E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শরীয়তপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমীর বেহাল দশা

২০১৫ মার্চ ০৮ ১৪:৪৪:৪৩
শরীয়তপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমীর বেহাল দশা

শরীয়তপুর প্রতিনিধি : তিন যুগেও কোন উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি শরীয়তপুর জেলা শিল্প একাডেমি অঙ্গনে। ফলে সাংস্কৃতিক চর্চায় পিছিয়ে পরছে জেলার শিল্প-সাহিত্য মনস্ক শিশু কিশোররা। ৩৫ বছরের পুরোনো ব্যবহার অনুপযোগী একটি টিনের ঘরে যুগের পর যুগ ধরে খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলছে এ প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম। শিল্প চর্চায় ব্যবহৃত যন্ত্রপাতিতে বাসা বেঁধেছে উইপোকা। প্রয়োজনীয় বাদ্যযন্ত্র না থাকা এবং অদক্ষ প্রশিক্ষকের কারণে  নিয়মিত ক্লাশ হয়না শিল্পকলা একাডেমিতে। 

৬৩ শতাংশ জমির ওপর ১৯৮০ সালের ১২ এপ্রিল প্রতিষ্ঠিত হয়েছে শরীয়তপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমী। ২৫ হাজার টাকা ব্যয়ে একটি আধাপাকা ভবন নির্মান করে প্রায় তিনযুগ তার ভেতরেই চলছে জেলা শহরের সাংস্কৃতিক চর্চার এই একমাত্র প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম। এর পর দু’বার নতুন ভবন নির্মাণের জন্য বরাদ্দ আসলেও দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের নিস্পৃহতায় সম্ভব হয়নি জেলা শিল্পকলা একাডেমির কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ। সরকার পরিবর্তন ঘটলে কমিটিরও পরিবর্তন ঘটে। সেক্ষেত্রে নিয়োগ দেয়া হয় সরকার দলীয় কর্মকর্তা ও শিক্ষকদের । চুক্তিভিত্তিক শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে যোগ্যতার চেয়ে রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রাধান্য পায় বেশি। যার কারনে অযোগ্য ও অদক্ষ শিক্ষক নিয়োগ পেয়ে যায়। জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে প্রতি সপ্তাহে দুই দিন ক্লাশ চলার বিধান থাকলেও নিয়মিত ক্লাশ পরিচালনার ক্ষেত্রে অনেক ঘাটতি রয়েছে। ছাত্র-ছাত্রী থাকলেও অনেক সময় শিক্ষক অনুপস্থিত থাকে।

১২টি বিষয়ের মধ্যে ক্লাশ হয় মাত্র ৪টি বিষয়ের। যার মধ্যে সাধারণ সংগীত, নামেমাত্র উচ্চাঙ্গ সংগীত , নৃত্য ও তবলার ক্লাশ। বাকি ৮টি বিষয়ে অর্থাৎ দেশীয় বাদ্যযন্ত্র, বাঁশি, ঢোল, বেহালা, উচ্চাঙ্গ নৃত্য, কবিতা , গিটার ও চিত্রাংকনের কোন ক্লাশ হয় না। এমনকি শিক্ষকও উপস্থিত হচ্ছে না । ছাত্র-ছাত্রী বাড়ানোর ব্যাপারে কোন উদ্যোগ নেই শিক্ষক ও কমিটির সদস্যদের। দীর্ঘ তিন যুগ পেরিয়ে গেলেও সেই পুরনো জরাজীর্ণ ভবনেই চলছে শিক্ষাদান। একটু বৃষ্টি হলেই চাল দিয়ে পানি পড়ে, রোদে তীব্র গরম থাকায় ছাত্র-শিক্ষক সবাই অসহায় হয়ে পড়ে।

৩ কক্ষ বিশিষ্ট এই ছোট্ট ভবনের বিভিন্ন স্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে, দেয়ালের পলেস্তরা খসে পড়ছে, প্রতিটি কক্ষেই উইপোকা বাসা বেধেছে, চালায় কোন সিলিং নেই, একটি টয়লেট আছে যা ব্যবহারের অনুপোযোগী । দরজা ভাঙ্গা ও অপরিচ্ছন্ন , অভিভাবকদের বসার কোন কক্ষ নেই । শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষনের যন্ত্রপাতিগুলো ভেঙ্গে চুরে নষ্ট হয়ে পরে আছে। ৩টি হারমোনিয়ামের ২টিই অচল, ৫ জোড়া তবলার ৪ জোড়া অচল, ১টি মাত্র ঢোল তাও ব্যবহার উপযোগি নয়। ৭ সেট বাঁশি থাকলেও এর জন্য কোন শিক্ষার্থী নেই, গিটার নেই, ১টি মাত্র বেহালা যা অচল অবস্থায় পড়ে আছে, ড্রাম ১ সেট যা সচল অবস্থায় নেই। তানপুরা থাকার কথা থাকলেও নেই এই প্রতিষ্ঠানে। সংগীত পরিবেশনের জন্য সাউন্ড সিস্টেম প্রয়োজন তাও নেই। শিল্প কলার ১০ জন প্রশিক্ষকের মধ্যে ৫ জনই সরকারি চাকুরীজীবী।

শিক্ষার্থীরা জানিয়েছে নৃত্যের প্রশিক্ষক কনিকা আক্তার, নাটকের প্রশিক্ষক সুজাতা রানী দে (জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদকের স্ত্রী) ও কবিতা প্রশিক্ষক ফাহমিদা মনি তিন জনই সরকারী চাকুরে। তারা নিয়মিত সম্মানী ভাতা গ্রহন করলেও কোন দিন শিল্পকলায় ক্লাশ নিতে যায়না।

একাডেমির সামনে যে মাঠটি আছে তা রেন্ট এ কার এর ব্যবসায়ীদের দখলে। ভাড়ায় চালিত গাড়ী পার্কিংয়ের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে বছরের পর বছর ধরে। এ ক্ষেত্রে কমিটি নিশ্চুপ ভুমিকা পালন করছে। প্রশাসন রয়েছে নিরব। শিল্পকলা একাডেমির ৬৩ শতাংশ জমির বড় একটা অংশ জুড়ে আছে একটি পুকুর। পুকুরের দুই পাড়ে প্রায় ৪০টি দোকান ঘর ভাড়া দেয়া হয়েছে। প্রতিমাসে এই দোকানের জমি ভাড়া বাবদ আয় হবার কথা অন্তত ২০ হাজার টাকা। এই টাকা কোন খাতে খরচ করা হয় তার হিসেব কেউ রাখেনা।

শরীয়তপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমির নৃত্যের শিশু শিক্ষার্থী তানজিলা আক্তার জানান, আমাদের ক্লাশ রুম অত্যন্ত ছোট। এখানে কোন কিছু শেখার তেমন পরিবেশ নেই। ভবনের চালা দিয়ে বৃষ্টি হলে পানি পরে, গড়মের সময় অনেক তাপ লাগে। এখানে সাভাবিকভাবে আমরা শিক্ষা গ্রহন করতে পারিনা।

অভিভাবক নুরুজ্জামান ফকির, মিতালী শিকদার, হামিদা আক্তার, গোলাপী রানী সাহা, সবিতা রানী দে বলেন, বছরের পর বছর ধরে ঝুকিপূর্ন ভবন, অদক্ষ শিক্ষক আর অচল যন্ত্রপাতি দিয়ে প্রশিক্ষণ পরিচালনা করায় আমাদের সন্তানেরা ভাল কিছু শিখতে পারছে না। র্শিপকলা একাডেমির নিরাপত্তার জন্য নেই বাউন্ডারী ওয়াল, মাঠে রেন্ট এ কারের গাড়ী থাকে সব সময়। এভাবে জেলা শিল্পকলা চললে শরীয়তপুরের শিল্প চর্চার বিলুপ্তি ঘটবে এক সময়।

শরীয়তপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমির সবচেয়ে প্রবীন ও উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের ওস্তাদ আব্দুর রব কোতোয়াল বলেন, আমি ৩০ বছর যাবৎ এই প্রতিষ্ঠানের সাথে জরিত রয়েছি। একটি জেলা শহরের শিল্প চর্চার প্রধান প্রতিষ্ঠান হিসেবে এর তেমন কোন উন্নয়নই হয়নি। আমাদের আরো অভিজ্ঞ প্রশিক্ষকের প্রয়োজন রয়েছে এবং এখানে র্শিপ মনস্ক পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারলে শিশুরা কিছু শখতে পারবে।

শরীয়তপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমির সভাপতি শিল্প মনস্ক ব্যক্তিত্ব কবি, গীতিকার ও গায়ক, শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক রাম চন্দ্র দাস বলেন, আমাদের জেলা কমিটির সভায় কয়েকটি উপ কমিটি গঠন করা হয়েছে যার মাধ্যমে শিল্পকলার প্রতিটি ক্ষেত্রের উন্নয়নের মাধ্যমে বর্তমান অবস্থার উত্তরণ ঘটবে ও শিল্প চর্চা সম্প্রসারিত হবে।

(কেএনআই/এএস/মার্চ ০৮, ২০১৫)

পাঠকের মতামত:

২৫ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test