E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

মাধনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চলছে ঝঁকিপূর্ণ পাঠদান

২০১৫ এপ্রিল ২১ ১৮:৫৫:৪৬
মাধনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চলছে ঝঁকিপূর্ণ পাঠদান

মামুনুর রশীদ, নাটোর : পরিত্যক্ত ঘোষণার আড়াই বছরেও নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার পশ্চিম মাধনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জরাজীর্ণ ভবন ভেঙ্গে ফেলা হয়নি। নতুন ভবন নির্মান না করায় ওই ভবনেই ঝুঁকি নিয়ে বিদ্যালয়ের দাপ্তরিক কাজ চলছে।

টিনের চালা ঘর তুলে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পাঠদানের ব্যবস্থা করা হলেও ঝড়-বৃষ্টির কারনে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। অপরদিকে পাঠদানে বিঘ্ন সৃষ্টি হওয়ায় শিক্ষার্থীদের অনেকেই এই স্কুলে ছেড়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছে। অথচ দীর্ঘ দিনেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিদ্যালয়ের পাঠ উপযোগী ভবন নির্মানের উদ্যোগ গ্রহন করেনি। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, এই বিদ্যালয় ছাড়া নাটোরে ঝুঁকিপুর্ণ তালিকায় রয়েছে আরো ১৬ প্রাথমিক বিদ্যালয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, এলাকার শিক্ষা প্রসারে স্থানীয়দের সহায়তায় ১৯৭৩ সালে পশ্চিম মাধনগর গ্রামে এই বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০১৩ সালের ১ জানুয়ারী সরকারিকরণ করা হয়। বর্তমানে এই বিদ্যালয়ে ৪ জন শিক্ষক রয়েছে। একজন সহকারী শিক্ষক ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছে। বিদ্যালয়ের শিক্ষাথীর সংখ্যা ১৭১ জন। কিন্তু বিদ্যালয়ের নতুন ভবন নির্মাণ না করায় শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া ও শিক্ষকদের পাঠদান নানা ভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে।

বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি দেওয়ান আমজাদ হোসেন জানান, শিক্ষা অধিদপ্তর ১৯৯৩ সালে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের মাধ্যমে তিন রুম বিশিষ্ঠ একটি ভবন নির্মাণ করে। কিন্তু নির্মাণ ত্রুটির কারণে ওই ভবনে ফাটল দেখা দেখা দেয় এবং ভবনটি জরাজীর্ণ হয়ে ব্যবহারের অনুপোযোগী হয়ে পড়ে। ২০১৩ সালে ওই ভবনটি পরিত্যাক্ত ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। এরপর বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে স্থানীয়ভাবে চাঁদা তুলে টিনের চালা ঘর তৈরি করা হয়। বর্তমানে ওই চালা ঘরেই পাঠদান করা হলেও তা যথোপযুক্ত নয়। উপযুক্ত শিক্ষার পরিবেশ নেই। একারনে শিক্ষার্থীদের অনেকেই এই স্কুলে আর আসছেনা।

সহকারী শিক্ষক ফিরোজা খাতুন জানান, বিদ্যালয় ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণার পর দীঘ ৬ মাস খোলা আকাশের নিচে ক্লাশ নিতে হয়েছে। গত দুই বছর ধরে চালা ঘরে পাঠদান চলছে। কিন্তু ঝড়-বৃষ্টি সহ প্রাকৃতিক প্রতিকুলতার কারনে শিক্ষার্থীদের পড়া লেখা বিঘ্নিত হচ্ছে। সামান্য বৃষ্টি হলে ঘর পানিতে সয়লাব হয়ে কাদাযুক্ত হয়ে পড়ে। শিশুদের বই পুস্তক বৃষ্টির পানিতে ভিজে যায়। ঝড় হলে শিক্ষার্থীরা আতংকিত হয়ে পাশের বাড়িতে আশ্রয় নেয়। কোন কোন সময় স্কুল ছুটি দেওয়া হয়। এছাড়া এক ক্লাসের পড়ার শব্দ পাশের ক্লাসেও শোনা যায়। এতে করে প্রতিটি ক্লাসে পাঠদানে বাধাগ্রস্ত হয়। শিক্ষার্থীরাও বিরক্তি প্রকাশ করে।
বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী সুরাইয়া ও শয়ন জানায়, টিনের চালা ঘরে গরমে তাদের ক্লাস করতে খুব কষ্ট হয়। ঝড় অথবা বৃষ্টির সময় মেঘ গর্জন করলে তাদের ভয় লাগে। বৃষ্টির সময় ক্লাস বন্ধ রেখে বইখাতা নিয়ে বসে থাকতে হয় তাদের।

স্থানীয় বাসিন্দা ও শিক্ষার্থী অভিভাবক নুরুল ইসলাম ও হযরত আলী জানান, তাদের ছেলে-মেয়েদের বিদ্যালয়ে পাঠানোর পর সার্বক্ষনিক আতঙ্কে থাকেন। যথাশীঘ্রই পাঠদানে উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করতে না পারলে অচিরেই তাদের ছেলে-মেয়েদের অন্য বিদ্যালয়ে পাঠাবেন বলে জানান।

বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আলহাজ আলী জানান, নতুন ভবন না হওয়ায় জীবনের ঝুঁকি নিয়েই ওই ভবনে বসেই তাদের দাপ্তরিক কাজ করতে হচ্ছে। পাঠদানের উপযুক্ত পরিবেশ না থাকায় শিক্ষার্থীদের ধরে রাখাও যাচ্ছে না। ইতিমধ্যে অনেকেই এই স্কুলে ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট বিভাগসহ উর্ধতন মহলকে জানানো হয়েছে।

নলডাঙ্গা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার (চলতি দায়িত্ব) পরিমল কুমার ঘোষ জানান,দুই বা আড়াই বছর আগে নাটোর সদর উপজেলার অধীনে থাকার সময় শিক্ষা অধিদপ্তরের প্রকৌশল বিভাগ স্কুলটি পরিদর্শনের পর পরিত্যক্ত ঘোষনা করে। পরবর্তীতে নতুন ভবন নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন জানানো হয়।

নলডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার শারমিন আকতার জাহান ভবনটির নির্মাণ ত্রুটির কথা উল্লে­খ করে জানান, তিনি সম্প্রতি বিদ্যালয় পরিদর্শন করেছেন। নির্মানে ত্রুটি থাকায় অল্প সময়েই ভবনটিতে ফাটল দেখা দেয়। এজন্য কর্তৃপক্ষ ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষনা করে। স্থানীয়ভাবে তৈরী টিনের চালা ঘরেও লেখাপাড়ার পরিবেশ বিঘ্নিত হচ্ছে। পরিত্যক্ত ভবনটি নিলাম ঘোষণা করাসহ জেলা কমিটিতে অনুমোদন হয়েছে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে। খুব শীঘ্রই বরাদ্দ পাওয়া যাবে বলে তিনি জানান।

এদিকে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সুত্র জানায়, নাটোর সদর ও নলডাঙ্গা উপজেলার আরো ১৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভবন ফাটল ও ঝঁকিপুর্ণ তালিকায় রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠগুলি হচ্ছে; পীরগঞ্জ, বনগ্রাম, শেখপাড়া, সোনাপাতিল, কাজিপুর দিয়ার, পন্ডিত গ্রাম, সমসখলসী, হালসা, মাটিকোপা, ঠাকুরলক্ষিকোল, কালিগঞ্জ, পাইকোরদোল, শেখেরহাট, টলটলিয়াপাড়া, দিঘিরপাড় ও বিলযোয়ানী। ইতিমধ্যে এসব ভবন নির্মাণ ও সংস্কারের জন্য শিক্ষা অধিদপ্তরের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

(এএস/এপ্রিল ২১, ২০১৫)

পাঠকের মতামত:

২৫ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test