E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

৩ দিনেও উদ্ধার হয়নি সার বোঝাই জাহাজটি

২০১৫ মে ০৭ ১৪:১৭:২৫
৩ দিনেও উদ্ধার হয়নি সার বোঝাই জাহাজটি

বাগেরহাট প্রতিনিধি  : বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেজ্ঞের ভোলা নদীর বিমলের চর এলাকায় ডুবে যাওয়া সার বোঝাই এমভি জাবালে নূর লাইটারেজ জাহাজটি উদ্ধার কাজ তৃতীয় দিনেও শুরু হয়নি। তবে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে তলা ফেটে নিমজ্জিত জাহাজের অভ্যন্তরে থাকা গতিল অবশিষ্ট পটাশ সার মিশ্রিত পানি ড্রেজার দিয়ে অন্য কার্গোতে নেয়ার কাজ শুরু হয়েছে। বর্তমানে ১টি মেশিন দিয়েই এ কাজ চালিয়ে যাচ্ছে সুন্দরবন বিভাগ। ঘটনাস্থলে থাকা সুন্দরবন শরনখোলা রেজ্ঞের এসিএফ কামাল উদ্দিন আহমেদ এখবর নিশ্চিত করেছেন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখাগেছে, জোয়ারের পানিতে জাহাজটিকে থাকা অধিকাংশ সার পানিতে মিশে সুন্দরবনের বিভিন্ন নদী ও খালে ছড়িয়ে পড়েছে। সারের লাল পুরু আস্তরণ নদীর পানিতে ভাসছে। ঘটনাস্থলে ওই জাহাজের মালিক পক্ষ বা মাষ্টার-নাবিক কাউকেই পাওয়া যায়নি। তারা ঘটনার পর পরই পালিয়ে গেছে। এছাড়া মঙ্গলবার আসা উদ্ধারকারী জাহাজ এমবি নুসরাত-ই-হক ও এমবি তছির উদ্দিনও ওই দিন রাতে ঘটনাস্থ থেকে পালিয়ে গেছে বলে সুন্দরবন বিভাগ জানিয়েছে। শত-শত মেট্রিক টন রাসায়নিক সার মিশ্রিত পানিতে অক্সিজেন কমিয়ে দ্রুত লবনাক্ততা বাড়িয়ে পানি বিষাক্ত হয়ে পড়েছে বলে আশংকা করছেন বিষেশজ্ঞরা। এদিকে র্দূঘটনাস্থ ও নদী-খালের পানিতে কতোটুকু অক্সিজেন রয়েছে তা এখনও পরিক্ষা করে দেখেনি সুন্দরবন বিভাগ। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ডরফিনের অভয়াশ্রম হিসেবে খ্যাত ভোলা ও শ্যালা নদীতে ঘুরে ডলফিনের দেখা মেলেনি। ধারনা করা হচ্ছে ডরফিনের অভয়াশ্রমের পানি বিষাক্ত হয়ে পড়ায় বিলুপ্তপ্রায় ইরাবতি ডলফিনসহ ৬ প্রজাতির ডলফিন সুন্দরবনের অন্য কোন নদী বা বঙ্গোপসাগর উপকূলে আশ্রয় নিয়ে থাকতে পারে
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. দিলীপ দত্ত জানান, এমওপি একটি রাসায়নিক সার। এটি পানিতে সহজে দ্রবিভূত হয়। বিপুল পরিমাণ এই সার এক সাথে দ্রবিভূত হয়ে জলজ প্রাণসম্পদের উপর মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে। সুন্দরবন একটি স্পশৃকাতর এলাকা মন্তব্য করে তিনি বলেন, বিষয়টি মাথায় রেখে এখন সুন্দরবন বিভাগের সার্বক্ষনিক পর্যবেক্ষণ ও প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন।
সেভ দ্য সুন্দরবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম জানান, জোয়ারের পানিতে জাহাজটিকে থাকা শত-শত মেট্রিক টন সার পানিতে মিশে সুন্দরবনের বিভিন্ন খালে ছড়িয়ে পড়েছে। রাসায়নিক এই সার মিশ্রিত পানিতে অক্সিজেন কমে পানি বিষাক্ত হয়ে পড়েছে। র্দূঘটনাস্থ ও সুন্দরবনের নদী-খালের পানিতে কতোটুকু অক্সিজেন রয়েছে তা জরুরী ভিত্তিতে পরিক্ষা করে দেখা প্রয়োজন। শ্রালা নদীতে অয়েল ট্যাংকারের খ্ষতি কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই সুন্দরবন সার বোঝাই জাহাজ ডুবির ফলে মাত্র ৫ মাসের মধ্যে ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ সুন্দরবনের জীব-বৈচিত্র্য আবারও সংকটে পড়েলো। সারের রাসায়নিক বিষক্রিয়ায় বিরল প্রজাতির ডলফিন, শুশুক, বিভিন্ন প্রজাতির মাছসহ অন্যান্য জলজ প্রাণির মারাত্মক ক্ষতির পাশাপাশি সুন্দরবনে এখন নদ-নদীতে মাছের প্রজজন মৌসুম চলায় সার বোঝাই জাহাজ ডুবিতে দীর্ঘ্য মেয়াদে ক্ষতির আশংঙ্কা আরো বেড়েছে।
অন্যদিকে বাগেরহাটের কৃষি বিভাগের উপপরিচালক (ডিডি) মো. জয়নুল আবেদীন ঘটনাস্থল পরির্দশন করে জানান, পটাশ সার পানিতে মিশলেও চলন্ত মাছ বা ডলফিনের তেমন কোনো ক্ষতি হবেনা। তবে, শামুক, ঝিনুকসহ ক্ষুদ্র কিছু জলজ প্রানীর ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। ডিএফও মো. আমীর হোসাইন চৌধুরী দাবী করেন, পটাশ সার জীববৈচিত্র্যের জন্য ক্ষতিকর নয়।
সুন্দরবন বিভাগ বুধবার রাতে শরণখোলা থানায় এই হ্যারিটেজ বনে ইতিমধ্যে ১ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে উল্লেখ করে সারবাহি লাইটারেজ জাহাজ মালিক আমিনুল ইসলাম, চালক মো: হাফিজুর রহমানসহ ওই কার্গোর ৪ জনকে আসামীকে মামলা দায়ের হয়েছে। শরণখোলা রেজ্ঞ কর্মকর্তা এসিএফ কামাল উদ্দিন আহমেদ বাদী হয়ে এ মামলা দায়ের করেন। অপর দিকে সুন্দরবনের অভ্যন্তরে সারবোঝাই কার্গো জাহাজ ডুবির ঘটনা তদন্তে গঠিত পৃথক ৩টি তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করেছে।
দূর্ঘটনা কবলিত লাইটারেজ জাহাজটি মংলা বন্দরের অদুরে পশুর নদীর হারবারিয়া এলাকা থেকে ৬শ’ ৭০ মেট্রিকটন পটাশ সার বোঝাই করে শুক্রবার আশুগজ্ঞর উদ্যেশ্যে রওনা দেয়। প্রতিমধ্যে বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের শরণখোলা রেজ্ঞের ভোলা নদীর বিমলের চরে এলাকায় এসে সোমবার সন্ধ্যায় চরে আটকা পড়ে। মঙ্গলবার বিকেলে জাহাজটির তলা ফেটে পটাশ সার সুন্দরবনের ভোলা নদীতে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। এক পর্যায়ে কর্গোটি কাত হয়ে ডুবে যায়।
গত ৯ ডিসেম্বর পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বাগেরহাটের চাঁদপাই রেঞ্জের শ্যালা নদীর মৃগমারী এলাকায় এমটি টোটাল জাহাজের ধাক্কায় ওটি সাউদার্ন স্টার-৭ নামে তেলবাহী জাহাজটির তলা ফেটে ডুবে যায়। সুন্দরবনে ছড়িয়ে পড়ে ৩ লাখ ৫৭ হাজার লিটার র্ফানেস অয়েল। সুন্দরবনের জীব-বৈচিত্র্য বাচাঁতে ছুটে আসতে হয় খোদ জাতিসংঘের বিষেশজ্ঞদের। ২৮ দিন বন্ধ থাকার পর ৭ জানুয়ারি থেকে নিয়ন্ত্রিত উপায়ে শুধুমাত্র দিনের আলোয় এই নৌপথে আবারও নৌযান চলাচল শুরু হয়। তেলবাহী জাহাজ ডুবির ৫ মাস যেতে না যেতেই গত মঙ্গলবার একই রুটের সুন্দরবনের ভোলা নদীতে পটাশ সার বোঝাই কার্গো এমভি জাবালে নূর তলা ফেটে ডুবি যায়।
(একে/পিবি/মে ০৭,২০১৫)

পাঠকের মতামত:

২৭ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test