ দৌলা সাগর জানান, ২০১২ সালে বরাদ্দকৃত কাজ শেষ না করায় ঠিকাদারের টাকা বকেয়া রয়েছে। এমনকি ফা-ের টাকা সরকারি কোষাগারে না যেয়ে জেলা প্রশাসকের ফা-ে জমা আছে। এরপরও বিষয়টি জলবায়ু ট্রাষ্ট ফা-ের আওতায় থাকায় শহরের উপর দিয়ে প্রবাহিত প্রাণসায়র খালের সাড়ে ৮ কিলোমিটার খনন কাজ আগামি জুন মাসের মধ্যে শুরু করা যাবে বলে তিনি আশাবাদি।

(আরকে/এএস/ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০১৫)

পাঠকের মতামত:

০২ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test