E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

কক্সবাজারে বেড়েছে অপহরণ জনিত অপরাধ

২০১৪ মে ১১ ১৪:২৮:৫৭
কক্সবাজারে বেড়েছে অপহরণ জনিত অপরাধ

কক্সবাজার প্রতিনিধি : কক্সবাজারে অপহরণ জনিত অপরাধ প্রবনতা বেড়েই চলছে। কোনটি মুক্তিপণের দাবিতে, কোনটি বিয়ের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায়, কোনটি অপহরণ পূর্বক ছিনতাই কাজে, কোনটি পূর্ব শত্রুতার জের ধরে, আবার কোনটি মানবপাচারের জন্য। এ নিয়ে গত ১ মাসে কক্সবাজারের বিভিন্ন এলাকায় ৩০ টির ও বেশি অপহরণের ঘটনা ঘটেছে। তবে এ ব্যাপারে পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্তাব্যক্তিরা অপহরণ জনিত অপরাধ প্রবনতা বেড়ে যাওয়াকে স্বীকার না করলেও সংঘটিত ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য কিছু ব্যক্তি প্রকৃত ঘটনাকে আড়াল করছেন বলে জানিয়েছেন। অথচ অপহরণ জনিত অপরাধ প্রবনতা বেড়ে যাওয়া নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সচিত্র সংবাদও পরিবেশিত হয়েছে।


জানা যায়, গত ৮ মে দুপুরে কক্সবাজার শহরের সমিতি পাড়ার রংধনু নামের এক আবাসিক কটেজ থেকে নারায়নগঞ্জের অপহৃত ২ যুবককে উদ্ধার করে পুলিশ। নারায়নগঞ্জের আড়াই হাজার উপজেলার এমরান (১৮) ও দৌলত হোসেন ( ১৯ ) গত ২৬ এপ্রিল কক্সবাজার বেড়াতে এসে অপহৃত হয়। অপহরণকারীরা মুঠোফোনে অপহৃতের পরিবারের কাছ থেকে ৪ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। এক পর্যায়ে ৮ মে পুলিশ অভিযান চালিয়ে তাদের উদ্ধার করে। এ সময় পুলিশ সিকান্দর আবু জাফর হিরু ও রংধনু কটেজ ম্যানেজার কায়েস উদজ্জামান নামের ২ জনকে আটক করে।
পূর্ব শত্রুতার জের ধরে ৭ মে অপহরণের শিকার হয় কক্সবাজার সদর উপজেলার ইসলামাবাদ ইউনিয়নের পশ্চিম বোয়ালখালীর গ্রামের খুইল্ল্যা মিয়ার পুত্র এহেছানুল হক (২৮)। ঈদগাও তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ পরদিন ৮ মে কক্সবাজারের ইসলামপুর ইউনিয়নের নতুন অফিস এসি এফ পাড়া থেকে আহতাবস্থায় তাকে উদ্ধার করে।
এছাড়াও কক্সবাজার শহর ও আশেপাশের এলাকায় সক্রিয় রয়েছে সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারী চক্র। তারা সুযোগ বুঝে কৌশলে জিম্মি করে কক্সবাজারে বেড়াতে আসা পর্যটকসহ সাধারণ লোকজনকে।
কক্সবাজার শহরের বাজারঘাটার ব্যবসায়ী ফরিদ আলম জানিয়েছেন, কিছু দুর্বৃত্ত শহরের বাজারঘাটা এলাকায় সবসময় উৎপেতে থাকে। ব্যাংকের লেনদেন করতে আসা লোকজনকে অপহরন করে তাদের সর্বস্ব ছিনিয়ে নেয়। প্রায়ই প্রতিদিনই এ ধরনের ঘটনা সংঘটিত হচ্ছে। তিনি কয়েকদিন আগে বাজারঘাটা ইসলামী ব্যাংকের এক গ্রাহকের ৯ লাখ টাকা অপহরণ পূর্বক ছিনতাইয়ের ঘটনার কথাও উল্লেখ করেছেন।
এ বিষয়ে কক্সবাজার সদর থানার ওসি মাহাফুজুর রহমান জানিয়েছেন, নতুন কর্মস্থলে তিনি সবেমাত্র যোগদান করেছেন। তার যোগদানের পর একটি অপহরণের ঘটনা ঘটেলেও পুলিশ ভিকটিম ও অপহরণকারীদের আটক করেছে বলে ও তিনি জানিয়েছন।
বথাটে এক যুবকের বিয়ের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় গত ৬ মে সকালে চকরিয়া কলেজ পরীক্ষা কেন্দ্রের গেইট থেকে ফিল্মী কায়দায় হয় এক এইচ এস সি পরীক্ষার্থী। চকরিয়া আবাসিক কলেজের বাণিজ্য বিভাগের ছাত্রী রোমানা ইফফাত নুরী (২০) কে মাইক্রোবাস যোগে নিয়ে যাওয়ার সময় চট্টগ্রাম- কক্সবাজার মহাসড়কের বানিয়ারছড়া এলাকায় পুলিশ তাকে উদ্ধার করে। এ সময় পুলিশ মাইক্রোবাসসহ ৫ জনকে আটক করে।
২৬ এপ্রিল সকালে স্কুলে যাওয়ার পথে চট্টগ্রাম- কক্সবাজার মহাসড়কের চকরিয়ার বানিয়ারছড়া ষ্টেশন থেকে অপহৃত হয় বরইতলী উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর এক ছাত্রী ( ১৫ )। তারপর দিন ৩০ এপ্রিল শহরের এক আবাসিক হোটেল থেকে তাকে উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় ওই ছাত্রী বাদী হয়ে চকরিয়া থানায় অপহরণ পূর্বক ধর্ষণের মামলা দায়ের করেছে।
চকরিয়া থানা পুলিশের ওসি প্রভাষ চন্দ্র ধর জানিয়েছেন, মাত্র কয়েক দিন আগে তিনি চকরিয়া থানায় ওসি হিসাবে যোগ দিয়েছেন। তিনি চকরিয়ায় যোগদানের পর দুর্বৃত্তরা এক ছাত্রীকে অপহরণের চেষ্টা করলে পুলিশ সাথে সাথে অভিযান চালিয়ে অপহরণকারীদের আটক করেছে এবং ভিকটিমকে উদ্ধার করেছে । এ ঘটনায় একটি মামলা রুজু করা হয়েছে।
এদিকে ২৬ এপ্রিল রাতে কুতুবদিয়া উপজেলার লেমশখালী ইউনিয়নের করলা এলাকার আবু মুছা নামের এক ব্যবসায়ী অপহৃত হয়। অপহরনকারীরা ট্রলার যোগে লেমশখালী সতর উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে গুলিবর্ষণ করে তাকে অপহরণ করে। অপহরণকারীরা মুঠোফোনে ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপন দাবি করেছে বলে জানিয়েছেন লেমশখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও অপহৃতের ভাতিজা আখতার হোসাইন। ১৫ দিন ধরে তিনি নিখোঁজ রয়েছেন।
কুতুবদিয়া থানার ওসি আলতাফ হোসেন জানিয়েছেন অপহৃতের পরিবার মৌখিকভাবে জানালেও লিখিত কোন অভিযোগ দেয়নি। তারপরও পুলিশ অপহৃতকে উদ্ধারে কোস্টগার্ড ও নৌ বাহিনীর সদস্যদের সম্বন্বয়ে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে।
অপরদিকে বিয়ের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় ২০ এপ্রিল সন্ধ্যায় বাড়ির সামনে থেকে অপহৃত হয় রামু উপজেলার মেরংলোয়া রহমানিয়া মাদ্রাসার ৫ম শ্রেণীর ছাত্রী সোলতানা রাজিয়া মিফতা ( ১৪ )। এ ঘটনায় জড়িৎ থাকার অভিযোগে অপহৃতের পিতা রশিদ আহমদ বাদী হয়ে কাউয়ারখোপ ইউনিয়নের উখিয়ার ঘোনার গনিয়াকাটা এলাকার খুইল্ল্যা মিয়া ( ২৩ ) সহ ৩ জনকে আসামী করে রামু থানায় মামলা দায়ের করলেও উদ্ধার হয়নি অপহৃত ছাত্রী। ঘটনার ২১ দিন পর ও পুলিশ তার হদিস পায়নি।
এছাড়া ১৬ এপ্রিল সকালে বাড়ি থেকে বের হয়ে এখনো নিখোজ রয়েছে রামু উপজেলার উত্তর ফাতেখারকুল বনিক পাড়ার রসহরি ধরের পুত্র জয়রাম ধর ( ১০ )। দীর্ঘ ২৪ দিন ধরে তার খোজ না মেলার কোন কারনেই জানেনা তার পিতা রসহরি। এ ব্যাপারে রামু থানায় সাধারণ ডাইরী ও লিপিবদ্ধ করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
তাছাড়া উখিয়া থানা পুলিশ ১৮ এপ্রিল রাতে রত্না পালং ইউনিয়নের ভালুকিয়া পালং গ্রাম থেকে উদ্ধার করেছে চট্টগ্রাম থেকে অপহৃত স্কুল ছাত্র মোহাম্মদ মারুফ (১০)কে । চট্টগ্রামের পাহাড়তলী রেলওয়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যলিয়ের ৪র্থ শ্রেণীর ছাত্র মারুফকে ওই দিন সকালে রেলওয়ে পলোগ্রাউন্ড থেকে অপহরণ করা হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পুলিশ সহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে মোটা দাগের বেশ কয়েকটি অপহরণের ঘটনার উল্লেখ থাকলেও অধিকাংশ ঘটনা সম্পর্কে থানা পুলিশ অবহিত নয়। ফলে অপহরণের অনেক ঘটনায় রয়ে যায় অপ্রকাশিত।
কক্সবাজার শহরের কলাতলী, জেল গেইট, লারপাড়া, বাস টার্মিনাল এলাকার লোকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, কয়েকটি দুর্বৃত্ত চক্র পর্যটকসহ সাধারণ মানুষকে অপহরণ করে সর্বস্ব কেড়ে নিচ্ছে কিংবা মুক্তিপন আদায় করছে। এছাড়া ওই চক্রগুলো অপহরণ করে লোকজনকে সাগর পথে মালেয়শিয়ায় পাচার করছে বলে ও তারা জানিয়েছেন। তবে বিষয়টি সম্পর্কে জানেনা বলে দাবি করেছেন জেলা পুলিশ সুপার আজাদ মিয়া।
র‌্যাব- ৭ কক্সবাজার ক্যাম্পের অধিনায়ক কাজী রাশেদুল আলম জানিয়েছেন, শুধু অপহরণ নয় যে কোন অপরাধ জনিত ঘটনা অবহিত হওয়ার সাথে সাথে র‌্যাব সদস্যরা তাৎক্ষণিক অভিযান চালায়। এতে র‌্যাব সদস্যদের কোন গাফলতি নেই।
কক্সবাজার জেলা পুলিশ সুপার আজাদ মিয়া জানিয়েছেন, কয়েকটি অপরাধের ঘটনা সংঘটিত হলেও পুলিশ তাৎক্ষনিক অভিযান চালিয়ে অপহৃতদের উদ্ধার করেছে। তবে কুতুবদিয়ায় অপহৃত আবু মুছার পরিবার লিখিত কোন অভিযোগ ও অপহরণকারীদের ব্যাপারে কোন তথ্য না দেওয়ায় পুলিশের কোন অভিযান সফল হচ্ছে না বলে তিনি মন্তব্য করেছেন। পাশাপাশি তিনি আরো জানিয়েছেন, অনেকে মূল ঘটনাকে আড়াল করতে অপহরণের ঘটনা সাজাচ্ছেন।
(টিটি/এএস/মে ১১, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test