E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

মাদকের স্বর্গরাজ্য কালিগঞ্জ

২০১৫ মে ০৪ ২২:২৭:২০
মাদকের স্বর্গরাজ্য কালিগঞ্জ

স্টাফ রিপোর্টার : মাদক ব্যবসা একটি সমাজ বিরোধী ও দেশদ্রোহী কর্মকান্ড। কিন্তু টাকার অতিলোভ মানুষকে এসব বিপদগামী ও মানব সমাজ ধ্বংসযোগ্য কাজে অগ্রসর হওয়ার পথ দেখাচ্ছে।

ঝিনাইদহ জেলার একটি উন্নত উপজেলার নাম কালীগঞ্জ। বর্তমানে সবজির ব্যবসার মত কালীগঞ্জে গড়ে উঠেছে ছোট বড় অসংখ্য মাদকের স্পট। কালীগঞ্জকে দেশের মাদকের পাইকারী মোকাম ঘর বলা হয়।

এখানে সমস্ত বাংলাদেশ থেকে আসা মাদকসেবী ও বিক্রেতার মিলন মেলা বার মাস লেগেই থাকে। তাছাড়া শুধু কালীগঞ্জই না, ঝিনাইদহ জেলার কোটচাঁদপুর, শৈলকূপা, হরিনকুন্ডুসহ অনেক থানাই এখন মাদকের জন্য বিখ্যাত। হাতের নাগালের মধ্যেই সব, তাই স্থানীয়রা তাদের সন্তানদের নিয়ে চিন্তিত থাকেন।

ঝিনাইদহ জেলা ও এর আশেপাশের এলাকা মাদক বেচা-কেনার মোকাম হয়ে ওঠার অন্যতম কারন ভারতের বেনাপোল সীমান্তের মাধ্যমে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর চোঁখ ফাকি দিয়ে চোরাই পথে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঢুকে পড়ে। মহেশপুর ও চৌগাছা হয়ে তা পরে কালীগঞ্জে চলে আসে। তারপর এখান থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে ভ্যান ও ট্রাক গাড়িতে বিভিন্ন ভাবে মাদক সরবরাহ করা হয়।

পুলিশের বিভিন্ন ঝটিকা অভিযানের কারনে মাদক ব্যবসায়ীরাও সতর্কতা অবলম্বন করে বিভিন্ন ভাবে তাদের মাদক চালানকে দেশের অভ্যন্তরে পাঠাচ্ছে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে পাওয়া মাদক ব্যবসায়ীদের তালিকা থেকে দেখা যায় ঝিনাইদহ জেলার ব্যাবসায়ীদের মূল নেতা রোকন উদ্দীন রোকন। বর্তমানে তিনি কারাবন্দী। কিন্তু তারপরও তার ব্যবসা হরদমে চলছে। জেল থেকে শ্রমিকদের মাধ্যমে দৈনিক মুজরীর মাধ্যমে মাদক ব্যবসা পরিচালনা করে থাকে।

কালীগঞ্জের সবচেয়ে বড় মাদক ব্যবসায়ীর নাম কামাল মেম্বার। কতিপয় স্থানীয় নেতাদের কারনে এখনও তিনি আইনের আওতামুক্ত। ঝিনাইদহ জেলার তোতা মিয়া পুরো শহর জুড়ে তার গাজার ব্যবসা। স্থানীয়রা তাকে গাজার ডিলার বলে ডাকে।

বৈডাঙ্গা শহরের কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ী শহীদুল এখন পর্যন্ত পাঁচ বার মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের হাতেই আটক হয়েছে। কিন্তু তাকে কোন সময় সাত দিনের বেশি আটকা রাখা যায় নি। আর জেলের মধ্যে থাকলেও তার ব্যাবসা তার স্ত্রীই দেখাশুনা করে থাকে।

ঝিনাইদহ শহরের চাকলা পাড়া, আরপপুর বাস স্টান্ড, মর্ডান মোড়, নিকারীপাড়া, চান্দা সিনেমার হল ও ষাট বাড়িয়ার মাদক ব্যাবসা জমজমাট। কিন্তু তারপরও আইন শৃঙ্খলার দায়িত্বে যারা তারা যে উদাসীন এই বিষয়টা বিভিন্ন ভাবে প্রশ্নবিদ্ধ।

ঝিনাইদহের পার্শ্ববর্তী এলাকা কোটচাঁদপুর সম্প্রতি মাদক ব্যাবসায়ীদের জন্য অভয়আশ্রম। এই এলাকায় মাদক ব্যবসার গডফাদাররা হলেন আদর্শ পাড়ার রেজাউল পাঠান, কলেজ স্টান্ডের কালিয়া ওরফে ফেনসিডিল কালিয়া, সলেমানপুরের জবেদা ওরফে গাজা জবেদা, রিজিয়া খাতুন ও আমিরুল। আর এদের অধীনে বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন মাদকসেবীদের আস্তানা গড়ে ওঠে। কোটচাঁদপুরের আঁখ সেন্টারের মোড়, বুলহর স্টান্ড, দাস পাড়া ও টি এন্ড টি পাড়া এখন গাজা, মদ, হেরোইন, ইয়াবা ব্যাবসার জন্য বিখ্যাত ।

তাছাড়া কোটচাঁদপুরের পার্শ্ববর্তী হরিনাকুন্ডু বিস্তীর্ন এলাকাটি দুইজন মাদক ব্যাবসায়ীর কাছে জিম্মি। এরা হলেন মন্দাতলা গ্রামের সুলতান ও উপজেলা মোড়ের মানিক মিয়া। হরিনাকুন্ডুর মাদক স্পট গুলো সাত ব্রিজ, উপজেলা মোড় ও পাবর্তীপুর।

শৈলকুপা থানাও মাদকের ভয়াল থাবায় ক্ষতবিক্ষত। এলাকার মাদকের অন্যতম স্পট গুলো কবিরপুর সিটি কলেজের মোড়, ঋষি পাড়া, বাজার পাড়া, ভাইট পাড়া ও শেখ পাড়া। এলাকার মাদক ব্যাবসায়ীরা হলেন মাসুদ, আবু তালেব সিদ্দিক ও আমজাদ হোসেন।

মাদক ব্যবসায়ীদের সাথে কালীগঞ্জের বিভিন্ন শীর্ষস্থানীয়দের সাথেও আছে শিক্ষিত সচেতন ব্যক্তি ও অনেক নেতারা। তাদেরই প্রশ্রয়ে কালীগঞ্জে এখন মাদক ব্যাবসায়ীদের পরিমান এখন অজস্র।

তবে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্য অনুযায়ী, এখানে ১০০-১১০ টি মাদক স্পট আছে। যেখানে দিনে দুপুরে প্রতিনিয়ত প্রকাশ্যে বিক্রি করা হচ্ছে মাদক দব্য। আড়পাড়া, শিবনগর, বাকুলিয়া, খয়েরতলা, কলেজ পাড়া, ফয়লা, চাপালী, সিরামপুর, দাস পাড়া, নদীপাড়া, থানাপাড়া, ব্রিকফিল্ড, ঢাকালেপট্টিসহ আরো অনেক স্থানে মাদকের আস্তানা।

এছাড়া মাদক ব্যাবসায়ীদের একটি তালিকা আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছ থেকে গোপন সূত্রে পাওয়া যায়। তাদের নাম আড়পাড়ার জাহাঙ্গীর, অনুপ, বজলুর রশিদ, শ্রীরামপুরের টুকু,শফি, নদী পাড়ার বাবলা, পাইক পাড়ার ইদ্রিস, বিহারি পট্টির জুয়েল, আলুপট্টির স্বপন, রিপন, বিষ্ণু , হাসেম শিবনগর দাসপাড়ার লিটন, শ্রীরামপুরের টিটন, ফয়সাল, সিরামপুরের সোহানুর রহমান সোহান, ইমন, মনির, ভূষণ পট্টির আজিম, বলিদাপাড়ার মোতাহের, মুরগী হাটার প্রকাশ জগন্নাথপুরের পলাশ সহ আরো প্রায় ২০০-৩০০ জন মাদক ব্যাবসার সাথে জড়িত।

ঝিনাইদহ ও এর আশেপাশের এলাকা অনেকটা সন্ত্রাসপ্রবন। উপরন্তু মাদক ব্যাবসায়ীরা অনেকটা সংঘবদ্ধ। আধিপত্য বিস্তার করতে স্থানীয় মাদক ব্যাবসায়ীদের সশস্ত্র বাহিনীও আছে।

ঝিনাইদহ প্রেসক্লাবের সাধারন সম্পাদক মাহমুদ হাসান টিপু বলেন, 'এখানে মাদক না নির্মূল হওয়ার পেছনে অন্যতম কারন হচ্ছে প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা। তাছাড়া প্রশাসনের কিছু অসাধু কর্মকর্তাদের সাথে মাদক ব্যবসায়ীদের সখ্যতা গড়ে ওঠা। এই এলাকায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মাঝে মাঝে অভিযান চালায়। মাদক ব্যাবসায়ীরা শুধু বিজিবিকেই ভয় পায়।'

পুলিশের বিরুদ্ধে মাদক ব্যাবসায়দের সাথে সংশ্লিষ্টার অভিযোগের বিষয়ে জেলা পুলিশ সুপার কোন বক্তব্য দেননি।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের ঝিনাইদহ সার্কেলের পরিদর্শক মোশারফ হোসেন অসহায়তার কথা স্বীকার করে বলেন, লোকবল সংকটের পাশাপাশি আমাদের নিজস্ব কোন যানবাহন নেই। তাছাড়া সন্ত্রাসপ্রবন ঝিনাইদহ মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযানের সময় পর্যাপ্ত পুলিশ পাওয়া যায় না। এজন্য অনেক সময় জীবনের ঝুঁকি নিতে হয়।

(এসএস/পিএস/মে ০৪, ২০১৫)

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test