E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

কুয়াকাটা সৈকতে সাত বছর পর জেগে উঠল বিধ্বস্ত স্থাপনা

২০১৫ এপ্রিল ৩০ ১৭:৪৭:৩৬
কুয়াকাটা সৈকতে সাত বছর পর জেগে উঠল বিধ্বস্ত স্থাপনা

কলাপাড়া (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি : সাত বছর আগে কুয়াকাটা সৈকতে যে ধ্বংসস্তুপ দেখে পর্যটকদের চোখে জল এসেছিলো, সেই হারানো ধবংসস্তুপের চিহ্ন দেখেই তাদের মুখে হাসি ফুটে উঠেছে। এক রাতের তান্ডবে বিধ্বস্ত হয়েছিলো গোটা ভবনটি।

সেই ভবনের ধ্বংসস্তুপ দেখে তাদের চোখে ভেসে উঠছে পুরনো সেই অপরূপ বায়োগ্যাস প্লান্ট’র ছবি। যা কুয়াকাটায় ভ্রমনে আসা দেশ-বিদেশের পর্যটকদের কাছে ছিলো অন্যতম আকর্ষন। সাগরের ভাঙ্গনে সৈকতের একেরপরএক সৌন্দর্যমন্ডিত স্থান গিলে খেলেও পর্যটকদের সৌন্দর্য উপভোগের জন্য সেই সাগরের ভাঙ্গনেই জেগে উঠেছে সাত বছর আগের সেই হারানো বিশাল ট্যাংকিসহ স্থাপনার বালুর নিচে চাপা পড়ে থাকা বিভিন্ন অংশ।

২০০৭ সালের ঘূর্নিঝড় সিডরের তান্ডবে বিধ্বস্ত হয় কুয়াকাটা সৈকত ঘেষা অত্যাধুনিক কুয়াকাটা বায়োগ্যাস প্লান্ট কাম রেষ্ট হাউস। এলজিইডি’র আর্থিক সহায়তায় ১৯৯৮ সালে অপরূপ কারুকাজের সেই রেষ্টহাউসে বর্জ্য থেকে বায়োগ্যাস প্লান্ট করার উদ্যেগ নেয়া হয়েছিলো। নির্মান করা হয় প্লান্টের স্থাপনা। ওই প্রাকৃতিক গ্যাস দিয়ে বিদ্যুত উৎপাদনের সকল আয়োজনও শেষ পর্যায়ে ছিলো। কিন্তু ভবিষৎ পরিকল্পনা ছাড়া অপরিকল্পিত স্থানে এ প্লান্টটি নির্মান করায় নির্মানের নয় বছরেই সাগরের জলোচ্ছাসে ভেসে যায় সম্ভাবনাময় সেই প্লান্টটি। সাগরের জোয়ারের পানিতে বিধ্বস্ত ভবনটি প্লাবিত হওয়ায় প্রায় দুই বছর আগে কুয়াকাটা সৈকত থেকে সেই ভবনটির খন্ডবিখন্ড অংশ নিলামে বিক্রি করে দেয়। কিন্তু বালুর নিচে চাপা পড়ে থাকা সেই উন্নয়ন পরিকল্পনার অংশ বের হয়ে আশায় পর্যটকরা আবারও ব্যায়োগ্যাস প্লান্টটি নির্মানের দাবি করছে।

জানা যায়, বায়োগ্যাস প্লান্টটি ছিলো মানুষের বর্জ্যে তৈরি প্রাকৃতিক গ্যাস। ওই ডাকবাংলোয় আসা পর্যটকদের বর্জ্যইে এই প্রাকৃতিক গ্যাস উৎপাদনের পরিকল্পনা নেয়া হয়। এজন্য ভবনের পিছনে মাটির নিচে বিশাল ট্যাঙ্কি করা হয়। এতোবছর ট্যাঙ্কিটি বালুচাপা থাকলেও সাগরের ঢেউয়ে বালুর স্তর ক্রমশ ধুইয়ে বের হয়ে আসে বাংলোর বিভিন্ন অংশ ও বিশাল ট্যাঙ্কি টি। যা এখন পর্যটকদের কাছে বাড়তি আকর্ষণ।

কিন্তু গত একমাস আগে সাগরের জলোচ্ছাসের তোড়ে সৈকতের বালুর স্তর ৫/৭ফুট ধুইয়ে নেমে যাওয়ায় সৈকতে জেগে ওঠে বিধ্বস্ত ওই স্থাপনার মাটির নিচের অংশ। মূল সৈকতের জিড়ো পয়েন্টে প্রায় দুই ফুট ওয়াল ও বিধ্বস্ত ভবনের বিরাট বিরাট দেয়ালের খন্ড জেগে ওঠায় পর্যটকদের কাছে ভাটার সময় এক নতুন পর্যটন জোনে পরিনত হয়েছে।

সরেজমিনে ঘুরে দেখাযায়, সৈকতে পর্যটকদের বিশ্রামও বসার জন্য এতোদিন কোন ব্যবস্থা না থাকলেও সাগরের বুকে জেগে ওঠা সাত বছরের পুরনো স্থাপনাটি এখন বিশ্রামের স্পটে পরিনত হয়েছে। ভোরে ও বিকালে সাগরে ভাটার সময় পর্যটকরা এখানে বসে সূর্যোদয় ওসূর্যাস্তের অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করছে।

টাঙ্গাইল থেকে কুয়াকাটায় স-পরিবারে কুয়াকাটা ভ্রমনে এসে হতবাক নাহিদুর রহমান। তিনি বলেন, সিডরের কিছুদিন আগে কুয়াকাটায় এসে রাত্রিযাপন করেছিলেন বায়োগ্যাস প্লান্ট কাম রেষ্টহাউসে। সিডরের কয়েক বছর পর কুয়াকাটায় এসে ওই রেষ্টহাউসে উঠবেন ভেবেছিলেন। কিন্তু এসে দেখেন সেখানে এখন ট্রলার বেঁধে রেখেছে। সাগরের জোয়ার-ভাটার পানির ঝাপটায় সেই স্থাপনাসহ সৈকত ঘেষা শতশত স্থাপনাই নেই। সাগরের ভাঙ্গনে সবকিছু লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। কিন্তু শুক্রবার বিকালে কুয়াকাটায় এসে দেখেন সেই ভেঙ্গে যাওয়া বায়োগ্যাস প্লান্টের বিভিন্ন অংশ বালুচরে জেগে উঠেছে। সেখানে বসে আছে পর্যটকরা। তিনি এ স্থাপনা দেখে আবেগে আপ্লুত।

তারমতো একাধিক পর্যটক বলেন,“কুয়াকাটার বায়োগ্যাস প্লান্ট’টির মূল প্লান্টটি এখনও অক্ষত রয়েছে। সৈকত ঘেষে পর্যটকদের সুবিধার জন্য পাবলিক টয়লেট করা হয়েছে। ওই টয়লেটের ট্যাঙ্কি’র সাথে বায়োগ্যাস প্লান্টের ট্যাঙ্কি পাইপ লাইনের মধ্যে সংযোগ করা হলে আবারও বায়োগ্যাস প্লান্ট চালু করা সম্ভব।

কুয়াকাটা টুরিষ্ট সেন্টার’র পরিচালক রুমান ইমতিয়াজ তুষার জানান, সৈকতের বালুচরে সাত বছর আগের ভেঙ্গে যাওয়া ভবনের জেগে ওঠা স্থাপনা এখন পর্যটকদের আকর্ষণ করছে। শেষ বিকালে এখানে শতশত পর্যটক বসে সূর্যাস্তের দৃশ্য অবলোকন করে। এছাড়া বায়োগ্যাস প্লান্ট’র ট্যাঙ্ক টি অরক্ষিত না রেখে সংরক্ষন করা উচিত।

কলাপাড়া এলজিইডি অফিস সূত্র জানায়, সাগরের ভাঙ্গনে বায়োগ্যাস প্লান্টটি ভেঙ্গে যাওয়ার পর সরকারের নতুন কোন নির্মান পরিকল্পনা না থাকায় ভেঙ্গে যাওয়া ভবনটি নিলামে বিক্রি করে দেয়া হয়েছে।

এলজিইডি’র উপজেলা প্রকৌশলী মো.আঃ মন্নান জানান, তিনি এ বিষয়টি জানেন না। এখানে নতুন আসায় বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখবেন।

(এমকেআর/এএস/এপ্রিল ৩০, ২০১৫)

পাঠকের মতামত:

২৫ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test