E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

আজ থেকে শুরু হচ্ছে লালন স্মরণোৎসব

২০১৫ মার্চ ০৪ ১২:৪০:১১
আজ থেকে শুরু হচ্ছে লালন স্মরণোৎসব

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি :  মরমী সাধক বাউল সম্রাট ফকির লালন সাঁই বাঙালির চেতনায় এক অবিস্মরণীয় কালপুরুষ। তাঁর গানের মাঝেই লুকিয়ে আছে সৃষ্টির রহস্য।

সৃষ্টিকর্তার সাথে আত্মিক সম্পর্ক তাঁর গানের মূলমন্ত্র। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষকে একই স্রোতধারায় আনার জন্য আমরণ কাজ করেছেন এই মরমী সাধক। বাউল সম্রাট ফকির লালন সাঁইয়ের সঙ্গীত আজও আমাদের অনুপ্রানিত করে। এই মহান সাধক বাউল সম্রাট ফকির লালন সাঁইয়ের স্মরণোৎসব উপলক্ষ্যে কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়ার আখড়া বাড়ীতে আজ বুধবার থেকে শুরু হচ্ছে ৫ দিনব্যাপি অনুষ্ঠানমালা। অনুষ্ঠানমালায় যথারীতি থাকছে আলোচনা সভা, লালন মেলা ও নির্ধারিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের সহযোগিতায় ও লালন একাডেমীর আয়োজনে একটানা ৪ মার্চ থেকে শুরু হয়ে ৮মার্চ পর্যন্ত ৫ দিনব্যাপি চলবে বাউল সম্রাট সাধক ফকির লালন সাইয়ের স্মরণোৎসবের অনুষ্ঠান। সাঁইজীর জীবদ্দশায় তার ভক্ত অনুরাগী শিষ্যরা স্মরণোৎসবের অনুষ্ঠান খুব জাকজমক ভাবে উৎযাপিত করতেন। এবারো তার কোন ব্যতিক্রম হচ্ছে না। স্মরণোৎসবের অনুষ্ঠানকে ঘিরে ইতোমধ্যে লালন একাডেমী নানান উদ্যোগসহ সকল প্রস্ততি গ্রহণ করেছেন। লালন সাঁইয়ের মাজারের সাজসজ্জা ও ধোয়া-মোছার কাজ শেষ করে সাঁইজীর পছন্দের সাদা ধুসর রং দিয়ে রাঙিয়ে দিয়েছে তাঁর মাজার। এই মানুষে আছে রে মন, যারে মানুষ রতন এই মানবতার দিক্ষা নিতে আত্মার টানে দেশ-বিদেশের সাধু-গুরু ও ভক্তরা দলে দলে আসতে শুরু করেছে সাঁইজির মাজারে। প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী প্রতিবার দুই অথবা তিনদিনের এ উৎসব পালিত হলেও স্মরণোৎসব থেকে এবং আগত বাউলদের অনুরোধেই তা বাড়িয়ে পাঁচদিনের প্রথা চালু করা হয়েছে। এবারো তার ভিন্নতা নেই। মূল উৎসব শুরু হওয়ার ৭-৮ দিন আগ থেকে আখড়ায় আসা বাউল সাধকরা মাজারের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিয়ে আসন গেড়ে গেয়ে চলেছে সাঁইজির আধ্যাত্মিক মর্মবাণী ও ভেদ তথ্যের গান। জমজমাট এখন লালন শাহের আখড়া বাড়ি। কুষ্টিয়া পরিণত হয়েছে উৎসবের শহরে। সুষ্ঠুভাবে আয়োজন সম্পন্ন করতে নেয়া হয়েছে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা। পুলিশের পাশাপাশি অনুষ্ঠানস্থলে থাকছে র‌্যাব ও সাদা পোষাকে গোয়েন্দা পুলিশ। স্মরণোৎসবের অনুষ্ঠানে আসা দেশ-বিদেশের লাখো ভক্ত অনুরাগী ও সাধু-গুরুদের চরণ ধূলায় সিক্ত হবে বাউল সম্রাটের ছেঁউড়িয়ার আখড়াবাড়ী। সভ্যতার এই যুগে মানুষ মানুষে হিংসা বিদ্বেশ ভূলে সাঁইজির ধর্মদর্শনের চিরাচরিত‘‘ এই মানুষে আছে রে মন, যারে মানুষ ‘সত্য বল সুপথে চল ওরে আমার মন’ ও মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি’’ এই শ্লোগানকে বাস্তবায়নে সদা সত্য ও সঠিক পথে চলে দেশ ও জাতির উন্নয়নে নিজেদেরকে নিয়োজিত রাখতে হবে। উদ্বোধনী দিনে আজ বুধবার কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক সৈয়দ বেলাল হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন খুলনা বিভাগীয় কমিশনার আবদুস সামাদ। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন খুলনা রেঞ্জ ডিআইজি এস এম মনির-উজ-জামান, বিজিবি যশোর রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেঃ জেনারেল দেওয়ান শহীদুল ইসলাম, কুষ্টিয়া পুলিশ সুপার প্রলয় চিসিম, কুষ্টিয়া জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কে.এম.রাহাতুল ইসলাম, সিভিল সার্জন ডাঃ মোস্তাফিজুর রহমান,অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মুজিব-উল-ফেরদৌস, বিআরবি গ্রুপের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মজিবর রহমান ও বিশিষ্ট কবি আবৃত্তিকার আলম আরা জুঁই। মুখ্য ঢাকা আইডিয়াল কলেজের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক রবীন্দ্রনাথ বিশ্বাস। আলোচক হিসেবে থাকছেন লালন মাজারের প্রধান খাদেম মোহাম্মদ আলী। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখবেন কুমারখালী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা সাহেলা আক্তার। স্বাগত বক্তব্য রাখবেন লালন একাডেমির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সেলিম হক। প্রতিদিন সন্ধ্যায় উন্মুক্ত মঞ্চে বিশিষ্টজনদের মুক্ত আলোচনা শেষে গভীর রাত অবধি চলবে খ্যাতনামা শিল্পীদের পরিবেশনায় লালন সঙ্গীতানুষ্ঠান।

উল্লেখ্য, বৃটিশ শাসকগোষ্ঠির নির্মম অত্যাচারে গ্রামের সাধারণ মানুষের জীবনকে যখন বিষিয়ে তুলেছিল, ঠিক সেই সময়ই সত্যের পথ ধরে, মানুষ গুরুর দিক্ষা দিতেই সেদিন মানবতার পথ প্রদর্শক হিসাবে বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহ’র আবির্ভাব ঘটে কুমারখালির ছেঁউড়িয়াতে। লালনের জন্মস্থান নিয়ে নানা জনের নানা মত থাকলেও আজো অজানায় রয়ে গেছে তাঁর জন্ম রহস্য। তিনি ছিলেন নিঃসন্তান। আর্থিক অসংগতির কারনে তিনি প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা লাভ করতে পারেননি। তবে তিনি ছিলেন স্ব-শিক্ষায় শিক্ষিত। যৌবনকালে পূর্ণ লাভের জন্য তীর্থ ভ্রমনে বেরিয়ে তার যৌবনের রূপান্তর ও সাধন জীবনে প্রবেশের ঘটনা ঘটে বলে জানা যায়। তীর্থকালে তিনি বসন্ত রোগে আক্রান্ত হলে তার সঙ্গীরা তাকে প্রত্যাখ্যান করে। পরে মলম শাহ’র আশ্রয়ে জীবন ফিরে পাওয়ার পর সাধক সিরাজ সাঁইয়ের সান্নিধ্যে তিনি সাধক ফকিরী লাভ করেন। প্রথমে তিনি কুমারখালির ছেঁউড়িয়া গ্রামের গভীর বনের একটি আমগাছের নীচে সাধনায় নিযুক্ত হন। পরে স্থানীয় কারিকর সম্প্রদায়ের সাহায্য লাভ করেন। লালন ভক্ত মলম শাহ আখড়া তৈরীর জন্য ষোল বিঘা জমি দান করেন। দানকৃত ওই জমিতে ১৮২৩ সালে লালন আখড়া গড়ে ওঠে। প্রথমে সেখানে লালনের বসবাস ও সাধনার জন্য বড় খড়ের ঘর তৈরী করা হয়। সেই ঘরেই তাঁর সাধন-ভজন বসতো। ছেঁউড়িয়ার আঁখড়া স্থাপনের পর থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত শিষ্যভক্তদের নিয়ে পরিবৃত থাকতেন। তিনি প্রায় এক হাজার গান রচনা করে গেছেন। ১৮৯০ সালের ১৭ অক্টোবর ভোরে এই মরমী সাধক বাউল সম্রাট দেহত্যাগ করেন এবং তাঁর সাধন-ভজনের ঘরের মধ্যেই তাকে সমাহিত করা হয়। আলোচনা শেষে দ্বিতীয় পর্বে লালন মঞ্চে বিভিন্ন শিল্পি ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সমন্বয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে পরিবেশিত হবে লালন সঙ্গীত। এতে সঙ্গীত পরিবেশন করবেন দেশের খ্যাতনামা শিল্পীবৃন্দসহ লালন একাডেমীর স্থানীয় শিল্পিরা। উৎসবকে ঘিরে পুরো একাডেমি চত্ত্বরে শুরু হয়েছে খন্ড-খন্ড স্থানে গানের আসর। এসব গান শুনে আগত দর্শক-শ্রোতারাও নেচে-গেয়ে গানের সাথে সাথে তাল মিলাচ্ছে।

(কেএইচ/পিবি/মার্চ ০৪,২০১৫)

পাঠকের মতামত:

২৫ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test