E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

'৬৩ বছরেও একুশের জাতীয় অনুষ্ঠানে মেলেনি আমন্ত্রণ'

২০১৫ ফেব্রুয়ারি ২০ ১৯:২০:১১
'৬৩ বছরেও একুশের জাতীয় অনুষ্ঠানে মেলেনি আমন্ত্রণ'

গাজীপুর প্রতিনিধি : ২১ ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহরে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধাঞ্জলী নিবেদন, ১লা ফেব্রুয়ারির বই মেলাসহ একুশের জাতীয় কোনো অনুষ্ঠানে আমাদের আমন্ত্রণ জানানো হয় না। অথচ প্রতিবছরই আমন্ত্রণের অপেক্ষায় থাকি। চাচার মৃত্যুর পর ৬৩ বছর পেরিয়ে গেলেও আমাদের পরিবারের আমন্ত্রণ পাওয়ার সেই সাধ পূরণ হলনা। বুকে জমে থাকা কষ্ট চেপে রেখে আক্ষেপ করে কথা গুলো বলছিলেন ৫২’র ২১ ফেব্রুয়ারিতে শহীদ আবুল বরকতের ছোট ভাইয়ের ছেলে আলাউদ্দিন বরকত। তিনি জানালেন,‘ রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীসহ অন্যন্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ শ্রদ্ধা জানান বলে ২১ ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহরে সাধারণ মানুষের মত তাদের পরিবারের সদস্যদেরও সেখানে যেতে দেওয়া হয় না। তাই প্রথম প্রহরে গাজীপুর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানান তারা। সেখান থেকে সকালে সাধারণ মানুষের মতই লাইনে দাঁড়িয়ে ঠেলাঠেলি করে ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানানোর পর আজিমপুরে বড় চাচা (বরকত) ও বাবার কবর জিযারত করে গাজীপুরে এসে মিলাদ মাহফিল ও কাঙ্গালী ভোজের আয়োজন করেন। এ ভাবেই প্রতিবছর তাদের পরিবারের সদস্যরা ২১ ফেব্রুয়ারিতে আন্তর্জাতিক মাতৃ ভাষা দিবস পালন করেন।

আলাউদ্দিন বরকত বলেন, প্রতিবছর পুরো ফেব্রুয়ারি মাস বিশেষ করে ২১ তারিখে রাষ্ট্রীয়ভাবে ঘটা করে পালন হয় দিবসটি। শহীদদের নিয়ে চলে নানা আলোচনা অনুষ্ঠান। যাদের আত্মত্যাগ নিয়ে এত আয়োজন তাদের পরিবারের সদস্যদের শহীদ দিবসের জাতীয় অনুষ্ঠানে ডাকা হয়না এটি খুবই পীড়া দায়ক।

জানা গেছে, ভাষা শহীদ আবুল বরকতের পরিবার ভারতের মুর্শিদাবাদ থেকে এসে গাজীপুরে স্থায়ীভাবে বাস করছেন ১৯৬৮ সাল থেকে। বরকতের মামা মুর্শিদাবাদ থেকে তাদের গাজীপুরের নলজানি গ্রামে নিয়ে আসেন। আবুল বরকতের বাবা মরহুম মৌলভী শামছুজ্জোহা ভুলু মিয়া, মাতা হাজী হাসিনা বিবি। পূর্ব নিবাস ভারতের মুর্শিদাবাদ জেলার ভরতপুর থানার বাবলা গ্রামে বরকতের জন্ম। বাবলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠ সমাপ্ত করে তালিবপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে আবুল বরকত প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিক পাস করেন। ১৯৪৮ সালে বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজ থেকে ইন্টামিডিয়েট পাশ করার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিভাগে অনার্সে ভর্তি হন। অনার্সে তিনি দ্বিতীয় শ্রেণীতে ৪র্থ স্থান লাভ করে ভর্তি হন মাস্টার্সে। মাষ্টর্সে পড়ার সময় ভাষা আন্দোলনে অংশ নিয়ে পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান তিনি। বাংলাকে রাষ্ট্র ভাষা করার জন্য ছাত্র জনতার সম্মিলিত আন্দেলনে যাঁরা শহীদ হন তাদের মধ্যে আবুল বরকত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র ছাত্র। এ কারনে ১৯৫২’র পর গত ২০০১ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ভাষা শহীদ হিসেবে রাষ্ট্রীয়ভাবে মরনোত্তর একুশে পদক প্রদান করেন আবুল বরকতকে। আলাউদ্দিন বরকত জানান, সামাজিক মর্যাদা নিয়ে বাঁচার মত সামর্থ এ পরিবারের আছে। আমাদের অর্থ চাইনা। বরকতসহ অন্য শহীদদের সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় ভাবে প্রতিষ্ঠা চান তিনি।

আলঅউদ্দিন বরকত জানান, ৩ বোন ২ ভাইয়ের মধ্যে বরকত ছিলেন অবিবাহিত। বরকতের ৩ বোন হচ্ছেন শামসুন্নাহার, নুরুন্নাহার ও নুরজাহান। বরকতের একমাত্র ছোট ভাই আবুল হাসনাত (আলাউদ্দিন বরকতের বাবা) মারা যান ১৯৬৮ সালে। আবুল বরকত ও আবুল হাসনাত দুজনকেই সমাহিত করা হয় আজিমপুর গোরস্থানে। আবুল হাসনাতের ৩ ছেলে, ৩ মেয়ে ও স্ত্রী বর্তমানে জীবিত। ছেলেদের মধ্যে আলাউদ্দিন বরকত স্থানীয় একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। তার অপর দুইভাই আইন উদ্দীন বরকত, জালাল উদ্দিন বরকত দু’জনেই ব্যবসায়ী। তাঁদের তিন বোনের মধ্যে আবিদা সুলতানার বিয়ে হয়েছে সাভারে, হাবিবা সুলতানা গাজীপুর শহরে ও মনিরা সুলতানার বিয়ে হয়েছে নলজানী গ্রামে। গাজীপুর ষ্টেডিয়ামকে ভাষা শহীদ বরকত স্মরণে বরকত ষ্টেডিয়াম নাম করন ছাড়া তাঁর নামে আর কোন প্রতিষ্ঠান নেই। বরকতদের বাড়িতে যাওয়ার রাস্তাটি স্থানীয় লোকজন বরকত স্মৃতি স্মরনী সড়ক নাম দেয় কয়েক বছর আগে । ১৯৮১ সালে তৎকালীণ সরকার বরকত পরিবারকে নলজানী গ্রামে ২ বিঘা জমি প্রদান করে। পারিবারিক উদ্যোগে ভাষাশহীদ স্মৃতি সংঘ নামে একটি সংগঠন গড়ে তোলা হয়েছে। বরকত পরিবারের উত্তরাধিকারীদের কোন রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা নেই, তবে দল মত নির্বিশেষে সকল শ্রেণি পেশার মানুষের সাথে এ পরিবারের রয়েছে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক।

(এসএএস/পি/ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৫)

পাঠকের মতামত:

০১ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test