E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

আশাশুনিতে চেয়ারম্যান ও ঠিকাদারের বিরোধ

বন্ধ হয়ে গেছে বেড়িবাঁধ সংস্কারের কাজ, ৪০ টি গ্রাম প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা

২০১৪ মে ১৫ ১৬:৪১:৪০
বন্ধ হয়ে গেছে বেড়িবাঁধ সংস্কারের কাজ, ৪০ টি গ্রাম প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : ইউপি চেয়ারম্যান ও ঠিকাদারের বিরোধে বন্ধ হয়ে গেছে সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার কপোতাক্ষ নদের খাঁজরা ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন বেড়িবাঁধ সংস্কারের কাজ। আগামী জুন মাসের মধ্যে এক কাজ শেষ করা না হলে যে কোন সময় বেড়িবাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ অঞ্চল প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সাতক্ষীরা শহরের ইটাগাছার ‘মেসার্স শফিউর রহমান শফি’ এর স্বতাধিকারী মো. শফিউর রহমান জানান, আশাশুনির খাজরা বাজারের গোষ্ট বিহারী রায়ের দোকান থেকে মালপাড়া ঠাকুরতলা পর্যন্ত কপোতাক্ষ নদের ২০০ মিটার বেড়িবাঁধ ১৪ ফুট চওড়া করে দু’ কোটি ৩২ লাখ টাকায় ২০১১-২০১২ অর্থ বছরে সংস্কার করার জন্য তার লাইসেন্সের পক্ষে খাজরা ইউপি চেয়ারম্যান শাহানেওয়াজ ডালিম কার্যাদেশ পান। এতে ব্যাংক গ্যারান্টিসহ (বিডি) কাজজপত্র তৈরি করতে তার প্রায় ছয় লাখ টাকা খরচ হয়। এরপর এক বছর কেটে গেলেও শাহানেওয়াজ ডালিম কোন কাজ না করে কাগজপত্র তার কাছে (শফি) দিয়ে কাজ করতে বলেন। এ সময় চেয়ারম্যান ডালিম খরচ ছাড়াও অতিরিক্ত দু’ লাখ টাকা দাবি করেন। তিনি অতিরিক্ত টাকা দিতে অস্বীকার করেন। নিজের লাইসেন্স বাঁচাতে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ বরাবর কাজ করার জন্য অতিরিক্ত সময়ের আবেদন জানান তিনি (শফি)। গত বছরের ২১ মার্চ তিনি নতুন কার্যাদেশ পান। আদেশে চলতি বছরের জুন মাসের মধ্যে বাঁধ সংস্কারের কাজ শেষ করতে বলা হয়। প্রথম পর্যায়ের কিছু কাজ করার পর পানি উন্নয়ন বোর্ড চুক্তি অনুযায়ি টাকা না দেওয়ার কারণে কাজ বিলম্বিত হয়। এরপরও বর্তমানে জিও ব্যাগে বালি ভরাট ও ব্লকের কাজ ৮০ শতাংশ শেষ হয়েছে। কাজ করার সময় চেয়ারম্যান ডালিমকে কয়েক দফায় বেশ কিছু টাকা চাঁদা দিতে হয়েছে।
‘মেসার্স শফিউর রহমান শফি’ এর ব্যবস্থাপক মো. ইউনুছ আলী জানান, সম্প্রতি চেয়ারম্যান ডালিম ও তার কয়েকজন সহযোগি তার কাছে দু’ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। চাঁদা না দিলে ব্লক ও বালি ভর্তি ব্যাগ (জিও) বেড়িবাঁধে ফেলতে দেবে না বলে জানিয়ে দেয়। গত ৮ মে সকালে চেয়ারম্যান ডালিম তাকে মোবাইলে টাকার জন্য হুমকি দেয়। একপর্যায়ে চেয়ারম্যানের নির্দেশে দুপুর দেড়টার দিকে খাজরা বাজারে তাদের গুদামে ক্যাশ বাক্সে থাকা এক লাখ ৩০ হাজার টাকা চাঁদা হিসেবে নেয়। এ ছাড়াও ১৮ লাখ ৭০ হাজার টাকা মূল্যের ১০ হাজার বালির বস্তা (জিও বাগ) নদীপথে ট্রলার যোগে নিয়ে যায় তারা। বাধা দেওয়ায় মালিকের কর্মচারি সামাদ শেখ, শহীদ গাজী ও জাকির সরদারকে মারপিট করে তারা। এ ঘটনায় তিনি থানায় ডালিম চেয়ারম্যানকে প্রধান আসামী করে থানায় একটি চাঁদাবাজির মামলা করেছেন।
তিনি আরো বলেন, গত মঙ্গলবার বিকেলে এক কার্গো কুচো পাথর ভর্তি খাজরা মালোপাড়ায় নিয়ে এলে তা নামাতে দেয়নি ডালিম চেয়ারম্যানের লোকজন। ফলে বাঁধ সংস্কারের বাকি কাজ বন্ধ হয়ে গেছে।
এ দিকে খাজরা মালোপাড়ার বাসিন্দা শ্যামল মণ্ডল, অরুণ মণ্ডল ও বিমল মণ্ডল জানান, তারা বংশপরম্পরায় এ পাড়ায় বসবাস করলেও নদীভাঙনে চলে গেছে অনেকের বসতবাড়ি। এখন তাদের বাড়ির সামনের বেড়িবাঁধ ভাঙতে ভাঙতে এক ফুট চওড়ায় এসে ঠেকেছে উল্লেখ করে তারা বলেন, আগামি বর্সা মৌসুমের মধ্যে সংস্কার করা না গেলে বাঁধ ভেঙে তাদের ইউনিয়নের পশ্চিম খাজরা, চক দুর্গাপুর, রাউতাড়া, পিরোজপুর, তুয়ারডাঙা, পারশেমারি, ফটিকখালি, বুজোয়াকাটি, থানিয়া, ঘুঘুমারি, সুরিয়াবাদ চামটা ছাড়াও বড়দল ও আনুলিয়া ইউনিয়নের ৩০টি গ্রাম প্লাবিত হবে। ভেসে যাবে পাঁচ হাজার বিঘার চিংড়ি ঘের ও পুকুর। আমন চাষ ব্যহত হবে ছয় হাজার বিঘা জমিতে। জলমগ্ন হয়ে পড়বে তিনটি ইউনিয়নের ২০টির বেশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
এ ব্যাপারে খাজরা ইউপি চেয়ারম্যান শাহানেওয়াজ ডালিম তার বিরুদ্ধে চাঁদা দাবি ও গ্রহণের অভিযোগ সঠিক নয়। শফিউর রহমানের লাইসেন্স ব্যবহার করে দরপত্র গ্রহণের জন্য তিনি ব্যাংক থেকে সুদে অনেক টাকা নিয়েছিলেন। তাই সুদে আসলে তিনি ঠিকাদারের কাছে আট লাখ টাকা চেয়েছেন। এরমধ্যে ছয়লাখ ৪০ হাজার টাকা পেয়েছেন। বাকি টাকা না দেওয়ার জন্য কৌশলে তাকেসহ সহযোগি চারজনের নামে চাঁদাবাজির মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। মামলা করায় ঠিকাদারকে কাজ করতে বাধা দেওয়া হয়েছে।
সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড-২ এর আশাশুনি সেকশান অফিসার (এসও) মীর শাহিনুর আলী জানান, কাজ করেও দেরীতে টাকা পাওয়ায় ঠিকাদাররা যথাসময়ে কাজ শেষ করতে পারেন না। চেয়ারম্যান ডালিম দরপত্র খরচ বহির্ভুত প্রায় দু’ লাখ অতিরিক্ত টাকা দাবি করায় কাজ বন্ধের মত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। তবে আগামি বর্ষা মৌসুমের মধ্যে কাজ শেষ করার জন্য বিরোধ সংশ্লিষ্ট সকলকে নিয়ে খুব শীঘ্রই আলোচনায় বসা হবে।
পাউবো-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী শহীদুল ইসলাম জানান, জনস্বার্থে দ্রুত বাঁধ সংস্কারের জন্য সহযোগিতা চেয়ে সাতক্ষীরা পুলিশ সুপারকে একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে। সমস্যা সমাধানে সবরকম চেষ্টা চালানো হচ্ছে।
আশাশুনি থানার উপপরিদর্শক মো. খায়রুল ইসলাম জানান, চাঁদাবাজির মামলা হলেও তদন্ত করে আসামীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে চেয়ারম্যান ডালিম ও তার সহযোগিদের বিরুদ্ধে আশাশুনি থানায় একটি চাঁদাবাজি ও দু’টি মারপিটের মামলা রয়েছে বলে নিশ্চিত করেন তিনি।
(আরকে/এএস/মে ১৫, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test