E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

গাইবান্ধায় ইচ্ছা পূরণের বৈশাখী মেলা শুরু

২০১৫ এপ্রিল ১৫ ১৭:৫৮:৩৪
গাইবান্ধায় ইচ্ছা পূরণের বৈশাখী মেলা শুরু

গাইবান্ধা প্রতিনিধি : গাইবান্ধার সদর উপজেলার ঘাগোয়া ইউনিয়নের কিংবদন্তি খ্যাত আমবাগানের মীরের বাগানে প্রতিবারের ন্যায় এবারও বসেছে ইচ্ছা বা মানত পূরণের মেলা। প্রতি বৎসর পহেলা বৈশাখ থেকে শুরু হয়ে গোটা মাস জুড়েই চলে ঐতিহ্যবাহি এই মেলা।

মীরের বাগানের ঐতিহাসিক পীর শাহ সুলতান গাজী, মীর মোশারফ হোসেন ও ইবনে শরফুদ্দিন শাহ এর মাজার আর মসজিদের সম্মুখে এবং দু’পাশের ৩.৯৫ একরের খোলা প্রান্তর জুড়ে বসেছে এ মেলা। নির্দিষ্ট এলাকায় চারু, কারু পন্যসহ মেলার বেচাকেনার নানা পসড়া সাজানো ছোট ছোট দোকান। এর সাথে রয়েছে নানা মিষ্টি, মুড়ি, জিলাপির দোকান। আর মাজার সংলগ্ন এলাকায় অস্থায়ী চুলা বানিয়ে চলে বিশেষ খিচুরী রান্না। মানত বা ইচ্ছা পুরণের আশায় দুর দুরান্তর থেকে প্রতিদিন শত শত ভক্ত নারী-পুরুষ এখানে এসে মাজার জিয়ারত করে এবং খিচুরী রান্না করে। রান্না করা খিচুরি মাজার কর্তৃপক্ষ এবং দরিদ্রদের মধ্যে বন্টন করে দিয়ে নিজেরা খায় এবং তবারুহ হিসেবে বাড়ীতেও নিয়ে যায়।

এখানে খিচুরী রান্নার বিশেষ বৈশিষ্ট হলো মুরগীর মাংসের খিচুরী রান্না করে। ভক্তরা বাড়ি থেকে চাল-ডাল, মুরগী, জ্বালানী কাঠ, কাঁচা, মরিচ আর পিয়াজ কেটে নিয়ে আসে মাজারে। মাজারের নির্দিষ্ট স্থানে মুরগী জবাই করে কেটে-কুটে মাজারের সামনে চুলায় রান্না করা হয় খিচুরী। ভক্তরা জানান, দুরারোগ্য অসুখ, নিঃসন্তান কামনাসহ নানা সমস্যা সংকট নিরসনে মানত পূরণের লক্ষ্য নিয়ে তারা এখানে আসেন।

মাজারের মোতওয়াল¬ী কারী মোঃ আলী আশরাফী জানান, দারিয়াপুরের মীরের বাগানের সাথে ইতিহাস খ্যাত মীর জুমলার সম্পর্ক আছে বলে কিংবদন্তী রয়েছে। অতীতে বিশাল এক আমবাগানের জন্য এই মীরের বাগান খ্যাত ছিল। ১৩০৭ সালে (তথ্যসূত্র: মসজিদ গাত্রের শিলালিপি) কলকাতার পীর সৈয়দ ওয়াজেদ আলী বাহারবন্দ পরগণার ঘন জঙ্গল থেকে পীর ইবনে শরফুদ্দিনের স্মৃতিবাহী কবর ও মসজিদের ধ্বংসাবশেষ উৎঘাটন করে প্রয়োজনীয় সংস্কার করেন। ময়মনসিংহের ক্বারী করিম বক্সের উত্তরাধিকারীগণ বংশ পরস্পরায় মোতওয়াল্লী হিসেবে এই ওয়াককফ সম্পত্তিটি রক্ষণাবেক্ষণ করে আসছেন।

জনশ্রুতি আছে যে, সংস্কারকালে মসজিদের ভেতরে একটি কালো পাথর পাওয়া গিয়েছিল এতে ‘১০১১ই সাই’ উৎকীর্ণ ছিল। কিন্তু পরবর্তীকালের কোন এক সময় তা হারিয়ে যায়। বহু অনুসন্ধান করেও এই কালো পাথরটির আর কোন সন্ধান পাওয়া যায়নি। মীরের বাগানের পীর সাহেবের মাজার জাতিধর্ম নির্বিশেষে সকল শ্রেণীর মানুষ অত্যন্ত শ্রদ্ধা চোখে দেখেন। অসুখ-বিসুখ কিংবা যে কোন ধরণের ‘বালামুসিবত’ দূর করতে বহুদুর থেকে মানুষ এখানে এসে ‘মানত’ করে থাকেন। বিশেষত: সন্তানধারণে অক্ষম মহিলারা এখানে মানত করলে সন্তান সম্ভাবনা হবে বলে ধারণা করা হয়।

প্রতি বছর বৈশাখ মাসে এখানে তাই বিরাট আকারের মেলা বসে। স্থাপত্যকলার বিচারে মীরের বাগানের মসজিদের নির্মাণ শৈলীতে হিন্দু-মুসলিম উভয় ধর্মমতের শিল্পরীতির বিন্যাস লক্ষ্যণীয়। সঠিক ঐতিহাসিক দৃষ্টিভঙ্গি ও পর্যালোচনার মাধ্যমে মীরের বাগান সামগ্রিকভাবে বাংলার ইতিহাসের বিভিন্ন কালপর্বের তথ্যের ঘাটতি পূরণে সহায়ক হতে পারে।

(আরআই/এএস/এপ্রিল ১৫, ২০১৫)

পাঠকের মতামত:

২৪ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test